বিতর্কিত মন্তব্যে প্রশ্নবিদ্ধ হবে যুদ্ধাপরাধের বিচার: অ্যাটর্নি জেনারেল

যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীর আপিল নিয়ে দুই মন্ত্রীর বক্তব্যের পর এ ধরনের মন্তব্য এড়ানোর পাশাপাশি এ রায় নিয়ে সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2016, 11:12 AM
Updated : 6 March 2016, 03:22 PM

তিনি বলেছেন, “সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলা যখন হয় তখন বহু কথা উঠেছিল, বহু মুখরোচক গপ্পো উঠেছিল। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় কী হয়েছে সেটা আপনারা দেখেছেন...

“কাজেই অপেক্ষা করুন, বিচার বিভাগের প্রতি সবার আস্থা রাখুন। কারণ বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের একটি অঙ্গের ভেতর প্রধান একটি অঙ্গ। এটাকে বিতর্কিত না করাই সবচেয়ে ভাল।”  

যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর মামলা নিয়ে শনিবার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এক আলোচনায় সভায় সরকারের দুইজন মন্ত্রী কথা বলেন। প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে নতুন বেঞ্চ গঠন করে আপিলের পুনঃশুনানির দাবি তোলেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।

রায়ের তিন দিন আগে দুই মন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে আলোচনার মধ্যে রোববার অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধান বিচারপতি একটি দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রধান, সুতরাং তাকে বিতর্কিত করা মানে বিচার ব্যবস্থাকে বিতর্কিত করা। এ সমস্ত উক্তি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

বিচার বিভাগ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যে যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি।

বিষয়টি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, “আমাদের সর্বোচ্চ আদালতে যেসব আপিলের শুনানি হয়, এগুলো যে কোনো একজন বিচারপতির সিদ্ধান্তে ঠিক হয় না। এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সবার মতামতের আলোকে।

“এখানে যুদ্ধাপরাধের মামলা যখন শুরু হল, প্রথম মামলাটির রায় দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। কাদের মোল্লার সেই রায়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কীভাবে হবে, ইত্যাদি সম্বন্ধে মানদণ্ড কেমন সে বিষয়ে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী সময়ে অনেকগুলো মামলার রায় যেমন কামারুজ্জামানের রায়, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায়, সাঈদীর রায় এগুলো প্রধান বিচারপতি দিয়েছেন।

“কাজেই প্রধান বিচারপতিকে আমাদের দেখতে হবে তিনি আগে কী রায় দিয়েছেন, আইনজীবীদের সাথে উনার কী কথা হল সেগুলো কোনো সংবাদপত্রের বিবেচনার বিষয় হতে পারে না।”

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম

আগামী ৮ মার্চ একাত্তরে চট্টগ্রামের বদর কমান্ডার মীর কাসেম আলীর আপিলের রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

রায় ঘোষণা পর্যন্ত সবাইকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষার পরামর্শ দেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

“আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাব- ধৈর্য্য সহকারে অপেক্ষা করার জন্য, বিচারালয়ের প্রতি, প্রধান বিচারপতির প্রতি এ ধরনের কোনো উক্তি না করার জন্য। এই ধরনের উক্তি করলে আমাদের ন্যায়বিচার ব্যাহত হবে এবং আমরা যুদ্ধাপরাধের মামলার যে স্বার্থকতার সাথে এগুলো সম্পন্ন করে আসছি, সেগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে।”

প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে ওই বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে অসাংবিধানিক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বক্তব্যে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেলকেও পুনঃশুনানিতে বিরত থাকতে বলেন মন্ত্রী কামরুল ইসলাম।

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, “একজন আইনজীবী হিসেবে, আমি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে এই মামলাগুলোর ব্যাপারে আমার কর্মদক্ষতা, আন্তরিকতা ইত্যাদি নিয়ে সাঈদীর মামলার রায়ে ভালভাবে উল্লেখ করা আছে। আমি মনে করি, একজন আইনজীবীর জীবনে চরম প্রাপ্তি আমি একটি রায়ের মাধ্যমে পেয়েছি। কাজেই অন্য কে কী বলল এগুলো সম্পর্কে মন্তব্য করা অনর্থক।”