অগোছালো তফসিলে শুরু ইউপি ভোটের আয়োজন

বেশ আগে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানালেও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার নির্বাচন কমিশনের অগোছালো অবস্থার ছাপ স্পষ্ট হয়েই ধরা পড়েছে।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2016, 04:50 PM
Updated : 11 Feb 2016, 04:50 PM

এই ধরনের তফসিল বরাবর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘোষণা করলেও বৃহস্পতিবার তাতে অনুপস্থিত ছিলেন সাংবিধানিক সংস্থাটির বর্তমান প্রধান কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।

ছয় পর্বের প্রথম ধাপে ৭৫২টি ইউপির ভোট হবে বলে জানানো হলেও এ তালিকা সরবরাহ করতে ইসি সময় নিয়েছে অনেক সময়। তবে এসব ইউপিতে ভোটার কত, পদ কয়টি ও কেন্দ্র কয়টি, কিছুই জানানো হয়নি।

স্থানীয় সরকার আইন সংশোধনের পর দলীয় প্রতীকে বাংলাদেশের ৪ হাজার ২৭৫টি ইউনিয়ন পরিষদে প্রথম নির্বাচনের তফসিল বৃহস্পতিবার ঘোষণা হয় ঢাকার শেরে বাংলা নগরে ইসি সচিবালয় থেকে।

এদিন সকাল থেকেই ইসি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের অপেক্ষা ছিল তফসিলের জন্য। কিন্তু ইসির কর্মকর্তারা কিছুই জানাতে পারছিলেন না।

নির্বাচন কমিশন

নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জাতীয় সমাবেশে যোগ দিতে গিয়েছিলেন গাজীপুরের সফিপুরে।

দুপুর গড়িয়ে গেলেও ইসি সচিবালয়ের জনসংযোগ শাখার কর্মকর্তারা নিশ্চিত করতে পারছিলেন না তফসিল দেওয়া হচ্ছে কি না?

বেলা ১টার পরও কোনো খবর না পেয়ে সাংবাদিকরা যান নির্বাচন কমিশনারদের কাছে। এরপর বেলা ২টায় নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ নিজের কার্যালয়ে ইউপি নির্বাচন নিয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানান।

তিনি বলেন, “আমরা ছয়টি ধাপে ভোট করার জন্যে দিন চূড়ান্ত করেছি। স্থানীয় পর্যায়ে ভোটের বিস্তারিত (মনোনয়ন দাখিল, বাছাই ও প্রত্যাহার) সময়সূচি দেবে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।”

নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ

তখনও ইসি সচিবালয়ের অনেকেই জানতেন না ভোটের তারিখ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে গণমাধ্যমে।

পরে ইসির জনসংযোগ পরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রথম ধাপের ভোটের বিস্তারিত সময়সূচি গণমাধ্যমকে জানান।

এ দিন ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে সামনে রেখে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বুধবার দেখা করে এসেছিলেন সিইসি কাজী রকিব।

তিনিই আনুষ্ঠানিকভাবে দেশজুড়ে সব ইউপির ভোটের তারিখগুলো জানাবেন এমন প্রস্তুতিই ছিল ইসির মিডিয়া সেন্টারে।

কিন্তু নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ ইউপি ভোটের তারিখ দেওয়ার পর সিইসির একান্ত সচিবকে তার কক্ষে যেতে দেখা যায়।

 

তিনি গণমাধ্যমে কথা বলায় সিইসি বেকায়দায় পড়ে যান বলে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিইসি তফসিল দেওয়ার জন্য প্রস্তুতও ছিল। কিন্তু তা করতে পারলেন না তিনি। ছোট ইউপি হলেও সারাদেশের সাধারণ নির্বাচনের তফসিল সিইসি দিতে পারলেন না। এটা একটা নজিরবিহীন ঘটনা।”

দুপুর ২টায় ভোটের তারিখ ঘোষণা হলেও প্রথম ধাপে যেগুলো ভোট হবে, সেই ৭৫২টি ইউপির তালিকা পেতে প্রায় সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় সাংবাদিকদের।

তবে এসব ইউপির ভোটার সংখ্যা কত, পদ কতটি ও কতটি ভোট কেন্দ্র রয়েছে, তার কোনো তথ্য জানা যায়নি ইসি থেকে।

ছয় ধাপে ভোট

বৃহ্স্পতিবার তফসিল ঘোষণার পর ৭৫২ ইউনিয়ন পরিষদে মনোনয়নপত্র বিতরণ ও জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হল।

এই ইউনিয়নগুলোতে ভোট হবে ২২ মার্চ (মঙ্গলবার)।

দ্বিতীয় পর্বে ৭১০টি ইউপি ভোটের তফসিল হবে ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেগুলোতে ভোট হবে ৩১ মার্চ (বৃহস্পতিবার)।

তৃতীয় পর্বে ২৩ এপ্রিল ভোট হবে ৭১১ ইউপির। ১৫ মার্চ হবে তফসিল হবে।

চতুর্থ পর্বে ৭২৮ ইউপিতে ৭ মে ভোট হবে। তফসিল হবে ২৭ মার্চ।

পঞ্চম পর্বে ৭১৪ ইউপির ভোট হবে ২৮ মে। আগ্রহীরা মনোনয়নপত্র বিতরণ ও জমা দেওয়া শুরু করবে ২১ এপ্রিল তফসিল দেওয়ার পর থেকে।

শেষ ও ষষ্ঠ পর্বে ভোট হবে ৪ জুন। ২৮ এপ্রিল সেই ৬৬০ ইউপির তফসিল ঘোষণা করা হবে।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল চেয়ারম্যান পদে একজনকে মনোনয়ন দিতে পারবে।

এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে তফসিল ঘোষণার ৭ দিনের মধ্যে দলের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম,পদবী, নমুনা স্বাক্ষারসহ একটি চিঠি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে নিবন্ধিত দলগুলোকে চিঠি দিয়েছে ইসি।