২৫ বছরে তামাকমুক্ত হবে বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য-এসডিজি অর্জন এবং ‘সুস্থ জাতি’ গড়তে আগামী ২৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাক নির্মূলের আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Jan 2016, 02:49 PM
Updated : 31 Jan 2016, 03:41 PM

রোববার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এসডিজি অর্জন নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর স্পিকারদের সম্মেলনে এ আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “যদিও আমরা তামাক নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি, কিন্তু আমরা এ নিয়ে কোনো আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না।

“আমরা আশা করি, ২০৪০ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার  নির্মূল করা সম্ভব হবে।”

বর্তমান বিশ্বে ১১০ কোটি তামাকসেবীর মধ্যে প্রায় ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ দক্ষিণ এশিয়া দেশগুলোতে বলে জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

এ পরিস্থিতির উত্তরণে উদ্যোগ প্রত্যাশা করে এই আঞ্চলিক সম্মেলনে তিনি বলেন, “এসব দেশে তামাকজনিত আর্থিক এবং স্বাস্থ্যগত ক্ষতির পরিমাণ যাতে আর না বৃদ্ধি পায় তার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ আমাদের নিতে হবে।”

বাংলাদেশে শিক্ষিত-অশিক্ষিত এবং প্রায় সব পেশার মানুষের মধ্যে তামাকসেবী রয়েছেন। গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০০৯-এ বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের ৪৩ শতাংশ তামাকসেবীর কথা বলা হয়েছে।

তামাকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা।

প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবহার করে একটি তহবিল গঠন করে তা দিয়ে দেশব্যাপী জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি গ্রহণের কথা বলেন তিনি।

“দ্বিতীয় ধাপে, আমরা তামাকের ওপর বর্তমান শুল্ক কাঠামো সহজ করে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্কনীতি গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেব। এর উদ্দেশ্য হবে দেশে তামাকজাত পণ্যের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস এবং একইসাথে এ অঞ্চলের সর্বোত্তম ব্যবস্থা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারের শুল্ক আয় বৃদ্ধি করা।”

এছাড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের জন্য ‘সব ধরনের কার্যকর’ পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসডিজি বাস্তবায়ন অগ্রাধিকারের সঙ্গে মিল রেখে দেশের আইনগুলোকে এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হবে।

এফসিটিসি হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কনভেনশন।

“আমি মনে করি, এফসিটিসি বাস্তবায়ন বিশেষভাবে দুটি সুনির্দিষ্ট কারণে অপরিহার্য। প্রথমত, এফসিটিসি ছাড়া এসডিজির তৃতীয় উদ্দেশ্য ‘সুস্থ জীবনযাপন এবং সব বয়সের মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করা’ সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, অন্যান্য এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে তামাক একটি বড় বাধা,” বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “উন্নয়ন এবং সুস্বাস্থ্যের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিদ্যমান। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, তামাকজনিত রোগ-বালাই এবং অসংক্রামক রোগের অব্যাহত প্রকোপ হ্রাসে এ অঞ্চলের এবং এর বাইরের সংসদকে এসডিজি-৩ তে বর্ণিত সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে তাদের আরও তৎপর হতে হবে।”

বাংলাদেশে ২০১৩ সালে ধূমপান ও তামাক জাতীয় পণ্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধন এবং ২০১৫ সালে সংশ্লিষ্ট বিধি প্রণয়ণের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই আইন প্রয়োগের মাধ্যমে কীভাবে অধিকতর সুফল পাওয়া যায়, বর্তমানে আমরা তার প্রতি দৃষ্টি দিয়েছি এবং নীতিমালা প্রণয়ন করে সেগুলি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি।”

২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে তামাকের উপর ১ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশে এটাই এ ধরনের প্রথম পদক্ষেপ।”

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের ওপর দক্ষিণ এশীয় স্পিকারদের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন শেষে ‘ঢাকা ঘোষণা’ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা।  

অংশগ্রহণকারী স্পিকাররা যে ঘোষণা ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেগুলোর প্রতি ব্যক্তিগত ও সরকারের পক্ষ থেকে সমর্থনও জানান শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা এমডিজি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্বকে যেমন তাক লাগিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি, ইনশায়াল্লাহ এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও এই সাফল্য অর্জন করতে পারব বলে বিশ্বাস করি।”

তিনি বলেন, “সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। আমরা অতি-দারিদ্র্যের হার অর্ধেকে নামিয়ে এনেছি। শহর এবং গ্রামীণ উভয় অঞ্চলেই আমরা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পানি সরবরাহ এবং পয়ঃসেবার মতো মৌলিক বিষয়ে অধিকতর সুবিধা নিশ্চিত করেছি।

“এমডিজির সাফল্যের ওপর ভর করে এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছি এবং প্রস্তুত হচ্ছি। এজন্য দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের প্রয়োজন।”

‘সাউথ এশিয়ান স্পিকার্স সামিট অন অ্যাচিভিং সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস’- শিরোনামের এই সম্মেলনে বক্তব্যে জাতীয় পর্যায়ে এসডিজিকে সমন্বিতভাবে এগিয়ে নেওয়া এবং এর কার্যক্রম তদারকিতে পার্লামেন্ট বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে পারে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

“বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার যেমন নারী-পুরুষ, নাগরিক সমাজ, কম্যুনিটি এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, যুবসমাজ ইত্যাদির সঙ্গে অংশীদারিত্ব, আলোচনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য আমি দক্ষিণ এশিয়ার পার্লামেন্টগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি গড়ে তোলার ওপর জোর দিতে চাই।”  

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, ভারতের লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন, ভূটানের সঙ্গুর স্পিকার জিগমে জাংপো, আফগানিস্তানের ওলেসি জিগরার স্পিকার আব্দুল রউফ ইব্রাহিম, মালদ্বীপের মজলিসের স্পিকার আব্দুল্লাহ মাসেহ মোহামেদ এবং শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার থিলাঙ্গা সুমাথিপলা বক্তব্য রাখেন।