শৈল্পিক মান বজায় রেখে রাজনৈতিক আদর্শ সম্বলিত কামাল চৌধুরীর ছন্দময় কবিতায় সৃষ্টিশীলতার ধারা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী তার লেখালেখির জগতে কামাল চৌধুরী নামেই পরিচিত।
শুক্রবার রাতে বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘কবি কামাল চৌধুরীর কাব্যগ্রন্থ ও তার কবিতার মূল্যায়ন গ্রন্থের পাঠ উন্মোচন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি।
কামাল চৌধুরীর ছন্দময় কবিতা পড়ে খুব ভাল লেগেছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এই কবির বই নিয়ে আলোচনায় বরেণ্যব্যক্তিদের উপস্থিতিকে ‘সত্যিই লোভনীয়’ বলে মন্তব্য করেন।
মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনেক সময়ই কামাল চৌধুরী উপস্থিত থাকেন জানিয়ে মুহিত বলেন, “মন্ত্রিসভা বৈঠকে যখন কোনো বানান, উচ্চারণ বা শব্দ নিয়ে কোনো সমস্যা হয় তখন আমরা কামাল চৌধুরীকে ডাকি, সে হল ডাক্তার। সে বলে, কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক।
“প্রধানমন্ত্রীও বলেন, ওখান থেকে (কামাল চৌধুরী) জেনে নেই এটা ঠিক হল কি না?”
মুহিত বলেন, “আশা করি তিনি বেশ লম্বা জীবনের অধিকারী হবেন এবং সেই লম্বা জীবনে আমাদের আরও কিছু দিতে পারবেন।”
কামাল চৌধুরীকে গুরুত্বপূর্ণ কবি অভিহিত করে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “উনি আমলা কামাল নয়, কবিতার কামলা কামাল।”
কামাল চৌধুরীর দুটি কবিতা আবৃত্তি করেন অভিনেতা-আবৃত্তিকার নূর।
চার দশক আগে তরুণ কবি কামাল চৌধুরীকে দেখার স্মৃতি আওড়ে কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা বলেন, “৪০ বছর আগে এই বাংলা একাডেমিতে একজন তরুণ সিঁড়ি বেয়ে প্রেস বিল্ডিংয়ের তেতলায় এসে একটি ছেঁড়াখোড়া পাতা আমার হাতে দিয়ে বলেছিল, রুদ্র আমাকে পাঠিয়েছে আপনার কাছে এই কবিতাটা দেওয়ার জন্য, বলেছেন এটা দেখবেন।
“আমি উল্টে-পাল্টে দেখার আগেই একটি চড়ুই পাখির মত সে উড়ে গেল।… দেখার পর মনে হয় কবি তো উড়ে গেল, এই কবিতার পাতাটি তো উড়ে গেল না, এটা থেকে যাবে।”
কামাল চৌধুরীকে নিজের পরবর্তী প্রজন্মের কবি হিসেবে ‘সম্মান ও শ্রদ্ধা’ জানিয়ে নূরুল হুদা বলেন, “৪০ বছর কাব্য সাধনা করে কামাল চৌধুরী কবি হয়েছেন। ৪০ বছর খুব কম সময় নয়, অনেকে ৪০ বছর বেঁচেও থাকে না।
“কবি কামাল চৌধুরীকে নয়, তার কবিতা, তার সৃষ্টিশীলতার ধারাকে, সৃষ্টিশীলতার ব্রহ্মপুত্রকে, সৃষ্টিশীলতার যমুনাকে উদযাপন করছি। ভয়ের কোনো কারণ নেই, শঙ্কার কোনো কারণ নেই, তাকে শনাক্ত করার সাহস আমাদের দরকার।”
সমকালীন বাংলা কবিতায় কামাল চৌধুরীকে ‘মুখ্য’ কবি বলেন নুরুল হুদা।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, তার কবিতাগুলোকে স্নেহসিক্ত, কান্নাভেজা, রুদ্ররোষে বিস্ফোরিত মনে হয়।
যারা বাংলা একাডেমির পুরস্কার পেয়েছেন বা পাবেন আগামীতে বাংলা একাডেমি থেকে তাদের কবিতাও ছাপানো হবে বলে জানান তিনি।
লেখক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, “আমি যদি কামালের একটি কবিতার দুটো লাইন লিখতে পারতাম তাহলে আমার লেখক জীবন ধন্য হত।…তার কবিতার প্রতিটি লাইনে লাইনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দেখতে পাই।”
কামাল চৌধুরী সম্পর্কে নজরুল গবেষক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, “তরুণ এই কবি আমাদের অনেক দিয়েছেন। একটি দেশ পরিচিত হয় তার কবিতা দিয়ে, সাহিত্য দিয়ে, শিল্পপতিদের দিয়ে নয়।”
কবি রূহী রহমান বলেন, কামাল চৌধুরীর কবিতায় জনস্রোত, ক্ষোভ, দ্রোহ, মনোবেদনা, আকাঙ্ক্ষার উচ্চারণ হয়েছে।
কামাল চৌধুরী সম্পর্কে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, “একজন শিল্পীর জীবনে যে রাজনৈতিক ও শিল্প আদর্শ থাকা দরকার তা কামালের কবিতায় আছে।”
কবি হাবীবুল্লা সিরাজী ছাড়াও আরও এক ডজন কবি কামাল চৌধুরীর কবিতা নিয়ে মূল্যায়নধর্মী বক্তব্য দেন।
সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে কামাল চৌধুরী বলেন, “আমি সময় সময় কবিতার পথে একজন অতৃপ্ত পথিক হিসেবে থাকতে চাই। আমি যদি পাঠকের ভালোবাসা পাই সেটাই হবে আমার শ্রেষ্ঠ জয়মাল্য।”