বইমেলার প্রস্তুতিতে প্রাধান্য নিরাপত্তায়

বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকার ব্যস্ততা এখন অমর একুশে বইমেলার শেষ সময়ের প্রস্তুতিতে; নিরাপত্তাকে ‘প্রাধান্য’ দিয়ে এবং বড় পরিসরে এই প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি।

মাসুম বিল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2016, 07:24 PM
Updated : 28 Jan 2016, 07:42 PM

গত বছর বইমেলার বাইরে লেখক অভিজিৎ রায়কে খুন এবং তারপর বিভিন্ন স্থানে মুক্ত চিন্তার লেখক ও প্রকাশকদের উপর হামলার প্রেক্ষাপটে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরও নিরাপত্তার উপরই গুরুত্বারোপ করেছেন।

বাংলা একাডেমির তত্ত্বাবধানকারী মন্ত্রণালয়ের এই মন্ত্রী বৃহস্পতিবার দুপুরে মেলাপ্রাঙ্গণ পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের বলেন, “সার্বিক নিরাপত্তার বিষয় প্রাধান্য নিয়ে বইমেলা সাজাচ্ছি আমরা। পুরো মেলা প্রাঙ্গণ ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার আওতায় থাকবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর তৎপরতাও থাকবে আগের চেয়ে অনেক বেশি।”

এবার পাইরেসির বিরুদ্ধে আগের তুলনায় কঠোর হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “মেলা চলাকালে পাইরেসিবিরোধী অভিযান জোরদার করা হবে। আর কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পাইরেটেড বই বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদেরকে আগামীবার বইমেলায় কোনো স্টল দেওয়া হবে না।”

সার্বিক নিরাপত্তার বর্ণনা দিয়ে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিরাপত্তার স্বার্থে যা করা যায় সর্বোচ্চটুকু আমরা করছি। ২৫০টি সিসি ক্যামেরায় পুরো মেলা ও আশপাশের এলাকা মনিটর করা হবে।”

“র‌্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যারপ্ত সংখ্যক মেলাপ্রাঙ্গণে মোতায়েন থাকবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে কেন্দ্র করে মূলত সেখান থেকে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা হবে।”

নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি মেলায় ঢোকা ও বের হওয়ার পথও বাড়ানোর কথা জানান জালাল।

তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকছে চারটি প্রবেশদ্বার। ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, চারুকলা অনুষদের উল্টোদিকের ছবির হাট গেইট, টিএসসির উল্টোপাশের গেইট ও রমনা কালী মন্দিরের গেইট।

একইভাবে মেলা থেকে বেরুনোর জন্যও থাকবে চারটি ফটক। সেইসঙ্গে মেলার অভ্যন্তরেও থাকছে সুপ্রশস্ত স্থান।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রস্তুতি

বৃহস্পতিবার দুপুরে মেলা প্রাঙ্গণ বাংলা একাডেমি চত্বর ও সোহরওয়ার্দী উদ্যান এলাকা ঘুরে বইমেলার জন্য শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিতে দেখা গেছে প্রকাশনা সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও মিস্ত্রিদের।

হাতুড়ি-পেরেকের ঠোকাঠুকি আর স্টল সাজানোর আমেজ ছিল পুরো এলাকায়। স্টলের অঙ্গসজ্জায় ব্যস্ত সময় পার করছিলেন রঙতুলির শিল্পীরা।

পহেলা ফেব্রুয়ারি বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বইপ্রেমীদের জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে। ছুটির দিনগুলোতে বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।

বইমেলার সার্বিক বিষয় জানাতে শনিবার বিকালে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বাংলা একাডেমি।

বেড়েছে পরিসর, স্টল সজ্জায়ও ভিন্নতা

অমর একুশে বইমেলা-২০১৫ এর প্রস্তুতিতে নিরাপত্তায় যেমন জোর দিচ্ছেন আয়োজকরা, তেমনি মেলার পরিসর বাড়ানো ও স্টল সাজসজ্জায় ভিন্নতা আনার কথা জানিয়েছেন তারা।

মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রায় পাঁচ লাখ বর্গফুট এলাকা নিয়ে বিশাল পরিসরে অনুষ্ঠিত হবে এবারের বইমেলা। সেই সঙ্গে এবারের মেলা হবে অনেক বেশি খোলামেলা পরিবেশে।”

বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ওসমান গণি বলেন, “এবার অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে ঠিকই কিন্তু অন্যান্য বার স্টলের নাম্বারিং আগে করে পরে লটারি করার জায়গায় এবার লটারি করে পরে নাম্বারিং করা হয়েছে।

“এতে অনেককে স্টল বদলের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। গুচ্ছ করার কথা বলা হলেও গলির মতো হয়ে গেছে। এতে করে জায়গা বাড়লেও বিন্যাস ভালো হয়নি।”

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্টল তৈরির কাজ

বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল বলেন, “আমাদের প্রস্তুতি অনেক ভালো। মূলত বই প্রকাশনা, বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা- এই তিনভাগে প্রস্তুতি নিই আমরা।”

তিনি বলেন, এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চটিও মেলার অংশ হবে। এখানে বাংলা একাডেমির সহযোগিতায় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও বাংলাদেশে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের আয়োজনে মাসব্যাপী পথনাটক প্রদর্শনী হবে। আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে একাডেমি প্রাঙ্গণের মেলা মঞ্চে, যা প্রজেক্টরের মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও প্রদর্শিত হবে।

এবারের মেলায় ৬৫১টি ইউনিটে মোট ৪০১টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনকে বইমেলার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে মেলা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ জানান।

এর মধ্যে প্যাভিলিয়ন ১৫টি, চার ইউনিটের স্টল ১৯টি, তিন ইউনিটের স্টল ৩৭টি, দুই ইউনিটের স্টল ১৩৪টি ও এক ইউনিটের স্টল ১৯৬টি। এর বাইরে বহেরা তলায় লিটল ম্যাগের স্টল থাকছে ৯২টি।

ভাষাশহীদ ও কবি-সাহিত্যিকদের নামে ১৫টি চত্বরে একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই স্টলগুলো বসবে, বলেন জালাল আহমেদ।

শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ভিন্ন আয়োজন

এবারের বইমেলায় গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ভিন্ন রকম আয়োজন করার কথা জানিয়েছে আয়োজক বাংলা একাডেমি।

চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জালাল এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মেলায় শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আমাদের বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। যাতে তাদের জন্য এটা মনোরম করা যায়।

এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “শিশুদের জন্য মেলা প্রাঙ্গণে খেলাধুলা ও সময় কাটানোর জন্য আলাদা জায়গায় ব্যবস্থা থাকবে। আর প্রতিবারের মতো শিশু সাহিত্যের জন্য শিশুদের কর্নার ও শিশুপ্রহর তো থাকছেই।”

প্রতিবন্ধীদের জন্য আনা-নেয়ার জন্য টিএসসি ও দোয়েল চত্বর এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবক দল থাকার কথা জানিয়ে জালাল বলেন, “তারা হুইল চেয়ারে করে প্রতিবন্ধীদের আনা নেওয়া কিংবা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের আসা-যাওয়ায় সহযোগিতা করবে।”

মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধুর বীরগাথা’ শিরোনামে ব্রেইল পদ্ধতির বই ও অডিও’র মোড়ক উন্মোচন করবেন বলেও জানান তিনি।