বাংলাদেশে দুর্নীতি আগের মতোই: টিআই

গত একটি বছরের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের ‘দুর্নীতিচিত্রে’ তেমন কোনো হেরফের দেখতে পায়নি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2016, 05:24 AM
Updated : 27 Jan 2016, 12:39 PM

বার্লিনভিত্তিক এই দুর্নীতিবিরোধী সংস্থার প্রকাশিত ‘দুর্নীতির ধারণাসূচকে’ (সিপিআই) এ বছর বাংলাদেশের অবস্থানের অবনমন ঘটেছে এক ধাপ, তবে স্কোর গতবারের সমান। 

বিশ্বের ১৬৮টি দেশ ও অঞ্চলে ২০১৫ সালের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে তৈরি করা এই সূচকে ২৫ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভাল থেকে খারাপ) ১৩৯ নম্বরে।

আর উল্টোভাবে হিসেব করলে ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’ দেশের তালিকায় এবার বাংলাদেশ রয়েছে ত্রয়োদশ স্থানে।

আগের বছর ১৭৫টি দেশ ও অঞ্চলের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রকাশিত এই সূচকে একই স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভাল থেকে খারাপ) ছিল ১৪৫ নম্বরে। আর উল্টোভাবে হিসেব করলে ‘সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত’ দেশের তালিকায় ছিল চতুর্দশ অবস্থানে।

১০০ ভিত্তির এই সূচকে শূন্য স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতার ধারণায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ১০০ স্কোরকে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত বা সর্বোচ্চ সুশাসনের দেশ হিসাবে বিবেচনা করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল।

আগে দশভিত্তিক সূচকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরা হলেও ২০১২ সাল থেকে ১০০ ভিত্তির এই সূচক প্রকাশ করা হচ্ছে।  

পুরনো প্রতিবেদনগুলো থেকে দেখা যায়- ২০১৩ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৭, তার আগের বছর ছিল ২৬।

বুধবার বার্লিন থেকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মূল প্রতিবেদন প্রকাশের পাশাপাশি ঢাকার ধানমন্ডিতে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, “স্কোর অপরিবর্তিত থাকলেও অবস্থান এক ধাপ কমেছে।… বাংলাদেশের এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে সংসদ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও কার্যকর করতে হবে।

"সংসদের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি রোধে যেসব নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ আছে সেগুলো কার্যকর করতে হবে। রাজনৈতিক যে সদিচ্ছা আছে সেগুলোর বাস্তব প্রয়োগ করতে হবে।”

গতবছরের সূচকে অন্তর্ভুক্ত বাহামা দ্বীপপুঞ্জ, বারবাডোজ, ডোমিনিকা, পোর্টোরিকো, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রানাডা, সামোয়া, এবং সোয়াজিল্যান্ড- এই সাতটি দেশ এবছর সিপিআই অন্তর্ভুক্ত হয়নি বলে সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “উচ্চক্রম অনুযায়ী ২০১৫ সালে বাংলাদেশের ছয় ধাপ অগ্রগতি কিছুটা সন্তোষজনক মনে হতে পারে। যদিও বাস্তবে তা হয়েছে এজন্য যে, সাতটি দেশ এবার জরিপের আওতাভুক্ত হয়নি, যারা সবসময় বাংলাদেশের তুলনায় বেশি স্কোর পেয়েছে।

"দক্ষিণ এশিয়ার দেশ সমূহের মধ্যে এবারও বাংলাদেশের অবস্থান আফগানিস্তানের পর দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। নিম্নক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশ এবার ২০১৪ সালের ১৪তম অবস্থানের একধাপ নিচে ১৩তম, যা ২০১৩ তুলনায় ৩ ধাপ নীচে ও ২ পয়েন্ট কম। অর্থাৎ সার্বিক বিবেচনায় এবারও আমাদের অগ্রগতি হলো না।”

“এই অবস্থানে আমরা সন্তুষ্ট নই,” বলেন টিআইবি'র এই নির্বাহী পরিচালক।

এবারের সূচকে ৯১ স্কোর নিয়ে সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ ডেনমার্ক। গতবছর এ দেশটি একই অবস্থানে ছিল, স্কোর ছিল ৯২।

আর টিআইয়ের বিবেচনায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ সোমালিয়া ও উত্তর কোরিয়া, স্কোর ৮। একই স্কোর নিয়ে দেশ দুটি গতবারও সূচকে একই অবস্থানে ছিল।

তালিকায় ২৫ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানে রয়েছে গিনি, কেনিয়া, লাওস, উগান্ডা ও পাপুয়া নিউগিনি।

টিআইবি বলছে, দুর্নীতির এই সূচক তৈরিতে তারা কোনো ভূমিকা রাখে না, টিআইবির নিজস্ব গবেষণার তথ্যও সিপিআই-তে যায় না।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন ও জরিপ এবং ‘বিশেষজ্ঞ মতামতের’ ভিত্তিতে টিআই কেন্দ্রীয়ভাবে এ সূচক তৈরি করে, যা বিভিন্ন দেশে স্থানীয়ভাবেও প্রকাশ করা হয়।

২০১৫ সালের সূচকের জন্য বাংলাদেশের ক্ষেত্রে টিআই সাতটি জরিপ ব্যবহার করেছে।

এগুলো হচ্ছে- বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি পলিসি অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল অ্যাসেসমেন্ট-২০১৪, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম এক্সিকিউটিভ ওপিনিয়ন সার্ভে-২০১৫, বার্টেলসম্যান ট্রান্সফরমেশন ইনডেক্স-২০১৬, ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট ‘রুল অব ল ইনডেক্স-২০১৫, পলিটিক্যাল রিস্ক ইন্টারন্যাশনাল কান্ট্রি রিস্ক গাইড-২০১৫, ইকোনোমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কান্ট্রি রিস্ক রেটিংস-২০১৫ এবং গ্লোবাল ইনসাইট কান্ট্রি রিস্ক রেটিংস-২০১৪।

টিআই এর তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ ভুটান। ২০১৫ সালে দুর্নীতির সূচকে দেশটির স্কোর ৬৫ এবং ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী অবস্থান ২৭। এর পরের অবস্থান ভারত, স্কোর ২৮ এবং অবস্থান ৭৬।

এরপর ৩৭ স্কোর পেয়ে ৮৩তম অবস্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা, ৩০ স্কোর পেয়ে ১১৭তম অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান এবং ২৭ স্কোর পেয়ে ১৩০ তম অবস্থানে রয়েছে নেপাল। এরপর বাংলাদেশ; বাংলাদেশের পর ১১ স্কোর পেয়ে ১৬৬তম অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে উচ্চক্রম অনুযায়ী অবস্থানে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৫ এর সূচকে অগ্রগতি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের (নয় ধাপ)। এরপরেই বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান এগিয়েছে ছয় ধাপ, ভুটান এগিয়েছে তিন ধাপ এবং শ্রীলঙ্কা দুই ধাপ।

সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকাল ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) এক জরিপের ভিত্তিতে দেশের একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে উন্নয়ন ও গণতন্ত্র বিষয়ে কথা বলেন টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল।

তিনি বলেন, “একটি পত্রিকায় আজ আরেকটি জরিপের কথা এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে- উন্নয়নের কারণে জনগণ গণতন্ত্রের দুঃখ ভুলে গেছে। কিন্তু গণতন্ত্রের দুঃখ ভোলার নয়; গণতন্ত্রের বিনিময়ে উন্নয়ন কতটা গ্রহণযোগ্য সেটা নিয়েও ভাবার অবকাশ আছে। কারণ গণতন্ত্র বাস্তবায়ন না হলে সাধারণ জনগণ উন্নয়নের সুফল পায় না।”

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির ট্রাস্টি ট্রাস্টি এম. হাফিজউদ্দিন খান ও উপনির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া খায়ের সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।