ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার দুপুরে এই শিল্পী ও সুরকারের মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।
হাসপাতালের চিকিৎসক সাইদুজ্জামান অপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল খন্দকার নুরুল আলমকে। তিনি নিউমোনিয়া ও ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্সে ভুগছিলেন।
গত শতকের ষাটের দশক থেকে গানে গানে সুর বেঁধে আসা খন্দকার নুরুল আলম বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনের একজন সংগীত পরিচালক হিসেবেই বেশি পরিচিতি।
অন্তরঙ্গ, যে আগুনে পুড়ি, ওরা এগারো জন, দেবদাস, চন্দ্রনাথ, শাস্তি, বিরাজ বৌ, শঙ্খনীল কারাগারসহ ২৬টিরও বেশি চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন তিনি।
এ দেশের চলচ্চিত্রে প্লে ব্যাকে আসা অনেক শিল্পীই নুরুল আলমের সুর কণ্ঠে নিয়ে বিখ্যাত হয়েছেন। ‘এক বরষার বৃষ্টিতে ভিজে’, ‘এত সুখ সইব কেমন করে’ আমি চাঁদকে বলেছি আলো দিও’সহ জনপ্রিয় বহু গানে তিনি সুর এবং কণ্ঠ দিয়েছেন।
সেখান থেকে ভেসে আসা আদিবাসী সুরই হয়তো ভবিষ্যতের একজন সুরকারকে জাগিয়ে তুলছিল ভেতরে ভেতরে। আর সংস্কৃতির শিক্ষাটা পেয়েছেন পরিবারেই। ছেলেবেলায় বাবাকে দেখেছেন মঞ্চে নাটক করতে, চাচা বাজাতেন ব্যাঞ্জো।
১৯৫৪ সালে মেট্রিক দিয়ে ঢাকায় এসে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন নুরুল আলম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন পড়তে পড়তেই তার গান আর সুরের প্রতিভার কথা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।
একদম শুরু থেকে বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গে থাকা এই শিল্পী, সংগীত পরিচালক ১৯৫৯ সালে ‘নব মঞ্জুরী’ নামে নতুন শিল্পীদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করেন, যেখানে সাবিনা ইয়াসমিন, শাহানাজ রহমতুল্লাহ’র মতো শিল্পীরা অংশ নিয়েছিলেন শিশুশিল্পী হিসেবে।
পরের বছর খন্দকার নুরুল আলম যোগ দেন গ্রামোফোন কোম্পানি হিজ মাস্টার্স ভয়েসে। তার পরিচালনায় তখনকার তারকা শিল্পীদের কণ্ঠে বহু রেকর্ড বের হয় সেখান থেকে।
খন্দকার নুরুল আলম নিয়মিত গান করেছেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের শুরু থেকে। তার প্রযোজনায় বিটিভির সুরবিতান অনুষ্ঠানটি জনপ্রিয়তা পায়।
অগ্নিপরীক্ষা ছবিতে ‘জীবন নদীর জোয়ার ভাটা’ গানে কণ্ঠ দিয়ে প্রথম প্লে ব্যাকে আসেন খন্দকার নুরুল আলম। তখন থেকেই চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনার আগ্রহ তৈরি হয়। শুরুটা ছিল উর্দু চলচ্চিত্র ‘ইস ধরতি পর’ দিয়ে। সে সময় ‘যে আগুনে পুড়ি’ ছবিতে তার সুরের ‘চোখ যে মনের কথা বলে’ গানটি এখনো শ্রোতাপ্রিয়।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ছোট ভাই ক্যাপ্টেন হুদাকে হারান খন্দকার নুরুল আলম। কিছুদিন বিরতি দিয়ে আবারও চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনায় ফেরেন, মুক্তি পায় ‘ওরা এগারো জন’। ‘সংগ্রাম’ আর ‘জলছবির’ জন্যও তিনি সংগীত করেছেন। শঙ্খনীল কারাগারের জন্য সংগীত পরিচালনার পর থেকে নিজেকে ধীরে ধীরে গুটিয়ে নেন তিনি।
চট্টগ্রামের কিশোয়ার সুলতানার সঙ্গে ১৯৭৬ সালে খন্দকার নুরুল আলমের বিয়ে। আমানি খন্দকার ও আবীর খন্দকার তাদের দুই ছেলেমেয়ে।
গুণী এই সংগীতজ্ঞকে ২০০৮ সালে একুশে পদকে ভূষিত করে সরকার। এর আগে ১৯৮৪, ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে তিনবার পান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য খন্দকার নুরুল আলমের মরদেহ শনিবার শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। সেখানে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২ পর্যন্ত এই শিল্পীর কফিনে শ্রদ্ধা জানানো হবে বলে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ জানান।
যন্ত্রসংগীত শিল্পী দৌলতুর রহমান জানান, খন্দকার নুরুল আলমকে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করার কথা প্রাথমিকভাবে ভাবা হচ্ছে।