এক ট্রলারেই সাড়ে ২৭ লাখ ইয়াবা, পালিয়েছে অন্যটি

দীর্ঘ নাটকীয় অভিযানে ঢাকা ও চট্টগ্রামে উদ্ধার ২৮ লাখ ইয়াবার মধ্যে পতেঙ্গায় সাগরপথে মিয়ানমার থেকে আসা এক ট্রলারেই সাড়ে ২৭ লাখ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2016, 12:55 PM
Updated : 18 Jan 2016, 01:26 PM

‘গোয়েন্দা তথ্য’ পেয়ে সাগরে দুটি ট্রলারের অবস্থান শনাক্তের পর রোববার একটি জলযান নিয়ে ধাওয়া শুরু করে র‌্যাব। এক পর্যায়ে দুটি ট্রলার দুই দিকে গেলে শেষ পর্যন্ত একটি ট্রলারের পেছনে ছুটে সেটি আটক করে র‌্যাব, পালিয়ে যায় অন্যটি।

সোমবার র‌্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযানের এই বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।

এদিকে ঢাকার বিমানবন্দর রেল স্টেশন এলাকায় আরেক অভিযানে আটক করা হয় ৫০ হাজার ইয়াবা।

এই দুই অভিযানে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন এ মাদক চক্রের হোতা বলে র‌্যাবের ধারণা।  

র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক মাকসুদুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে ইয়াবা এই অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে, তা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় চালান।”

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কাড়িয়া নগরের আলী আহম্মদ (৫২), পটিয়া উপজেলার শিকলবাহার হামিদ উল্লাহ (৩২) এবং রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার মো. মহিউদ্দিন (৩৫)।

র‌্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের একটি সংঘবদ্ধ চক্র মাছের ব্যবসার আড়ালে ট্রলারে করে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা নিয়ে চট্টগ্রামে আসছে বলে খবর পায় র্যা ব-৭। ওই খবরের ভিত্তিতেই শুক্রবার রাতে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় নাম-পরিচয়হীন দুটি ট্রলারের অবস্থান চিহ্নিত করা হয়।

পরদিন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সমুদ্রগামী একটি জলযান নিয়ে ধাওয়া শুরু করে র‌্যাব। এরপর দুটি ট্রলার দুদিকে চলে গেলে র্যা ব একটি ট্রলারের পিছু নিয়ে রোববার সন্ধ্যার দিকে পতেঙ্গার কাছাকাছি নিয়ে আসে। এ অবস্থায় ট্রলারে থাকা কয়েকজন সমুদ্রে লাফিয়ে পড়ে পালিয়ে যায়।

পরে ট্রলারটি আটক করে আলী আহম্মদ ও হামিদ উল্লাহ নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তল্লাশি চালিয়ে ২৭ লাখ ৫০ হাজার ইয়াবা পাওয়া যায় বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

এতে বলা হয়, ট্রলার থেকে গ্রেপ্তার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই সোমবার সকাল ৮টার দিকে ঢাকার বিমানবন্দর এলাকা থেকে ৫০ হাজার ইয়াবাসহ মহিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব বলছে, আলী আহম্মদ একুশে প্রোপার্টিজ নামের একটি ডেভেলপার কোম্পানির আড়ালে ইয়াবার কারবার করে আসছিলেন। তাকে সহযোগিতা করতেন মহিউদিন ও হামিদ উল্লাহ।

“মিয়ানমারের নাগরিক বমংক এই ইয়াবার প্রধান সরবরাহকারী। তার কাছ থেকে মিয়ানমারের আরেক নাগরিক আয়াতুল্লাহ'র সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আলী আহম্মদের সিন্ডিকেট ইয়াবার চালান চট্টগ্রামে নিয়ে আসত ,” বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

র‌্যাব বলছে, ইয়াবা পাচারে ব্যবহার করা ট্রলারটির নাম মুছে ফেলা হয়েছিল। তবে গ্রেপ্তাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, আলী আহম্মদের মামাতো ভাই নূরুন নবী ওই ট্রলারের মালিক।

পালিয়ে যাওয়া দ্বিতীয় ট্রলারে ইয়াবা ছিল কিনা, থাকলে কী পরিমাণ ইয়াবা ছিল- সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানাতে পারেনি র‌্যাব।

মাদক চোরাকারবারিরা দীর্ঘদিন ধরেই মিয়ানমার থেকে সাগরপথে বাংলাদেশে ইয়াবা আনছে। পরে তা চট্টগ্রাম থেকে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।

আমেরিকার পার্টি ড্রাগ ইয়াবা এক সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে পরিবহন শ্রমিকদের কাছে নেশার বড়ি হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২০০৭ সালে র‌্যাবের এক অভিযানেই বাংলাদেশে প্রথম ইয়াবার চালান ধরা পড়ে।

এর আগে গতবছর ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে একটি ট্রলার থেকে ১৫ লাখ ইয়াবা  উদ্ধার করে নৌবাহিনী। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকার পথে বিভিন্ন স্থানে আটক করা হয়েছে ইয়াবার বেশ কয়েকটি বড় চালান।

র‌্যাব বলছে, ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এ বছর ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৯২ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করেছে তারা। এর মধ্যে কেবল চট্টগ্রামেই ৭০ লাখ ৮০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।