জেএমবিতে ‘দুই গ্রুপ’; একটি সক্রিয়, অন্যটি ‘চুরি-ছিনতাইয়ে’

নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবি দুই ভাগে ভাগ হয়ে পড়েছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি।

গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2016, 12:26 PM
Updated : 15 Jan 2016, 05:49 AM

গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেছেন, এর একটি অংশ বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে সক্রিয় থাকলেও ‘চুরি-ছিনতাই’ ছাড়া কোনো তৎপরতা অন্য অংশের এখন আর নেই।

জেএমবির যে অংশটি অস্থিতিশীল করতে সক্রিয়, তাদের অর্থ জোগানদাতারা বাংলাদেশকে জঙ্গিরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টায় রয়েছেন বলেও মনিরুলের দাবি।

ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থেকে সন্দেহভাজন তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর তাদের নিয়ে অভিযানের সময় বন্দুকযুদ্ধে দুই ‘জঙ্গি নেতা’ নিহত হওয়ার ঘটনা সবিস্তারে তুলে ধরতে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে ডিবি।

ওই সংবাদ সম্মেলনেই যুগ্মকমিশনার মনিরুল জেএমবির তৎপরতার হালের খবর জানিয়ে বলেন, বুধবার রাতে নিহত এবং গ্রেপ্তার সবাই জেএমবিতে আমির মুফতি সাইদুর রহমানের বিরোধী পক্ষ।

নিহত ও গ্রেপ্তার ৫ জন শায়খ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাইয়ের অনুসারী বলে অভিযানের সময় গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেন বলেছিলেন।

মনিরুল বলেন, “বর্তমানে জেএমবিতে দুটি গ্রুপ আছে। একটির নেতা মাওলানা সাইদুর রহমান। ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশ ভ্যানে হামলা, ভারতে বোমা হামলায় তারা জড়িত ছিল। এখন চুরি, ছিনতাই ছাড়া তেমন কোনো তৎপরতা নেই।”

২০০৫ সালের ১৭ অগাস্ট একসঙ্গে সারা বাংলাদেশে বোমাহামলা চালিয়ে আলোচনায় এসেছিল জেএমবি। পরে দলটি নিষিদ্ধ হয়। দলের আমির শায়খ রহমান, বাংলাভাইসহ শীর্ষনেতাদের মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর হয় সাত বছর আগে। 

এখন জেএমবিতে সক্রিয় অংশটি শায়খ রহমান ও বাংলাভাইয়ের পথ অনুসরণ করছেন জানিয়ে মনিরুল বলেন, শায়খ রহমানের মৃত্যুর পর এরা চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল। এরপর ধীরে ধীরে সক্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে।

“এই গ্রুপে শিবিরের বেশ কিছু সদস্য রয়েছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচার বাধাগ্রস্ত করতে ও সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তারা তৎপর হয়ে উঠছিল।”

বুধবার যাদের গ্রেপ্তার করা হয়, তাদের মধ্যে দুজন তিন মাস আগে পুরান ঢাকায় শিয়াদের সমাবেশে বোমাহামলায় জড়িত ছিল বলে পুলিশের দাবি। নিহত একজন গত অক্টোবরে ঢাকার গাবতলীতে ছুরিকাঘাতে এএসআই হত্যাকাণ্ডের আসামি বলেও পুলিশ জানিয়েছে।

অক্টোবর মাসে গাবতলীর মতো আশুলিয়ায় পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালিয়ে এক কনস্টেবলকে হত্যা করা হয়।

এছাড়া গত কয়েকমাসে এই ধরনের আরও কয়েকটি হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের নামে দায় স্বীকারের খবর আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে এলেও তা নাকচ করেছে বাংলাদেশ পুলিশ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব আছে প্রমাণের একটি ষড়যন্ত্র চলছে।

মনিরুল বলেন, “বাংলাদেশকে যারা জঙ্গি রাষ্ট্র বানাতে চায়, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায়, তারাই তাদের (জেএমবির একাংশ) অর্থের জোগানদাতা বলে গোয়েন্দারা অনেকটাই নিশ্চিত।”

সম্প্রতি পুলিশের অভিযানে ঢাকা-চট্টগ্রামে জেএমবির কয়েকটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মেলার খবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফলাও করে জানালেও মনিরুল বলেন, “মূলত উত্তরবঙ্গেই তাদের বর্তমান ঘাঁটি বলে তথ্য রয়েছে।”

তিনি বলেন, জেএমবির এই অংশটি একসময় রাজধানীর আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় পরিচয় গোপন করে বাসা ভাড়া নিয়ে লক্ষ্য স্থির করে আক্রমনের পরিকল্পনা করত।

“গোয়েন্দারা এখন পর্যন্ত ১৪টি আস্তানার সন্ধান পেয়েছে। এরা (জঙ্গি) দুই মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণ নিয়ে টার্গেট ঠিক করে। একেকজন একেক টার্গেট বাস্তবায়ন করতে কাজ করে।”

তবে জেএমবিতে ‘আত্নঘাতী’ হামলাকারী সদস্য নেই বলে দাবি করেন মনিরুল।

“রাজশাহীতে যেই ঘটনাটি ঘটেছিল, তার জন্য এরা প্রস্তুত ছিল না। তারা নিজেদের আত্মঘাতী বলে জাহির করলেও দলের জন্য ততটা নিবেদিত নয়।”