চা বাগানের জমিতে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঠেকাতে অবরোধের হুমকি

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চাঁন্দপুর  চা বাগানের নামে ইজারা নেওয়া জমিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

ফায়হাম ইবনে শরীফ, হবিগঞ্জ থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Jan 2016, 08:35 PM
Updated : 9 Jan 2016, 08:35 PM

শনিবার চান্দপুর-বেগমখান চা বাগানে সমাবেশ থেকে এই হুমকি দেওয়া হয়। কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা ঢাকা থেকে গিয়ে চা শ্রমিকদের এই সমাবেশে যোগ দেন।

সমাবেশে বলা হয়, আগামী ২১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট সফর করবেন। সে সময় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের ঘোষণা না এলে ২৫ জানুয়ারি দেশের সব চা বাগান বন্ধ রাখার পাশাপাশি ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করা হবে।

এছাড়া আগামী ১৭ জানুয়ারি ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। আগের মতই প্রতিদিন দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি পালন করবেন সব বাগানের শ্রমিকরা।

চা বাগানের নামে ইজারা নেওয়া ৫১১ দশমিক ৮৩ একর কৃষি জমিতে ‘ইকনোমিক জোন’ করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয় সমাবেশ থেকে।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, “প্রায় দেড়শ বছর আগে যে জমি কেটে সাফ করে চাষযোগ্য করেছেন এখানকার চা শ্রমিকরা, সেই জমি আজকে অকৃষি জমি দেখিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।

“আজকের এই আন্দোলন শুধু এই জমিকে বাঁচানোর আন্দোলন নয়, বরং বাংলাদেশের প্রায় ২০০ চা বাগানের শ্রমিকদের ভূমি অধিকারের আন্দোলন।”

শ্রমিকদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, “মৃত্যু-রক্তদান সহজ, কিন্তু জমি দান সহজ না। ভারতের সিঙ্গুর এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ।”

তিনি বলেন, “আমাদের আমলাতন্ত্রের ওপর যদি ব্রিটিশ কিংবা পাকিস্তানিদের প্রেতাত্মা ভর করে থাকে তাহলে আবার রক্ত দেওয়া হবে, দেশে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ হবে। কারণ আবাদযোগ্য এই জমিকে কীভাবে খাস জমি দেখালেন আমাদের আমলারা- সেটা অবশ্যই খতিয়ে দেখা দরকার।”

দেশের বিদ্যমান আইনে কোনোভাবেই কৃষি জমিকে শিল্পায়নের জন্য দেওয়ার সুযোগ নেই বলে সমাবেশে বক্তব্যে বলেন আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, “জমির কাগজ না থেকেও যদি গত ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে তারা এই জমি চাষ করে থাকে তাহলে বিদ্যমান সকল আইন অনুযায়ীই এই জমি তাদের প্রাপ্য। এই জমি কাউকে দিতে হলে এখানকার চা শ্রমিকদেরই দেয়া হোক।”

অধ্যাপক মেসবাহ কামাল বলেন, “কেউই ইকনোমিক জোন কিংবা শিল্পায়নের বিপক্ষে নন। বরঞ্চ তাদের এই কৃষিজমিতে সেই শিল্পাঞ্চল না করে, চুনারুঘাটেই সরকারের অন্য খাস জমিতে এই অঞ্চল করার আবেদন সবার।”   

আগামী সংসদ অধিবেশনে এই বিষয়টি তুলে ধরার আশ্বাস দেন আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা।

“যারা এই জমির ব্যাপারে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সরকারকে বিভ্রান্ত করেছেন, তাদের শাস্তির মুখোমুখি করার ব্যাপারটিও সংসদের নজরে আনব,” বলেন তিনি।  

সমাবেশে উপস্থিত চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতিনিধিবৃন্দ, বাংলাদেশের সাতটি চা ভ্যালির বাগানের পঞ্চায়েত কমিটি, চা বাগান ছাত্র ও যুবকদের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা চা বাগানে অর্থনৈতিক অঞ্চল করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, কার্যকরী সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিভূতিভূষণ মাহাতু, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকি আক্তার বক্তব্য রাখেন।

চাঁন্দপুর  চা বাগানের শ্রমিকদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এদিন ব্রাহ্মবাড়িয়া-হবিগঞ্জের লস্করপুর ভ্যালির ২৩টি চা বাগানসহ সিলেট ও মৌলভীবাজারের বেশ কিছু চা বাগানে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেন শ্রমিকরা।