রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার এ ভূমিকম্পে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভবনে ফাটল ধরার খবর পাওয়া গেছে। সিলেটে একটি নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে চারজন আহতও হয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা ব্রজেন কুমার সরকার জানান, সোমবার সকালে বংশালের জেদসরদার রোডের একটি ছয় তলা ভবন হেলে পড়ার খবর পেয়ে তারা সেখানে লোক পাঠান।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপ-পরিচালক আবদুল হালিম ঘটনাস্থল থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে দুই ভবনের মাঝে চার ইঞ্চির মতো ফাঁকা ছিল। ভূমিকম্পের ফলে একটি অংশ পাশের ভবনে লেগে গেছে। তবে আমরা বড় কোনো ঝুঁকি দেখছি না।”
রাজউককে খবর দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “তাদের প্রকৌশলীরা এসে পরবর্তী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে।”
সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কলোনির মধ্যে ওই ভবনের পূর্ব ও পশ্চিম দিক ফাঁকা। দক্ষিণের একটি অংশ পাশের আরেকটি ভবেনের সঙ্গে লেগে আছে।
ফায়ার সার্ভিস ‘ঝুঁকি নেই’ বললেও পুলিশের পক্ষ থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিকালে মাইকিং করা হয়। তারপরও কেউ ভবন ছেড়ে যাননি বলে জানিয়েছেন পুলিশের কোতোয়ালি জোনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ আহাদুজ্জামান মিয়া।
ওই ভবনের বাসিন্দা পান্না লাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতি তলায় ১০টা করে ঘর। ছয় তলায় আমরা মোট ৬০টি পরিবার বসবাস করি। প্রায় তিন বছর আগে এই বিল্ডিং বানানো হইছে।”
হেলে পড়া ভবনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বিকাল পর্যন্ত রাজউকের কেউ সেখানে যাননি বলে আহাদুজ্জামান মিয়া জানান।
ফায়ার সার্ভিস নিয়্ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা আতিকুল আলম চৌধুরী জানান, কদমতলীতে আরেকটি ছয়তলা ভবন হেলে পড়ার খবর তাদের কাছে আসে দুপুরে।
“জনতাবাগের ওই ভবনে ২০টি পরিবার থাকতো। সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা এসে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলায় তারা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নেমে যান। সেখানে থাকা নিরাপদ হবে কি না তা বুঝতে মঙ্গলবার ভবনটি আবার পরীক্ষা করা হবে।”
ভূমিকম্পের পর শাঁখারীবাজার এলাকার ৬২ নম্বর হোল্ডিংয়ে পুরনো এক বাসায় ফাটল দেখা দেওয়ার খবর পেয়ে সেখানেও লোক পাঠানো হয় বলে ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা ব্রজেন কুমার সরকার জানান।
কোতোয়ালি থানার এসআই আবদুল আজিজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটেকমকে বলেন, “তিন তলা ওই ভবনে ফাটল ধরেছে। ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও চারটি পরিবার সেখানে বসবাস করে।
সুমন সুর নামের এক বাসিন্দা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্য পরিবারগুলো এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেও আমাদের চারটি পরিবারের সেই সামর্থ্য নেই। ভোর রাতে যখন ভূমিকম্পে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিল, আমরা বাড়ি থেকে নেমে বাইরে দাঁড়ালাম। ফায়ার সার্ভিস আমাদের নিরাপদে সরে যেতে বলেছে। কিন্তু আমরা যাব কোথায়?”
বাড়ি ভেঙে ফেলা হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “হেরিটেজের কথা বলে ভাঙতে দিচ্ছে না। এটা কী রাজবাড়ি? এটা তো সাধারণ একটি ভবন। চারপাশে নতুন সব ভবন হয়েছে। শুধু আমাদেরকে ভাঙতে দিচ্ছে না।”
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৩৫২ কিলোমিটার পূর্ব উত্তর-পূর্বে ভারতের মনিপুর রাজ্যে।
ভূমিকম্পের আরও খবর