যুদ্ধাপরাধ: ‘ঘোড়ামারা’ আজিজসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিলের নির্দেশ

যুদ্ধাপরাধের মামলায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সাবেক সাংসদ আবু সালেহ মুহাম্মদ আব্দুল আজিজ মিয়া (৬৫) ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করতে প্রসিকিউশনকে নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2015, 09:44 AM
Updated : 29 Dec 2015, 09:55 AM

বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বুধবার এ আদেশ দেয়।

আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, ঋষিকেশ সাহা ও মুশফেক কবির।

পরে হায়দার আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তদন্ত সংস্থা ছয়জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে ২৭ ডিসেম্বর প্রসিকিউশনে জমা দিয়েছে। এর ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের জন্য ৪৫ দিন সময় চাওয়া হলে ট্রাইব্যুনাল ১৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তা দিতে বলেছে।

তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদনে ছয় আসামির বিরুদ্ধে একাত্তরে গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটকে রাখা, নির্যাতন, লুটপাটের তিনটি ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়।

আজিজ ছাড়া বাকি পাঁচ আসামি হলেন- মো. রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু (৬১), মো. আব্দুল লতিফ (৬১), আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী (৫৯), মো. নাজমুল হুদা (৬০) ও মো. আব্দুর রহিম মিঞা (৬২)। তারা সবাই পলাতক।

তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, প্রসিকিউশনের আবেদনে গত ২৬ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল ছয় আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। তবে গাইবান্ধা ও দিনাজপুর জেলা পুলিশ এখনও তাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

ছয় আসামির বিরুদ্ধে তিন অভিযোগ

প্রথম অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ৯ অক্টোবর সকাল ৮টা বা সাড়ে ৮টার সময় আসামিরা পাকিস্তানের দখলদার সেনা বাহিনীর ২৫/৩০ জনকে সঙ্গে নিয়ে গাইবান্ধা জেলার সদর থানাধীন মৌজামালি বাড়ি গ্রামে হামলা চালিয়ে চার জন নিরীহ, নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের মানুষকে আটক, নির্যাতন ও অপহরণ করে। পরে তাদের দাড়িয়াপুর ব্রীজে নিয়ে গিয়ে গনেশ চন্দ্র বর্মণের মাথার সঙ্গে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে দিয়ে হত্যা করে এবং বাকিদের ছেড়ে দেয়। আসামিরা আটককৃতদের বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন করে।

দ্বিতীয় অভিযোগ অনুসারে, ওই দিন বিকাল ৪টার দিকে আসামিরা সুন্দরগঞ্জ থানার মাঠেরহাট ব্রীজ পাহারারত ছাত্রলীগের নেতা মো. বয়েজ উদ্দিনকে আটক করে মাঠেরহাটের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করতে থাকে। পরদিন সকালে আসামিরা বয়েজকে থানা সদরের স্থাপিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যায়। তিন দিন আটক রেখে নির্যাতনের পর ১৩ অক্টোবর বিকালে তাকে গুলি করে হত্যা করে লাশ মাটির নিচে চাপা দেয়। 

তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ১০ অক্টোবর থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত আসামিরা পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সুন্দরগঞ্জ থানার পাঁচটি ইউনিয়নের নিরীহ-নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের ১৩ জন চেয়ারম্যান ও মেম্বারকে অবৈধভাবে আটক করে। তাদের তিন দিন ধরে নির্যাতন করার পর পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পের কাছে নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে এবং তাদের লাশ মাটি চাপা দেয়। সেখানে ওই শহীদদের স্মৃরণে একটি বধ্যভূমি নির্মিত হয়েছে।

ছয় আসামি সংক্ষিপ্ত পরিচয়

সংবাদ সম্মেলনে জনানো হয়, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজ মিয়া ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চার দলীয় জোটের অধীনে গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জ-১ আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন।

২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে দুটি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাসহ ১৩টি মামলা হয়। ২০১৩ সালে সুন্দরগঞ্জ থানায় চার পুলিশ সদস্য হত্যামামলায় অন্যতম আসামি এই আজিজ।

বাকিদের মধ্যে জামায়াতের সুন্দরগঞ্জ থানা শাখার সক্রিয় সদস্য রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জুর (৬১) বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দুটি মামলা হয়।

মো. আব্দুল লতিফ জামায়াতে ইসলামী সক্রিয় কর্মী এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পর্যায়ের নেতা। তার বিরুদ্ধে সুন্দরগঞ্জ থানায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগসহ তিনটি মামলা হয়।

আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী  মুক্তিযুদ্ধের আগে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের সক্রিয় নেতা ছিলেন। পরে জামায়াতে ইসলামীর সক্রিয় কর্মী বলে সংবাদ সম্মেলনে সরবরাহ করা কাগজে বলা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়।

১৯৭০ সাল থেকে জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে দুটি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা হয়। তিনি ১৯৯৫ সাল থেকে বিএনপির সক্রিয় কর্মী হলেও জামায়াতের সমর্থক করে বলে জানা যায়।

আর আব্দুর রহিম মিঞা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে জামায়াতের কর্মী ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন- এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তার মানবতাবিরোধী অপরাধে দুটি মামলা হয়।