‘হিন্দুরা আমাকে ভগবানের মতো ভালোবাসে’

ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে প্রধান আসামি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীমউদ্দিন রাহমানী দাবি করেছেন, চরমোনাই পীরের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণেই তাকে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে।

প্রকাশ বিশ্বাসপ্রকাশ বিশ্বাসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Dec 2015, 01:06 PM
Updated : 22 Dec 2015, 01:33 PM

মঙ্গলবার ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহম্মেদের এজলাসে আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেওয়া বক্তব্যে এ দাবি করেন তিনি। তিনি লিখিত বক্তব্যের পর মুখেও কথা বলেন এজলাসে। 

এদিন মামলার আরও ছয় আসামি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন। তারা সবাই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত ছাত্র।

তাদের মধ্যে মৌখিক বক্তব্য দেন নাফিস ইমতিয়াজ, নাঈম ইরাদ ও এহসান রেজা রুম্মান। ফয়সাল বিন নাঈম দীপ, মাকসুদুল হাসান অনিক ও সাদমান ইয়াছির মাহমুদ তাদের বক্তব্য জমা দিয়েছেন লিখিতভাবে।

সব আসামি সাফাই সাক্ষী হাজির করবেন না বলে আদালতকে জানান। মামলার আট আসামির মধ্যে রেদোয়ানুল আজাদ রানা পলাতক।

মুফতি জসীম তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও শিক্ষা জীবনের বৃত্তান্ত এবং আর্থিক অবস্থা তুলে ধরে বলেন, “ব্লগার কী- এর আগে আমি জানতাম না। আমার আলোচিত বইয়ে মহাত্মা গান্ধীর প্রসঙ্গ ও উদ্ধৃতি রয়েছে।

“বরগুনায় আমার এলাকায় হিন্দুরা আমাকে ভগবানের মতো ভালোবাসে। আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা এবং মন্ত্রী তোফায়েলের ভাই আমাকে আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলের কাছে যেতে বলে মামলা শেষ করার জন্য। আমার টাকা নেই বলে আমি তার মতো উকিল ধরতে পারিনি।”

দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল এই মামলার আসামি সাদমান ইয়াসির মাহমুদের আইনজীবী।

বিচারক সাঈদ আহমদ আসামি রাহমানীকে প্রশ্ন করেন, “আপনি কেন মানুষ হত্যা  করেন? আপনি যদি ভালোই হন তাহলে কেন আপনার নাম এই মামলায় এল। আপনার ভাষ্য মতে, আপনি খুব ভালো ছাত্র ছিলেন এবং আপনি জ্ঞানী। এত বড় হওয়ার চেষ্টা করেছেন কেন?” 

মুফতি জসীমউদ্দিন রাহমানী (ফাইল ছবি)

 

উত্তরে জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডের জন্য নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতা রাহমানী বলেন, “আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, আমি রাজীব হত্যা মামলার কিছু জানি না।

“আমাকে রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচার করা হত। আমাকে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে কয়েকবার অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছে। চোখ বাঁধা অবস্থায় আমাকে আসামি হিসেবে কয়েকজনের নাম বলতে বলেছে।”

আসামি এহসানুর রেজা রুম্মানও পুলিশি নির্যাতনের অভিযোগ তুলে বলেন, হাকিমের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে তাকে বাধ্য করা হয়েছিল বলে তিনি তা প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন।

এর আগে বিচারক আসামি নাফিজ ইমতিয়াজের কাছে জানতে চান, তিনি পলাতক আসামি রানাকে চেনেন কিনা?

নাফিজ ‘চেনেন না’ বলে জানান।

পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা রানা লেখক অভিজিৎ রায় হত্যকাণ্ডেও জড়িত ছিলেন।  

প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে আসামিদের সবার আত্মপক্ষ সমর্থনের পর বিচারক বলেন, “এটা কিন্তু মিডিয়া ট্রায়াল না। আপনারা যা বলেছেন, তা নথিতে থাকবে। যা সাক্ষ্যপ্রমাণে এসেছে তা দিয়ে আপনাদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে।”

এসময় আসামি অনিকের আইনজীবী রেজাক খান বলেন, “গণমাধ্যমে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এই হত্যায় জড়িত বলে এসেছে। এই হত্যায় তারা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নাম কোথায় পেল?”

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মাহাবুবুর রহমান ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় আসামিদেরকে রাষ্ট্রপক্ষের সব সাক্ষীর জবানবন্দি পড়ে শোনান এবং দোষী না নির্দোষ জানতে চান। জবাবে আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায় বিচার চান।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরুর পর ১৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুরের বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় মঞ্চের কর্মী স্থপতি রাজীবকে।

এ ঘটনায় নিহতের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিন পল্লবী থানায় এ মামলা দায়ের করেন। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ ধর্মীয় উগ্রবাদীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে।

গত ১৮ মার্চ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন রাহমানি এবং নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাত ছাত্রসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে মামলার বিচার শুরু হয়। কিন্তু তাতে ত্রুটি ধরা পড়ায় গত ২১ মে নতুন করে অভিযোগ গঠন করা হয়।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ সোমবার শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষের ৫৫ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৫ জনের সাক্ষ্য নেন বিচারক।

মঙ্গলবার আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্যের পর আগামী বৃহস্পতিবার যুক্তিতর্ক শুরুর দিন রেখেছে আদালত।