'প্রতীকী বিচার' হবে ১৯৫ পাকিস্তানি সেনার

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে ১৯৫ পাকিস্তানি সেনা সদস্যের বিচারের দাবিতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের 'প্রতীকী বিচার' করার ঘোষণা দিয়েছে ‌'আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার'।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2015, 01:02 PM
Updated : 18 Dec 2015, 03:55 PM

শুক্রবার রাজধানীর সেগুন বাগিচায় স্বাধীনতা হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দিয়ে গণবিচার আদালতের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।

তিনি বলেন, “আগামী ২৬ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখ লাখ জনতার সামনে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে ১৯৫ জন পাকিস্তানি ঘাতকের প্রতীকী বিচার করা হবে।

"আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি- ওইসব সেনা কর্মকর্তাকে ফিরিয়ে আনা হবে এবং এদেশে তাদের সহযোগীদেরও বিচার করা হবে। তাদের কৃতকর্মের জন্য কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।"

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ওই পাক সেনাদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান নৌমন্ত্রী।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ত্রিদেশীয় চুক্তির আওতায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক ১৯৫ সেনা সদস্যকে নিজ দেশে বিচারের মুখোমুখি করার শর্তে ফেরত নেয় পাকিস্তান। এরপর ৪৪ বছর পার হলেও তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়নি দেশটি।

তাদের প্রতীকী বিচারের জন্য এবার যে স্থানটি বেছে নেওয়া হয়েছে, সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই

১৯৯২ সালে ২৬ মার্চ 'গণআদালত' গঠন করে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী জামায়াতগুরু গোলাম আযমের প্রতীকী বিচার শুরু করেছিল শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’।

সেই পথ ধরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে জোরালো আন্দোলন শুরু হলে ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়, শুরু হয় একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার।  

এবার ১৯৫ জন সেনা কর্মকর্তার যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবিতে আন্দোলন শুরুর ঘোষণা দিয়ে শাজাহান খান বলেন, "প্রতীকী বিচারের মাধ্যমেই আমাদের এই আন্দোলন শুরু হবে। যতদিন পর্যন্ত তাদের নির্মূল করতে না পারব, ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে।"

সম্প্রতি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে পাক বাহিনীর এদেশীয় সহযোগীদের বিচার ও কয়েকজনের দণ্ড কার্যকরের পর পাকিস্তান 'উদ্বেগ' প্রকাশ করলে ঢাকায় দেশটির হাই কমিশনারকে ডেকে 'কড়া প্রতিবাদ' জানায় বাংলাদেশ সরকার।

এর এক সপ্তাহের মধ্যে ইসলামাবাদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে একাত্তরে গণহত্যার দায় অস্বীকার করে পাকিস্তান।

এ ধরনের ঘটনাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানের ‘নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ’ আখ্যায়িত করে দেশটির সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পাশাপাশি নতুন করে ১৯৫ জন পাক সেনার বিচারের দাবি জানিয়ে আসছে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা।

মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রায় ৯৫ হাজার পাকিস্তানি সেনা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে হত্যা-গণহত্যার মাধ্যমে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনকে দমনের চেষ্টা করে।

শাজাহান খান বলেন, "ওই পাকিস্তানি নরঘাতক সেনাবাহিনীর ৯৫ হাজার সদস্য ও তাদের সহযোগী আল-বদর, আল-শামস, রাজাকাররা বিশ্বের ইতিহাসে নৃশংসতম বর্বরোচিত গণহত্যা চালিয়েছিল।

"তারা লাখো মা-বোনের সম্ভ্রমহানি করেছিল। মানবতার বিরুদ্ধে জঘণ্যতম অপরাধে তাদের এই বিচার করা হবে।"

সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের এদেশীয় সহযোগীদের বিচারে ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা দেয় আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ১৯ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গণসংযোগ, ৩ জানুয়ারি ২০১৬ মতিঝিল শাপলা চত্বরে সমাবেশ এবং ৬ জানুয়ারি সকাল ১০টায় যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির আদেশ বহাল ও কার্যকর করার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণঅবস্থান।

আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার-সংগঠনের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক আবেদ খান বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।  

এছাড়া সাংসদ শিরিন আখতার, মুক্তিযোদ্ধা ইসমত কাদির গামা, অভিনেত্রী শমী কায়সার, অঞ্জন রায়, কামাল পাশা চৌধুরী, রোকেয়া প্রাচীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।