বাংলাদেশে ২২ দিন বন্ধ থাকার পর সরকারের ‘নির্দেশনা’ পেয়ে ফেইসবুক খুলে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
Published : 10 Dec 2015, 12:43 PM
টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টায় মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, “সরকারের নির্দেশনা এই মাত্র আমার হাতে এসেছে। জনগণের সুবিধার জন্য ফেইসবুক খুলে দিচ্ছি।”
তবে ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপসহ বন্ধ থাকা অন্যান্য মোবাইল অ্যাপগুলোর বিষয়ে ‘পরে সিদ্ধান্ত হবে’ বলে জানান তিনি।
তারানা বলেন, “জননিরাপত্তার হুমকির মাত্রা যে ধরনের ছিল, সেই মাত্রা অনেকটাই কমে এসেছে। বাকি অ্যাপগুলো যদি কন্ট্রোল করি- হুমকি কন্ট্রোলে রাখতে পারব বলে আশা করছি।
“যে মাত্রায় নিরাপত্তা সমস্যা হচ্ছিল তা অনেকটাই কমে এসেছে। তাই ফেইসবুক খুলে দিতে পেরেছি।”
এরপর ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের সামনেই বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদকে ফোন করে ফেইসবুক খুলে দিতে নির্দেশ দেন তারানা হালিম।
দুই বিদেশি নাগরিক হত্যা ও পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হামলার ঘটনার পর জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের যোগাযোগের পথ বন্ধ করতে গত ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশে ফেইসবুক বন্ধ করে দেওয়া হয়।
একই সময়ে বন্ধ করা হয় মোবাইল ফোনের অ্যাপ ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জার, ভাইবার ও হোয়াটসঅ্যাপ। আর বিটিআরসির নির্দেশে এ কাজটি করতে গিয়ে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রায় দেড় ঘণ্টা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে বাংলাদেশ।
‘বৃহত্তর স্বার্থে’ এই কষ্ট মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সেদিন বলেছিলেন, “দেশ ও জাতির নিরাপত্তার স্বার্থেই এগুলো বন্ধ করা হয়েছে।”
সরকারের ওই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হতে পারেননি তরুণদের অনেকেই। ফেইসবুকসহ বন্ধ থাকা সামাজিক যোগাযোগের সব মাধ্যম দ্রুত খুলে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশও হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
এই সময়ে বিকল্প পথে অনেকেই ফেইসবুক ব্যবহার করেছেন, যার নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি তুলে ধরে সবাইকে সতর্কও করেছেন তারানা।
অবশ্য তরুণদের প্রশংসা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এদের কোনোভাবেই ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে বসে বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে তারানা বলেন, “আমরা ফেইসবুক খুলে দেওয়ার জন্য সরকারি নির্দেশনা পেয়েছি। জননিরাপত্তার স্বর্থে ফেইসবুক বন্ধ রাখা হয়েছিল। আমার মনে হয় আপাতত সেই সমস্যা কেটে গেছে। সেজন্য ফেইসবুক খুলে দিতে সরকারের নির্দেশনা এসেছে।”
নিরাপত্তার বিষয়ে যখন ‘কোনো হুমিক থাকবে না’, তখন অন্য অ্যাপগুলো খুলে দেওয়া হবে জানান প্রতিমন্ত্রী।
তরুণ প্রজন্মকে ধন্যবাদ জানিয়ে এক সময়ের জনপ্রিয় এই টেলিভিশন অভিনেত্রী বলেন, “আমি জানি, তরুণ প্রজন্মের কাছে ফেইসবুক যোগাযোগের অত্যন্ত প্রিয় মাধ্যম। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।
“…জনস্বার্থে কিছুদিন ফেইসবুক বন্ধ ছিল এটি তারা (তরুণ প্রজন্ম) সহৃদয় চিত্তে মেনে নিয়েছেন, সেজন্য তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।”
সাময়িকভাবে ফেইসবুক বন্ধের পর যারা সরকারের সমালোচনা করেছেন- তাদেরও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারানা।
“কারণ তারাও আমাদের সাময়িক অসুবিধাকে মেনে নিয়েছেন,” বলেন তিনি।
ফেইসবুকে যারা ব্যবসা করেন- জনগণের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে তাদের যে ‘কিছুটা ক্ষতি হয়েছে’, প্রতিমন্ত্রী তা স্বীকার করেন।
“সাময়িক ফেইসবুক বন্ধ করে যদি একটা জীবনও বাঁচাতে পারি, সেই কৃতিত্ব সবার।”
তারানা বলেন, “আশা করছি ফেইসবুক খুলে দেওয়ার পর নাশকতা হবে না।”