সাজা কমল ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ জোসেফের

নব্বইয়ের দশকের আলোচিত ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ তোফায়েল আহমেদ জোসেফের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2015, 10:30 AM
Updated : 9 Dec 2015, 01:55 PM

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ফ্রিডম পার্টির নেতা মোস্তাফিজুর রহমান হত্যা মামলার আপিলে বুধবার এই রায় আসে।

হাই কোর্টের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে জোসেফের করা আপিলে তার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ।

এ মামলার আরেক আসামি কাবিল সরকারের আপিল মঞ্জুর করে তাকে খালাস দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।

জোসেফ ১৭ বছর আগে যখন গ্রেপ্তার হন, তার নামে তখন ঢাকার বিভিন্ন থানায় চাঁদাবাজি, খুন, অবৈধ অস্ত্র বহনের অভিযোগে অন্তত ১১টি মামলা ছিল। এর মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান হত্যা মামলা ছাড়া বাকিগুলোর নিষ্পত্তি হয়েছিল আগেই।

এই হত্যা মামলায় সাজা কমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও “এই মুহূর্তে জোসেফ মুক্তি পাচ্ছেন না” বলে তার আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন জানিয়েছেন।

আপিল বিভাগে আসামিপক্ষে মামলা লড়েন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, এস এম শাজাহান, মাহবুব আলী, আমিন উদ্দিন ও এ এস এম আবদুল মোবিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল খোন্দকার দিলীরুজ্জামান।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ৭ মে মোহাম্মপুরে খুন হয় ফ্রিডম পার্টির নেতা ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান।

পরদিন তার স্ত্রী রাশিদা পারভীন মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করে। ওই বছর ৮ অক্টোবর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।

ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২০০৪ সালের ২৫ এপ্রিল যে রায় ঘোষণা করে, তাতে জোসেফ ও মাসুদ জমাদারের মৃত্যুদণ্ড এবং কাবিল সরকার, আনিছ আহমেদ এবং জোসেফের ভাই হারিছ আহমেদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।

নিম্ন আদালতের রায়ের পর ওই বছর হাই কোর্টে আপিল করেন জোসেফ, মাসুদ ও কাবিল। আসামি আনিছ ও হারিছ শুরু থেকেই ছিলেন পলাতক।

আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে  ২০০৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর হাই কোর্ট রায় দেয়। ওই রায়ে জোসেফ ও কাবিলের সাজা বহাল থাকে, ফাঁসির আসামি মাসুদ জমাদার খালাস পান।

হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে আপিল করেন জোসেফ ও কাবিল। ওই আপিলের শুনানি শেষে বুধবার চূড়ান্ত রায় এলো।

কাবিল সরকারের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাবিল সরকারের আপিল মঞ্জুর করে তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এর ফলে তার মুক্তিতে আইনগত কোনো বাধা নেই।”

আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী এস এম শাজাহান বলেন, ঘটনার সময় জোসেফের বয়স ছিল ২০ বছর। ১৭ বছর ধরে তিনি কারাগারে আছেন। এর মধ্যে ১১ বছর ধরে আছেন কনডেম সেলে।

বিমান বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ওয়াদুদ আহমেদের ছোট ছেলে তোফায়েল আহমেদ জোসেফের বড় ভাই হারিস আহমেদের নামও রয়েছে পুলিশের শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায়। হারিস বর্তমানে ভারতে পালিয়ে আছেন বলে ধারণা করা হয়।

নব্বইয়ের দশকে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন তাদের আরেক ভাই সাঈদ আহমেদ টিপু। আর তাদের বড় ভাই মেজর জেনারেল আজিজ আহমদ বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক।

সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে জোসেফের বড় ভাই হারিস আহমেদ নিজেকে মোহাম্মদপুর এলাকায় জাতীয় পার্টির নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন। এরশাদ সরকারের পতনের পর তিনি নিজের পরিচয় দিতে শুরু করেন মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের নেতা হিসাবে। ঢাকার ৪৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কমিশনার পদে নির্বাচনও করেছিলেন তিনি।

জোসেফও এক সময় নিজেকে ছাত্রলীগের মোহাম্মদপুর থানার নেতা হিসাবে দাবি করতেন। তবে সংগঠনের কোনো পদে তিনি ছিলেন না বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।