ক্ষমার আবেদন করেছেন সাকা-মুজাহিদ: আইনমন্ত্রী

যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবং আলী আহসান মো. মুজাহিদ প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।  

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2015, 08:39 AM
Updated : 21 Nov 2015, 03:12 PM

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি সাবেক এই দুই মন্ত্রীর আইনি লড়াই চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর তাদের শেষ সুযোগ দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া।

রিভিউ খারিজের পর তাদের দণ্ড কার্যকরের তোড়জোড়ের মধ্যে শনিবার বেলা আড়াইটায় আইনমন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা আবেদন করেছেন।”

কারাবন্দিদের ক্ষমার আবেদন কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে যায় আইন মন্ত্রণালয়ে। আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে তা রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে যায়।

এরপর আইনমন্ত্রী সন্ধ্যায় তার বাড়িতে সাংবাদিকদের বলেন, আবেদন দুটি আসার পর মতামত দিয়ে দিয়েছেন তিনি।

আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার আগে বেলা সোয়া ২টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার কাছে এই বিষয়ে এখনও কোনো মেসেজ নেই।”

তবে গণমাধ্যমে এই খবর দেখেছেন বলে জানান তিনি।

এরপর ২টা ৩৫ মিনিটে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ডেপুটি জেলার সর্বোত্তম দেওয়ানকে একটি রেজিস্ট্রার খাতা নিয়ে বের হতে দেখা যায়।

কীসের ফাইল, সে বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খোলেননি তিনি। খাতাটির উপরে লেখা ছিল ‘গুরুত্বপূর্ণ পত্রাদি’।

ডেপুটি জেলার খাতাটি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে স্বরাষ্ট্র সচিবের কক্ষে ঢোকেন। এরপর তিনি বেলা সোয়া ৩টার দিকে কারাগারে ফিরে আসেন।

রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে আবেদনটি কখন ফেরত আসবে- জানতে চাইলে আনিসুল হক সন্ধ্যায় বলেন, “কোনো নির্দিষ্ট সময় নাই। সেটা কি আমি বলতে পারব, কতক্ষণ নাগাদ পৌঁছাবে?”

নিজে কী মতামত দিয়েছেন কিংবা ক্ষমার আবেদনে সালাউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদ কী লিখেছেন- সে বিষয়েও কথা বলতে রাজি হননি তিনি। 

“এই আবেদনে তারা কী লিখেছেন, আর আমাদের কী মতামত- দুটোই মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে উদ্দেশ্য করে করা হয়েছে। তাই এই দুই ব্যাপারে আমি কোনো কথা বলতে পারি না। এটা আমার সাংবিধানিক দায়িত্ব।”

এর আগে দুপুরে সালাউদ্দিন কাদের এবং মুজাহিদের পরিবার দুটি স্থানে আলাদা সংবাদ সম্মেলন করলেও প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট করেননি।

রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও সন্দেহ পোষণ করেন তারা।

সন্দেহ প্রকাশের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, “কোনো অস্পষ্টতা থেকে যাচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। আমি বলতে চাচ্ছি, যে দরখাস্তটা করেছেন, সেটা বাংলাদেশের সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার ক্ষমতা প্রয়োগ করার আবেদন করেছেন।”

সালাউদ্দিন কাদেরের পরিবার যুদ্ধাপরাধের ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বিচারে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে তারা রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিতে গিয়েছিলেন, তবে তা গ্রহণ করা হয়নি।

মুজাহিদের পরিবার বলেছে, ২১ অগাস্টে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর স্থগিত রাখার আহ্বান জানাচ্ছেন তারা।

আইনমন্ত্রী বলেন, “বিচারিক আদালতে তাদের মামলা চলছিল, তখন এই সব কথা তারা সেখানে বলেছে। আদালত এইগুলো বিবেচনা করে, মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ গ্রহণ করে, বিচারিক আদালত তাদের দণ্ড দিয়েছে।

“সেই সাজার বিরুদ্ধে তারা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে। আপিল বিভাগে আপিল শুনানি অন্তে না-মঞ্জুর করে। সেখানেও তারা এই সব বক্তব্য দিয়েছিল। এরপর তারা রিভিউ করে, শুনানির পর তাদের সেই আবেদনও খারিজ হয়।”

“তিনটি আদালতে রায়ের পর আজকে তাদের যে দাবি এগুলো হচ্ছে, নেহায়েৎই পরিস্থিতি তৈরি করার দাবি। এর কোনো আইনি যৌক্তিকতা নেই।”