৭ দিনের মধ্যে যশোর রোডের নাম ফেরানোর নির্দেশ

খুলনায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিজড়িত ‘খান-এ-সবুর’ সড়কের নাম প্রত্যাহার করে আগের ‘যশোর রোড’ নামটি ফিরিয়ে আনতে আদালতের দেওয়া নির্দেশনা সাত দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দিতে বলেছে হাই কোর্ট।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Nov 2015, 08:46 AM
Updated : 29 Nov 2015, 07:06 AM

গত অগাস্টে এ বিষয়ে হাই কোর্টের দেওয়া আদেশ বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনা হলে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেয়।

খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়রকে সাত দিনের মধ্যে এই প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে হবে।

একইসঙ্গে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শাহ আজিজুর রহমান’ মিলনায়তনের নাম প্রত্যাহার করার যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন হয়েছে কি না- এফিডেভিড আকারে তা জানাতে বলেছে আদালত।

আগামী ৯ নভেম্বর বিষয়টি শুনানির জন্য আদালতের তালিকায় আসবে বলে আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী জানান। 

মুসলিম লীগের নেতা খান-এ-সবুর পাকিস্তান আমলে ছিলেন আইয়ুব খানের মন্ত্রী। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দালাল আইনে বিচার শুরুর সময় প্রকাশিত ছয়শ স্বাধীনতাবিরোধী অপরাধীর তালিকাতেও তার নাম ছিল। সেই স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারের নামেই পরে যশোর রোডের নামকরণ করা হয়।

বাংলাদেশের খুলনা বিভাগ থেকে কলকাতার দমদম পর্যন্ত এই সড়ক ধরেই একাত্তরে লাখো মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল ভারতে। তাদের দুর্দশা দেখেই আমেরিকান কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ লেখেন তার বিখ্যাত কবিতা ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’, যা সে সময় বিশ্বকে নাড়া দেয়।

১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর এই সড়ক হয়েই বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ কলকাতা থেকে শত্রুমুক্ত যশোরে পৌঁছান। 

জিয়াউর রহমানের প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমানও ষাটের দশকে মুসলিম লীগ নেতা ছিলেন। স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার কারণে ১৯৭২ সালে তাকেও দালাল আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তার নামেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মিলনায়তনের নামকরণ হয়।

স্বাধীনতাবিরোধীদের নামে স্থাপনা, সড়ক, অবকাঠামোর নামকরণ স্থগিত চেয়ে ২০১২ সালে হাই কোর্টে একটি রিট করেন মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবীর। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ১৪ মে রুলসহ খান-এ সবুর ও শাহ আজিজুর রহমানের নাম ব্যবহার স্থগিতের অন্তর্বতীকালীন আদেশ দেয় হাই কোর্ট।

সেইসঙ্গে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের নামে থাকা সড়ক, স্থাপনা ও অবকাঠামোর নাম পরিবর্তনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, পরিবর্তনের পর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সেসবের নামকরণ কেন করা হবে না এবং যারা ওই নামকরণের জন্য দায়ী, তাদের কেন বিচারের আওতায় আনা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।

আদালতের ওই নির্দেশনা অনুসরণ করা হচ্ছে না জানিয়ে গত ২৫ অগাস্ট আরেকটি আবেদন করেন মুনতাসীর মামুন ও শাহরিয়ার কবির।

এরপর হাই কোর্ট যে আদেশ দেয়, তাতে ‘খান-এ-সবুর’ সড়কের নাম প্রত্যাহার করে আগের ‘যশোর রোড’ নামটি ব্যবহার করতে সিটি করপোরেশনের মেয়রকে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শাহ আজিজুর রহমান’ মিলনায়তনের নামও প্রত্যাহার করতে বলা হয়।

এরপর ১ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘সব খানে সবুর খানের ভক্ত?’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন রোববার আদালতের নজরে আনেন আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবী। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আদালতের নির্দেশনার পরও যুদ্ধাপরাধীদের নাম সরানোর কাজে দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে শুনানি করেই মঙ্গলবার সাত দিনের মধ্যে ‘যশোর রোড’ নামটি ফিরিয়ে আনার আদেশ দেয় আদালত।

আদালতে আবেদনকারীপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এ কে রাশেদুল হক। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার বি কে শাহরিয়ার আহমেদ।

পরে ব্যারিস্টার এ কে রাশেদুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী আদালতে বলেছেন, ২৭ অক্টোবর আগের আদেশের কপি পাওয়ায় তারা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেছেন। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে প্রতিবেদন দিতে পারেননি। আদালত তাকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন।”