ভোটের দিনের ছুটি নিয়ে দ্বন্দ্ব ইসিতে

সংসদ কিংবা স্থানীয় নির্বাচন- যে কোনো ভোটের দিন সাধারণ ছুটি থাকার এতদিনের নিয়ম বাদ দিতে চাইছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Oct 2015, 08:16 AM
Updated : 31 Oct 2015, 09:07 AM

কমিশনের সর্বশেষ সভায় ছুটির বিষয়টি আলোচ্যসূচিতে রাখা হয়েছিল। জ্যেষ্ঠ দুজন নির্বাচন কমিশনারের অনুপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও হয়।

পরবর্তী যে কোনো সভায় এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটি।

তবে ছুটি বাদ দেওয়ার এই পরিকল্পনাকে ‘আজগুবি’ বলে তা থেকে সরে আসার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা।

চার নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে তিন জন ছুটি বাদ দেওয়ার পক্ষে এবং একজনের বিপক্ষে মত রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রীতি কিংবা প্রথা মনে করে ভোটের দিন ছুটি রাখা হয়ে আসছে। এতে কখনও কখনও সরকারি দুদিনের ছুটির সঙ্গে মিলে তিন দিনের ছুটির সুযোগও তৈরি হয়। ছুটি না রাখলে তো কোনো অসুবিধা নেই।”

গত বৃহস্পতিবার কমিশন সভার জন্য প্রস্তুত করা কার্যপত্রে দেখা যায়, নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ ছুটি বাদ দেওয়ার প্রস্তাব উত্থাপনের পর নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী তাতে সমর্থন দেন।

নির্বাচন কমিশন

নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ আগের মতোই ছুটি বহাল রাখার পক্ষে মত জানান।

সংসদ ও স্থানীয় সরকারের সাধারণ নির্বাচন, শূন্য আসনের উপ-নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণার প্রচলন রয়েছে।

নির্বাচনী আইনে কোনো নির্দেশনা না থাকলেও সাধারণত নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে সাড়া দিয়েই ভোটের দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার।

সম্প্রতি এক নির্বাচনকে সামনে রেখে সাধারণ ছুটি ঘোষণার বিষয় ইসির অনুমোদন নিতে গিয়ে ‘বিপত্তি’ বাধে।

যুক্তরাজ্য নির্বাচন দেখে এসে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ ছুটির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার মতামত দেন এবং কমিশন সভায় উপস্থাপনে নথি প্রস্তুত করতে বলেন।

এই নির্বাচন কমিশনারের মত হচ্ছে- “আমরা যে কোনো নির্বাচনে সাধারণ ছুটি দিয়ে যাচ্ছি। যুক্তরাজ্যে দেখা গেল-পার্লামেন্টের সাধারণ নির্বাচনেও সাধারণ ছুটি দেয়া হয়নি। তারাও ভোটে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ক্লাব, অফিস ব্যবহার করে। আমরা যেসব প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করি শুধু সেসব প্রতিষ্ঠানই ছুটির আওতায় আসতে পারে।”

সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে প্রস্তাবটি সংশোধিত আকারে বিবেচনার অনুরোধ জানান আবু হাফিজ।

এ পরিপ্রেক্ষিতে ইসি সচিবালয় সাধারণ ছুটির কিছু সুবিধার দিক তুলে ধরে বলে কর্মকর্তারা জানান।

সাধারণ ছুটি থাকলে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভোট দিতে পারেন।

ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন সরকারি, আধা-সরকারি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের অনুপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট অফিসের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালানো সম্ভবপর হয় না। সেক্ষেত্রে অফিস খোলা রেখে স্বাভাবিক সেবাও দেওয়া সম্ভবপর না। নির্বাচনের কাজে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবহার হয় সেগুলো ভোটের দিন বন্ধ রাখতেই হয়।

এরপরই নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজের মতামতের বিপরীত অবস্থান নেন আরেক কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ।

“যুক্তরাজ্যের পরিস্থিতি, ভোটার বা ভোটের পরিবেশ এক নয়। ভোট কেন্দ্র ও অন্যান্য অফিস কাছাকাছি থাকে। ভোটের দিন অফিস খোলা থাকলে গোলমাল বা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটার সুযোগ থাকে,” নিজের মতের পক্ষে যুক্তি দেখান শাহনেওয়াজ।

এর বিপরীতে মাগুরা-১ আসনে সাম্প্রতিক উপ-নির্বাচনে ৩৩.৬০ শতাংশ ভোটার উপস্থিতির তথ্য তুলে ধরে কমিশনার জাবেদ আলী বলেন, ছুটিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এলাকা ছাড়তে উৎসাহিত হতে দেখা যায়। ছুটির এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

কমিশন সভার জন্যে প্রস্তত করা কার্যপত্রে দেখা যায়, ইসির উপ সচিব সামসুল আলম এই বিষয়ে গবেষণা তথ্য তুলে ধরেন।

এতে বলা হয়, ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, ঘানা ও নামিবিয়ায় ভোটের দিন সাধারণ ছুটি থাকে। শ্রীলঙ্কা ও যুক্তরাজ্যে সাধারণ ছুটি নেই।

সামসুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কমিশন সভার আলোচনার জন্যে দ্বিতীয় এজেন্ডা হিসেবে ছুটির বিষয়টি ছিল। তবে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ ও নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারকের অনুপস্থিতিতে তা নিয়ে আলোচনা হয়নি। পূর্ণাঙ্গ কমিশন বসলে পরবর্তী সভায় তা আবার উপস্থাপন করা হবে।”

ছুটি বাতিলে বর্তমান ইসির উদ্যোগের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাবেক সিইসি শামসুল হুদা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোটের ছুটি বাদ দেওয়া- এটা আজগুবি চিন্তা। আবহমান ধরে চলা ছুটি কেন বাদ দিতে হবে?

“ছুটি বাদ দিলে সাধারণ মানুষই এর বিরোধিতা করতে পারে। পরে মানুষের চাপেই তা বহাল রাখতে হতে পারে।”