নদী-জলাশয় সংরক্ষণের তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর

পরিবেশের সুরক্ষায় ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে নদীসহ জলাশয় সংরক্ষণের তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2015, 12:47 PM
Updated : 28 Oct 2015, 12:47 PM

মুন্সীগঞ্জে নদীর পানি ব্যবহার উপযোগী করার একটি শোধনাগারের ভিত্তি স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, “ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। পানির স্তর যত নেমে যাবে, ভূমিকম্পের সম্ভাবনাও তত বাড়বে।”

এ সময় বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার মধ্যে রয়েছে বলেও মনে করিয়ে দেন তিনি।

ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সেচের পানি জন্য দীঘি, পুকুর, জলাশয় ও খাল খননের ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে করে, বৃষ্টির পানি ধরে রাখার পাশাপাশি ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমে যাবে।”

‘পদ্মা (জশলদিয়া) পানি শোধনাগার’ প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৫০৮ কোটি টাকা।

এতে বাংলাদেশ সরকার এক হাজার ৭৩ কোটি টাকা, ঢাকা ওয়াসা ২২ কোটি টাকা এবং চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ সহায়তা হিসাবে দুই হাজার ৪১৩ কোটি টাকা দেবে।

বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী ঢাকার একটি পাঁচতারা হোটেল থেকে মুন্সীগঞ্জে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘পদ্মা (যশলদিয়া-পানি শোধনাগার নির্মাণ (ফেজ-১০)’ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করেন।

চায়না সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিডেট এই শোধনাগারটি নির্মাণ করবে।

এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ঢাকা নগরবাসী দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার অতিরিক্ত সুপেয় পানি পাবে।

বর্তমানে ঢাকার সুপেয় পানির ২২ শতাংশ পাওয়া যায় ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে। নতুন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ৮০ শতাংশ সুপেয় পানি পাওয়া যাবে।

বক্তব্যে পানির অপচয় কমিয়ে আনতে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “প্রতিদিন তো গাড়ি ধোয়ার দরকার নেই। পাইপ ছেড়ে গাড়ি ধুয়ে যাচ্ছে, তো ধুয়েই যাচ্ছে। এই পানি অনেক টাকা দিয়ে আমরা শোধন করছি।”

“আর পানির দাম বাড়াতে গেলে চিৎকার। খরচ কমান।”

ঢাকার চারদিকে নদীগুলোর অবস্থা ‘করুণ’ বলেও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “নদীর পাশে অবকাঠামোগুলো ঠিক মতো হয়নি। ড্রেজার এনেও ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না।

“বুড়িগঙ্গায় যে ড্রেনেজ গেছে, তা চিহ্নিত করে আমরা শোধনাগার নির্মাণ করে দেব, বর্জ্য যেন নদীতে না যায়। নদীকে রক্ষা করতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রী জানান, বিভাগ ও জেলার পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যন্ত সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের কার্যকর পদক্ষেপের জন্য গত ৫০ বছরের মধ্যে এই প্রথম পানি উৎপাদন ক্ষমতা ছাড়িয়ে গেছে। ২০০৯ সালে দৈনিক পানির চাহিদা ছিল দুইশ ১২ কোটি লিটার। ২০১৫ সালে দৈনিক দুইশ ২৫ কোটি লিটার চাহিদার বিপরীতে ওয়াসার উৎপাদন ক্ষমতা দাড়িয়েছে দুইশ ৪২ কোটি।”

সরকার ইতোমধ্যে পানি সরবরাহ এবং পয়ঃনিষ্কাশনের মহাপরিকল্পনা তৈরির কাজ শেষ করেছে। ড্রেনেজের জন্য মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ সরকার হাতে নিয়েছে।

পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থাসহ অত্যাবশ্যকীয় নাগরিক সুবিধা উন্নয়নে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “পানি সমস্যা সব সময়ই ছিল। আমরা এই সমস্যা সমাধানে যথাযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছি।”

তিনি জানান, ভবিষ্যৎ চাহিদার কথা মাথায় রেখে সরকার মেঘনার পানি ব্যবহার করে ধলপুর এলাকায় সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার ফেজ-৩ এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার চর গন্ধবপুর এলাকায় আরও একটি পানি সরবরাহ প্রকল্প নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া রাজধানীর পশ্চিমাঞ্চলে পানি সরবরাহের লক্ষে সাভারের তেঁতুলঝোড়া ভাকুর্তা এলাকায় ওয়েলফিল্ড নির্মাণ প্রকল্পের কাজ চলছে।

সরবরাহ করা পানির মূল্য ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে যথাযথভাবে আদায়ের তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “মিটার কমিয়ে কম বিল দেওয়ার চেষ্টা করবেন না; যা ব্যবহার করবেন, দামটা দিয়ে দেবেন।”

২০০৯ সালে ওয়াসার সিস্টেম লসের পরিমাণ ছিল শতকরা ৪০ ভাগ। বর্তমানে তা কমে শতকরা ২২ ভাগে নেমে এসেছে।

প্রযুক্তি এবং প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সিস্টেম লসের পরিমাণ আরও কমিয়ে আনার নির্দেশ দেন সরকার প্রধান।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার সচিব আবদুল মালেক, চীনের সংসদ সদস্য ও চায়না সিএএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট লু ইয়ান, বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত মা মিংকিয়াং এবং ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক টাসকিন এ খান।

পরে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের সাংসদদের সঙ্গেও কথা বলেন।