কাজ চলে যাচ্ছে, তাই বদলাচ্ছে না দুর্যোগের সঙ্কেত

ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিদ্যমান সতর্কীকরণ সঙ্কেত ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষ ‘অভ্যস্ত থাকায়’ থমকে আছে আধুনিকায়নের উদ্যোগ।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2015, 03:12 AM
Updated : 13 Oct 2015, 12:20 PM

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ও আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বিদ্যমান সতর্ক সঙ্কেত নৌ ও সমুদ্রবন্দরকে কেন্দ্র করে। মানুষের জন্য যুগোপযোগী ও সহজবোধ্য সঙ্কেত পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ থাকলেও এখন আর তা হচ্ছে না।

বর্তমানে সমুদ্রবন্দরের জন্য ১ থেকে ১০ নম্বর ও নৌবন্দরের জন্য ১ থেকে ৪ নম্বর সঙ্কেত রয়েছে।

২০০৯ সালে তৎকালীন খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় নৌ ও সমুদ্র বন্দরের জন্য ব্যবহৃত প্রচলিত মোট ১৫টি সঙ্কেত পুনর্বিন্যাস করে আটটিতে নামিয়ে আনে। পরের বছর ১ এপ্রিল থেকে নতুন সঙ্কেত ব্যবস্থা চালুরও প্রস্তাব করা হয়।

তখনকার মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছিলেন, প্রচলিত সতর্ক সঙ্কেতগুলো শুধু নৌ ও সমুদ্রবন্দরের জন্য। কিন্তু নতুন ব্যবস্থায় এসব সঙ্কেত জনকল্যাণে ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে।

মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসের আগে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নতুন সঙ্কেত আপাতত চালু করা হচ্ছে না।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. শাহ আলম সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্বে এখন আর কোথাও পোর্টভিত্তিক সিগন্যাল পদ্ধতি নেই। ঊপকূলীয় স্থানভিত্তিক জনগণের সুবিধা অনুযায়ী এ সঙ্কেত থাকা ভালো। অন্তত তিনটি সিগন্যাল বাদ দেওয়ার কথা হয়েছিল। এখন সে উদ্যোগ থেমে গেছে।”

সতর্কীকরণ পদ্ধতির পুনর্বিন্যাস না হলেও বিদ্যমান ব্যবস্থা সরকার ও মানুষের কাছে বেশি পরিচিত থাকায় দুর্যোগ মোকাবেলায় ‘কোনো অসুবিধা হচ্ছে না’ বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

শাহ আলম বলেন, “বিদ্যমান পদ্ধতি বন্দরের জন্য হলেও সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের জন্য তা সহজ এবং জনগণও অভ্যস্ত। কোনো সিগন্যাল দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসন লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছে।”

এখন নতুন পদ্ধতি চালু করলে তাতে সবাইকে অভ্যস্ত করতে গিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক। 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে নতুন সিগন্যাল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আর বেশি দূর এগোয়নি। কারণ, বিদ্যমান ব্যবস্থায় ভালো ফল পাচ্ছি আমরা।”

গত জুলাইয়ে ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি জানান, এ ঘূর্ণিঝড়ে সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে একজনের মৃত্যু হয়েছে। সে সময় মাত্র দুই ঘণ্টার নোটিসে ২৩ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

“নতুন কিছু চালু করলে বিভ্রান্তি বাড়বে। আমাদের সিগন্যালগুলো শুনলে মানুষ বুঝতে পারে বিপদ কতটুকু, সঙ্গে প্রশাসনও উদ্যোগী হয়। সেজন্যে নতুন কিছু আর হবে না মনে হয়।”

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা বেশ সফল। দুর্যোগের আগাম বার্তা জানানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে কোনো মোবাইল থেকে ১০৯৪১ তে ডায়াল করে সব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান সিগন্যাল ব্যবস্থাকেই এগিয়ে নিতে হবে।”

আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও মানুষকে সঙ্গে নিয়ে দুর্যোগ মোকাবেলায় সাধারণ নাগরিকের খাপ খাইয়ে নেওয়ার গুণের কথাও বলেন তিনি।

“আমরা অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ। প্রায়ই ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা ধরনের দুর্যোগ আসছে। এখন আর আগের মতো প্রাণ ও সম্পদহানি ঘটে না। ভালো ব্যবস্থাপনার কারণেই এটা হচ্ছে।”