‘না’ ভোট ফেরাতে চান নির্বাচনী কর্মকর্তারা

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের জন্য মাঠ কর্মকর্তাদের কাছে মতামত চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন, তাতে ফের ‘না’ ভোট চালু করাসহ বেশ কিছু প্রস্তাব এসেছে ইসির হাতে।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2015, 04:35 AM
Updated : 12 Oct 2015, 01:11 PM

ফখরুদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সংশোধিত নির্বাচনী আইনে নবম সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ‘না ভোট’ দেয়ার সুযোগ পান বাংলাদেশের ভোটাররা।

ওই নিয়মে প্রার্থী পছন্দ না হলে একজন ভোটার ব্যালট পেপারে 'উপরের কাহাকেও নহে' লেখা একটা ঘরে সিল দিতে পারতেন। কোনো আসনে 'না' ভোটের সংখ্যা বাক্সে পড়া মোট ভোটের অর্ধেক বা তার বেশি হলে নতুন করে ভোট আয়োজনেরও বিধান ছিল।

নবম সংসদের পর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করা হলে তাতে ‘না’ ভোটের বিধান বাদ পড়ে।

কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন গত ১০ জুন আরপিও সংশোধনের বিষয়ে ইসি সচিবালয়, বিভাগীয় আঞ্চলিক কার্যালয় এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তার কাছে মতামত চেয়ে চিঠি দেয়।

সে অনুযায়ী নির্বাচন কর্মকর্তারা আরপিও’র বিভিন্ন ধারায় সংশোধনের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। প্রস্তাব পাঠাতে দুই সপ্তাহ সময় দেওয়া হলেও সেই সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও বেশ কিছু প্রস্তাব এসেছে।

ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে  বলেন, “অনেকে পর্যালোচনা করে ভেবেচিন্তে প্রস্তাব পাঠাচ্ছেন। সবার প্রস্তাব একীভূত হওয়ার পর রাজনৈতিক দল সম্পৃক্ত কিছু পেলে ইসি দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করার কথা ভাবতে পারে।”

ইসি কর্মকর্তারা জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় ‘সশস্ত্র বাহিনী’ ফিরিয়ে আনা, একাধিক প্রার্থী সমান ভোট পেলে ‘লটারির নিয়ম’ বাদ দিয়ে নতুন করে ভোটাভুটির বিধান করা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনের তালিকা দেওয়ার বিধান বাদ দেওয়ারও সুপারিশ এসেছে।

ইসির উপ সচিব আবদুল অদুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেহেতু ইসি এ সুযোগ দিয়েছে কর্মকর্তাদের, সেক্ষেত্রে আগামীতে প্রস্তাব পাঠালেও তা বিবেচনা করতে পারে। শিগগিরই আমরা সব প্রস্তাব সমন্বয় করে বিবেচনার জন্যে কমিশনে উপস্থাপন করব।”

খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মজিবুর রহমান তার প্রস্তাবে ‘না’ ভোট চালু করতে বলেছেন। কোনো নির্বাচনী আসনে ৫০ শতাংশ ভোট না পড়লে পুনরায় ভোট করার সুপারিশ রেখেছেন তিনি।

‘না’ ভোট চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন সিলেটের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এজহারুল হকও। নির্বাচনী ব্যয়ের রিটার্ন প্রার্থীরা যথাসময়ে না দিলে কঠোর হওয়ার পক্ষে তার মত।

দুই বা ততোধিক প্রার্থী সমান ভোট পেলে বিদ্যমান লটারি প্রথা বাদ দিয়ে পুনঃভোটের প্রস্তাব দিয়েছেন রাজশাহীর নির্বাচন কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার। সেই সঙ্গে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সংজ্ঞায় অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কেও অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব তার।

এক সময় ভোটের নিরাপত্তার দায়িত্বে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীও ছিল। পরে আইন সংশোধনে তা বাদ পড়ে।

আর স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে সমান ভোট পাওয়ার ক্ষেত্রে নতুন করে ভোটের বিধান থাকলেও সংসদ নির্বাচনে এখনো লটারি পদ্ধতি বহাল।

ভোলার নির্বাচন কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনের বিধান বাদ দেওয়ার পক্ষে।

এখন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হলেও তা বদলে সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৩টা করার সুপারিশ করেছেন এই কর্মকর্তা।

জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মইনুদ্দিন খান অনলাইনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার সুযোগ চান। তার প্রস্তাব, দেশের ভেতরে যে কোনো প্রার্থী যাতে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন সেই সুযোগ আরপিওতে রাখা যেতে পারে।

খাগড়াছড়ির জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তার প্রস্তাবে বলেছেন, জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি সংশোধন করা যেতে পারে। বর্তমানে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছে কমিশন।

১৯৭২ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ প্রণয়নের পর এ পর্যন্ত ১১ বার সংশোধনী এসেছে। এর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন অনুচ্ছেদে অন্তত ২০৯টি বিষয়ে সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে।

২০০৭ সালে এটিএম শামসুল হুদার ইসি সংলাপ করে আইন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। নবম সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত তারা কয়েকবার সংলাপও করে। তবে দশম সংসদ নির্বাচনের আগে কাজী রকিবের কমিশন আর সংলাপ করতে পারেনি।

বর্তমানে ইসির নিবন্ধিত দল রয়েছে ৪০টি। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের মতামত না নিয়েই বর্তমান ইসি এর আগে একদফা আরপিও সংশোধন করেছে।