বন্যপ্রাণী হত্যা, পাচারের তথ্য দিলে পুরস্কার

বন্যপ্রাণী হত্যা, পাচার, চামড়া, হাড় বা দাঁত সংগ্রহ বা পাচারের তথ্য দিলে চার থেকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণায় বিধিমালা করতে যাচ্ছে সরকার।    

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2015, 12:40 PM
Updated : 2 Oct 2015, 03:32 PM

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও তাদের রক্ষায় জনসচেতনতা তৈরির জন্যেই এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”

তিনি জানান, বিদ্যমান আইনের আলোকে এ সংক্রান্ত বিধিমালা তৈরির পর তা আইন মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাইয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। সরকারের অনুমোদন পেলেই পুরস্কারের অংক ঘোষণা করে বিধিমালার গেজেট প্রকাশ করা হবে।

সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও তথ্যদাতাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়ে আরও সজাগ হওয়ার তাগিদে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সুন্দরবনসহ দেশের বিভিন্ন বনাঞ্চলে চামড়ার জন্য বাঘ ও হরিণ শিকার, হরিণের মাংস বিক্রি, শিং ও চামড়া পাচার ও বিক্রির অভিযোগ প্রায়ই সংবাদ মাধ্যমে আসছে। পোচার ও পাচারকারীরা আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে ধরাও পড়ছে।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় গত ৬ সেপ্টেম্বর ‘বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধ উদঘাটনে তথ্য প্রদানকারীকে পুরস্কার প্রদান বিধিমালা-২০১৫’ এর একটি খসড়া প্রকাশ করেছে। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের আলোকে এই বিধিমালা চূড়ান্ত করতে সংশ্লিষ্ট ১১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামতও চাওয়া হয়েছে।

প্রস্তাবিত বিধিমালায় বলা হয়েছে, বনাঞ্চলের ভেতরে ওই আইন লঙ্ঘনের তথ্যের জন্য ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।

এর মধ্যে বাঘের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা, হাতি ও কুমিরের ক্ষেত্রে ৩০ হাজার টাকা, হরিণ ২০ হাজার টাকা, কচ্ছপ ও সাপ ১৫ হাজার টাকা এবং পাখি ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর বিষয়ে তথ্যদাতাদের ১০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

বনাঞ্চলের বাইরে এ ধরনের অপরাধের তথ্য দিলে ৮ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত বিধিমালায়।

আসামি ছাড়া অপরাধ উদঘাটনের তথ্যের জন্য ক্ষেত্র অনুযায়ী ৪ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পুরস্কারের সুযোগ রাখার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবে। 

তথ্যের ভিত্তিতে বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধ সম্ভব হলেই তথ্যদাতা পুরস্কৃত হবেন। ঝুঁকি এড়াতে তার পরিচয় গোপন রাখবে সরকার। তথ্যদাতা তিন মাসের মধ্যে পুরস্কার সংগ্রহ করতে না পারলে তা সরকারের কাছে ফিরিয়ে দেবে বন অধিদপ্তর।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কাজ করেন এমন একজন বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাঘের চামড়া পাচারকারীকে ধরিয়ে দিয়ে খুলনার একজন এখন নিজেই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।

“টাকা এখানে মুখ্য নয়। র‌্যাব তাদের ইনফরমারকে তো ওপেন টাকা দেয় না, নিজেদের মতো করে দিচ্ছে। কিন্তু যে তথ্য দেবে, তার পরিচয়  প্রকাশ করা হলে তাকে জীবন ঝুঁকিতে ফেলা হবে। ঘোষণা দিয়ে পুরস্কার দেওয়ার বিপদ অনেক।”

সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেভাবে অপরাধের তথ্যপ্রদানকারীকে প্রকাশ্যে পুরস্কৃত করে, তার বদলে বিকল্পভাবে অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বন্যপ্রাণী পাচার ও এ সংক্রান্ত অপরাধে বাংলাদেশ এখন দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে। তা প্রতিরোধে সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে সমন্বিত কার্যক্রম নেওয়া দরকার।”

ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী অধ্যাপক আনোয়ারুল পুরস্কার ঘোষণার বিধিমালার বিষয়ে বলেন, “বিষয়টি স্পর্শকাতর। সকলের সঙ্গে আলোচনা করে তথ্য প্রদানকারীর সুরক্ষা নিশ্চিত হয় এমনভাবে বিধিমালা চূড়ান্ত করা উচিৎ।”

বন অধিদপ্তরের বন সংরক্ষক তপন কুমার দে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবিষয়ে সবার মতামত নেওয়া হচ্ছে। সার্বিক বিষয় আইনের আওতায় আনতেই বিধিমালা হচ্ছে।”

এ বিধিমালা জারি হলে ২০১৩ সালের ‘বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধ উদঘাটনে তথ্য প্রদানকারীকে পুরস্কার বা পদক নীতিমালা’ স্বয়ংক্রিয়ভাবে রহিত হবে বলে জানান তিনি।

এ বছর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন’ পদক পেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এছাড়া তিনটি ক্যাটাগরিতে আরও দুই ব্যক্তি এবং একটি প্রতিষ্ঠানকে এই পুরস্কার দিয়েছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়।