২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ের অবসান: হাসিনা

বাংলাদেশে ২০৪১ সালের আগেই বাল্যবিয়ের অবসান ঘটানোর অঙ্গীকারের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইতোমধ্যে স্কুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে গেছে।

লাবলু আনসার, নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2015, 06:19 AM
Updated : 26 Sept 2015, 11:03 AM

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে এক অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তৃতায় নারীর অগ্রগতি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তিনি তুলে ধরেন। 

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের সমাজে বাল্যবিয়ের অবসান হবে। এরই মধ্যে আমরা বেশ কিছু কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছি, যার মাধ্যমে এই লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।”

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় স্কুলে ছেলে-মেয়ে সমতার যে লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল- বাংলাদেশ তা অর্জন করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই অর্জনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে এমন কোনো কিছুকেই আমরা কোনো সুযোগ দেব না।”

জাতিসংঘ অধিবেশন উপলক্ষে নিউ ইয়র্কে অবস্থানরত শেখ হাসিনা শুক্রবার সন্ধ্যা কাটান কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্ড লিডারস ফোরামে ‘গার্লস লিড দ্য ওয়ে’ শীর্ষক বক্তৃতার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।  

এক ছাত্রীর প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বাল্যবিয়ের প্রবণতা রোধ করতে চায়। এ লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ উন্নত দেশগুলোর রীতি পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ নারীর বিয়ে হয় ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে।

যোগ্য ও পছন্দসই পাত্র ‘হাতছাড়া’ না করতে অভিভাবকরা ১৮ বছর বয়সের আগেই মেয়েদের বিয়ে দেন বলে সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

বাংলাদেশের আইনে ছেলের বয়স ২১ ও মেয়ের বয়স ১৮ বছরের কম হলে তা ‘বাল্যবিয়ে’ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য করা হয়।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রধানমন্ত্রী জানান, তার সরকার এ আইন সংশোধন করে সময়োপযোগী করার উদ্যোগ নিয়েছে।

তিনি বলেন, “সব বাধা-বিপত্তি ভেঙে মেয়েরা জাতি গঠনের পথে এগিয়ে যাবে, সেটাই আমার শান্তি আর উন্নয়ন চিন্তার অন্যতম ভিত্তি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে মেয়েদের অগ্রগতি এখনও অসম পর্যায়ে রয়েছে। সংঘাতময় এলাকাগুলোতে মেয়েরা অনেক পিছিয়ে। বিশ্বের ৬ কোটি শিশু এখনও স্কুলে যেতে পারছে না, যাদের অধিকাংশই মেয়ে। তবে বাংলাদেশে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এখন বেশি স্কুলে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের সংসদে স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতার আসনে নারীদের দায়িত্ব পালনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি গণতান্ত্রিক বিশ্বে একটি ‘বিরল’ ঘটনা।

শিশু শ্রম বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের নানা উদ্যোগের কথাও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষার প্রতি শিশুদের আগ্রহী করতে ‘ইনসেনটিভের’ ব্যবস্থা করা হয়েছে। গরিব পরিবারের মা-বাবাকেও তাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর জন্যে নানাভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ‘সন্তোষজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে’ বলেও তিনি দাবি করেন।

ঢাকায় চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড নিয়ে এক শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন।

উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, অভিজিতের ঘাতকদের সনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তার সরকার ‘যথাযথ’ পদক্ষেপ নিয়েছে। 

তিনি বলেন, “ভুলে গেলে চলবে না যে, একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গোটা ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশের অবকাশ থাকতে পারে না।”

প্রধানমন্ত্রী তথ্য-প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতির তথ্য শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শেখ হাসিনার পরিচয় করিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট লী সি. বোলিঙ্গার, যিনি নিজেই অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

পাঁচ শতাধিক আসনের এই মিলনায়তনে উপস্থিত শ্রোতাদের অধিকাংশই ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অনুষ্ঠান শেষে ৩৫-৪০ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তোলেন। এ সময় কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সেলফিও তোলেন।

এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় দর্শক সারি থেকে উঠে এলে ছাত্র-ছাত্রীরা তার সঙ্গেও নানা বিষয়ে কথা বলেন।

শেখ হাসিনা এই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কৃতিত্বের সাথে উচ্চ শিক্ষা শেষ করে বাংলাদেশে ফিরে আসার আহ্বান জানান।