দিনভর যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী

ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আটকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে দিনভর যানজটে নাকাল হয়েছে রাজধানীবাসী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2015, 03:36 PM
Updated : 11 Sept 2015, 03:56 AM

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রামপুরা, ধানমন্ডি, গুলশান ও বসুন্ধরার ফটকে বিক্ষোভ শুরু হলে নগরজোড়া ভোগান্তির সূচনা হয়। বেলা ২টার দিকে মহাখালী থেকে পুরো বিমানবন্দর সড়ক যানজটে স্থবির হয়ে থাকতে দেখা যায়। 

কোথাও সংঘর্ষ বা ভাংচুরের খবর পাওয়া না গেলেও যানজটের কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে। বহু মানুষকে ভরদুপুরে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয় পায়ে হেঁটে।     

ঘরে ফেরার সময়ও পড়তে হয় অসহনীয় যানজটে। দুপুরের পর থেকে রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল কার্যত অচল হয়ে পড়ে। শাপলা চত্বর থেকে দৈনিক বাংলা, ইত্তেফাক মোড় ও আরামবাগ সড়কে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়।

বিকাল থেকে ফার্মগেইট, সাত রাস্তা, বিজয় সরণি মোড়, নিউ মার্কেট-মিরপুর সড়কেও দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়।

যানজটের এই চিত্র বাংলামোটর থেকে তোলা।

তীব্র যানজটে গাড়ি চলছে না, আবার পেলে ওঠার উপায়ও নেই। তাই হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে মানুষ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক শেখ আব্দুল্লাহ জানান, মতিঝিল এলাকায় যানজট দেখে অনেকেই নির্ধারিত সময়ের আগে অফিস থেকে বেরিয়ে পড়েন। গাড়িতে না উঠে হেঁটেই বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন অনেকে।

যাত্রীদের অনেককেও এসময় বাস থেকে নেমে যেতে দেখা যায়। আবার অনেকে রিকশা ছেড়ে দিয়ে হাঁটা শুরু করেন। কিছু কিছু জায়গায় ফুটপাথে মানুষের সংখ্যা এত বেড়ে যায় যে অনেকে মূল সড়কে নেমে দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনের ফাঁক গলে এগিয়ে যান।

বিকাল থেকে সাত রাস্তার মোড় থেকে মহাখালী পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন যানজট দেখা যায় সন্ধ্যা পর্যন্ত। সাত রাস্তার মোড়ে মটরসাইকেল নিয়ে ৪০ মিনিট অপেক্ষার পর বেগুনবাড়ি-নিকুঞ্জ হয়ে মহাখালীর অফিসে পৌঁছান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদক আবদুর রহিম হারমাছি।

তিনি বলেন, বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিট থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত সাত রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থেকেও মহাখালীর দিকে এগোতে না পেরে বিকল্প পথ হাতিরঝিলে যান তিনি।

এ সময় মগবাজার, মালিবাগ, মহাখালী এলাকায় বিভিন্ন যানবাহনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। মহাখালী থেকে মগবাজারমুখী যানবাহনগুলো আশপাশের গলিপথ ধরে সামনে এগোনোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এতে করে সংযোগ সড়কগুলোতেও যানজট ছড়িয়ে পড়ে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সহ-সম্পাদক শামীমা নাসরিন লাকী জানান, মহাখালী আসার জন্য বিকাল ৪টার দিকে কারওয়ানবাজার সিগন্যাল থেকে ৬ নম্বর বাসে ওঠেন তিনি। যানজটের কারণে নিয়মিত চলাচলের রুট ফার্মগেইটের দিকে না গিয়ে কারওয়ানবাজার থেকে সাতরাস্তার পথ ধরে বাসটি। পৌনে এক ঘণ্টার মত সময় নিয়ে সাতরাস্তায় পৌঁছানোর পর আধা ঘণ্টায়ও গাড়ি না চলায় হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তিনি।

রোগী নিয়ে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা।

মহাখালীর ওয়্যারলেস গেট এলাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করলে পুলিশ  গুলশান-১ নম্বর থেকে এ পথে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়।

বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একই পরিস্থিতি দেখা গেছে মিরপুর-গাবতলী থেকে মহাখালীমুখী সড়কে। আগারগাঁও থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়মুখী সংযোগ সড়কে ঘণ্টারও বেশি সময় যানজটে আটকে থাকতে হয় যাত্রীদের।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মঈনুল হক চৌধুরী জানান, এ সময় অনেককেই গাড়ি ছেড়ে ফুটপাথ দিয়ে হাঁটতে দেখা যায়; পথে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদেরও নেমে আসার আহ্বান জানান অনেকে।

ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর সিগন্যালে সড়কে বসে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করায় বেলা ১১টা থেকে ওই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

মহাখালী উড়াল সেতুর একপাশ যানবাহনে ঠাসা, অন্যপাশ ফাঁকা।

সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাপা প্লাজার সামনে থেকে আলোকচিত্রী তানভীর আহমেদ জানান, শিক্ষার্থীরা সড়কে বসে থাকায় ২৭ নম্বর থেকে তিন দিকের সড়কেই যানজটের সৃষ্টি হয়। অবরোধ শুরুর পরপর গণপরিবহনগুলো থেকে যাত্রীরা নেমে নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে চলে যান। প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য পরিবহনগুলো ফাঁকা সড়কে বসে থাকে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’র ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রতিবাদে গত কয়েক মাস ধরেই আন্দোলন চালিয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা।

বুধবার রামপুরায় ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির মধ্যে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে এর প্রতিবাদে এবং ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাস্তায় নামে আন্দোলনকারীরা।

তারা উত্তরা, প্রগতি সরণির বসুন্ধরা আবাসিক গেইট ও রামপুরা এলাকা, মহাখালীর ওয়্যারলেস গেইট এবং ধানমণ্ডি-২৭ নম্বর এলাকা ও আশুলিয়ায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকায় শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে বিমানবন্দরমুখী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একই অবস্থা চলে বাড্ডামুখী প্রগতি সরণিতে।

এতে এসব অংশে যানজটের সৃষ্টি হয়; অন্যদিকে উত্তরা থেকে ফার্মগেটমুখী সড়কে দেখা দেয় যানবাহন সঙ্কট।

বেলা ১১টার পর মহাখালীর ওয়ারলেস গেট এলাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে গুলশান-১ নম্বর থেকে আমতলী মোড়ের দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এতে বাড্ডা থেকে গুলশানমুখী সড়কে, গুলশান-২ থেকে গুলশান-১ এর আশেপাশের সড়কে এবং মহাখালীর আমতলি ও রেলগেইট এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

যানবাহন না পেয়ে গুলশান-১ নম্বর এলাকায় দাঁড়িয়ে যাত্রীরা।

রামপুরার আফতাবনগরে ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে প্রগতি সরণির মেরুল বাড্ডা এবং রামপুরা ডিআইটি রোডে যানজট দেখা যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে আটকে থেকে যাত্রী ও পথচারীদের ভোগান্তি চরমে ওঠে।

এ সময় বিমানবন্দর সড়কের খিলক্ষেত, কুড়িল বিশ্বরোড, এমইএস ও কাকলীতে শত শত মানুষকে গাড়ির প্রতীক্ষায় থাকতে দেখা যায়। অনেকে হেঁটেই গন্তব্যে রওয়ানা দেন।

বিশ্বরোড মোড় এলাকায় গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থাকা এক যাত্রী দুপুর ১২টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি প্রায় এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করেও গাড়ি পাননি।

এক পর্যায়ে উত্তরামুখী কিছু কিছু গাড়ি বিমানবন্দর থেকে ঘুরে মহাখালীমুখী পথে রওনা হলে হুড়োহুড়ি করে সেসব গাড়িতে ওঠার চেষ্টা করতে দেখা যায় অনেককে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের কারণে মহাখালীমুখী যানবাহন বন্ধ করে দেওয়ায় গুলশান-১ নম্বর থেকে হেঁটেই রওয়ানা হন অনেকে।

ফারুক আহমেদ নামে এক যাত্রী উত্তরার হাউজবিল্ডিং থেকে হেঁটে বিমানবন্দর আসেন এবং সেখানে ইউটার্ন নেওয়া এক গাড়িতে উঠে শহরের দিকে যাত্রা করেন।

ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাউজ বিল্ডিংয়ে রাস্তা আটকে থাকায়  ঝামেলা হচ্ছে। মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।”

প্রগতি সরণির বসুন্ধরা আবাসিক গেইট এলাকায় নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে কোকাকোলা মোড় থেকে নর্দ্দা মোড় পর্যন্ত এবং বিপরীত মুখী পথে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বসুন্ধরা মোড় পর্যন্ত সড়কে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে। প্রগতি সরণিতে নামতে না পেরে কুড়িল ফ্লাইওভারের দুটি অংশে যানজট দেখা দেয়।

ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে মিরপুর সড়কেও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়।

দিনভর এই ভোগান্তির কারণে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।