বিক্ষোভে অচল ঢাকায় চরম ভোগান্তি

ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আটকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে রাজধানীজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক যানজট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2015, 10:38 AM
Updated : 10 Sept 2015, 01:18 PM

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রামপুরা, ধানমন্ডি, গুলশান ও বসুন্ধরার ফটকে বিক্ষোভ শুরু হলে নগরজোড়া ভোগান্তির সূচনা হয়। বেলা ২টার দিকে মহাখালী থেকে পুরো বিমানবন্দর সড়ক যানজটে স্থবির হয়ে থাকতে দেখা যায়। 

কোথাও সংঘর্ষ বা ভাংচুরের খবর পাওয়া না গেলেও যানজটের কারনে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়তে হয় নগরবাসীকে। বহু মানুষকে ভরদুপুরে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয় পায়ে হেঁটে।     

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি’র ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রতিবাদে গত কয়েক মাস ধরেই আন্দোলন চালিয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা।

বুধবার রামপুরায় ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির মধ্যে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে এর প্রতিবাদে এবং ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাস্তায় নামে আন্দোলনকারীরা।

ভ্যাট প্রত্যাহার দাবিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করায় অনেকে রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে রওনা হন

তারা উত্তরা, প্রগতি সরণির বসুন্ধরা আবাসিক গেইট ও রামপুরা এলাকা, মহাখালীর ওয়্যারলেস গেইট এবং ধানমণ্ডি-২৭ নম্বর এলাকা ও আশুলিয়ায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

উত্তরার হাউজ বিল্ডিং এলাকায় শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে বিমানবন্দরমুখী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। একই অবস্থা চলে বাড্ডামুখী প্রগতি সরণিতে।

এতে এসব অংশে যানজটের সৃষ্টি হয়; অন্যদিকে উত্তরা থেকে ফার্মগেটমুখী সড়কে দেখা দেয় যানবাহন সঙ্কট।

বেলা ১১টার পর মহাখালীর ওয়ারলেস গেট এলাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে গুলশান-১ নম্বর থেকে আমতলী মোড়ের দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এতে বাড্ডা থেকে গুলশানমুখী সড়কে, গুলশান-২ থেকে গুলশান-১ এর আশেপাশের সড়কে এবং মহাখালীর আমতলি ও রেলগেইট এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

যানবাহন না পেয়ে গুলশান-১ নম্বর এলাকায় অপেক্ষমান যাত্রীরা

রামপুরার আফতাবনগরে ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে প্রগতি সরণির মেরুল বাড্ডা এবং রামপুরা ডিআইটি রোডে যানজট দেখা যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে আটকে থেকে যাত্রী ও পথচারীদের ভোগান্তি চরমে ওঠে।

এ সময় বিমানবন্দর সড়কের খিলক্ষেত, কুড়িল বিশ্বরোড, এমইএস ও কাকলীতে শত শত মানুষকে গাড়ির প্রতীক্ষায় থাকতে দেখা যায়। অনেকে হেঁটেই গন্তব্যে রওয়ানা দেন।

বিশ্বরোড মোড় এলাকায় গাড়ির জন্য অপেক্ষমাণ এক যাত্রী দুপুর ১২টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি প্রায় এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করেও গাড়ি পাননি।

এক পর্যায়ে উত্তরামুখী কিছু কিছু গাড়ি বিমানবন্দর থেকে ঘুরে মহাখালীমুখী পথে রওনা হলে হুড়োহুড়ি করে সেসব গাড়িতে ওঠার চেষ্টা কর দেখা যায় অনেককে।

ফারুক আহমেদ নামে এক যাত্রী উত্তরার হাউজবিল্ডিং থেকে হেঁটে বিমানবন্দর আসেন এবং সেখানে ইউটার্ন নেওয়া এক গাড়িতে উঠে শহরের দিকে যাত্রা করেন।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের কারণে মহাখালীমুখী যানবাহন বন্ধ করে দেওয়ায় গুলশান-১ নম্বর থেকে হেঁটেই রওয়ানা হন অনেকে

ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাউজ বিল্ডিংয়ে রাস্তা আটকে থাকায়  ঝামেলা হচ্ছে। মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই।”

প্রগতি সরণির বসুন্ধরা আবাসিক গেইট এলাকায় নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে কোকাকোলা মোড় থেকে নর্দ্দা মোড় পর্যন্ত এবং বিপরীত মুখী পথে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বসুন্ধরা মোড় পর্যন্ত সড়কে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়ে। প্রগতি সরণিতে নামতে না পেরে কুড়িল ফ্লাইওভারের দুটি অংশে যানজট দেখা দেয়।

ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে কারণে মিরপুর সড়কেও দেখা যায় একই পরিস্থিতি।

নিউ মার্কেট থেকে উত্তরার যাত্রী ফারজানা চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোবহানবাগে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে মিরপুর রোডে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে।”

এই ভোগান্তির কারণে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অনেকে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।