পদ হারিয়ে ব্যাংক এমডির অপপ্রচার: প্রধানমন্ত্রী

গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ইউনূসের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মামলায় একটি ব্যাংকের সামান্য এমডি পদ হারিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সমানে অপপ্রচার চালিয়েছেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Sept 2015, 02:32 PM
Updated : 25 Jan 2017, 02:34 PM

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি সুবিধা ফিরে না পাওয়ার পিছনে ‘অন্য কোনো পরাশক্তির’ ইন্ধন আছে কি না- এক সংসদ সদস্যের এ প্রশ্নের জবাবে বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।

তিনি বলেন, “কোনো পরাশক্তি নয়, বরং কিছু অপশক্তি; দেশের বাইরের নয়, বরং দেশের অভ্যন্তরের তাদের কারো কারো ব্যক্তি স্বার্থে আঘাত লাগায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তারা অপপ্রচার চালায়। আর অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এই বাংলাদেশে যিনি এক সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। অবশ্য এখন এ ধরনের কোনো পদে নেই কিন্তু একটি দলের নেতা।

“সেই দলের নেতা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে চিঠি দিয়ে জিএসপি যাতে বন্ধ হয় তার আবেদন করেছিলেন। তিনি ওয়াশিংটনের কোনো এক অখ্যাত পত্রিকায় একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছিলেন, যাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।”

শেখ হাসিনা বলেন, “বিএনপি-জামায়াত আর ব্যাংকের এমডি মিলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অনেক চেষ্টা ও অপকর্ম করেছে কিন্তু অগ্রযাত্রা বন্ধ করতে পারেনি। অহেতুক বিনা কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণ বন্ধ করতে চেয়েছিল।

“কিন্তু তারা সেতু নির্মাণ ঠেকাতে পারেনি, আমরা নিজেরাই এই সেতু নির্মাণ করছি।”

কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, “কোনো কোনো ব্যক্তি হয়তো একটি পদের জন্য। একটি ব্যাংকের সামান্য এমডি পদটি মামলা করে হারনোর পরে তিনি এতই ক্ষিপ্ত হয়ে যান যে সেখানে সরকারের বিরুদ্ধে সমানে অপপ্রচার চালান।”

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের ফাঁস হওয়া ই-মেইলে মুহাম্মদ ইউনূসের মেইলও পাওয়া গেছে, যাতে গ্রামীণ ব্যাংকে পদ ফিরে পেতে হিলারির হস্তক্ষেপ কামনা করতে দেখা গেছে তাকে।

যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগের খবরের প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশের স্বাধীনতা বিরোধিতাকারী হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর দোসর জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপি অর্থ দিয়ে লবিস্ট রেখে বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার পরিচালিত করছে। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে বিএনপি-জামায়াত উঠে পড়ে লেগেছে।

“কথায় বলে, ঘরের শত্রু বিভীষণ। কোনো পরাশক্তি নয়, ঘরের শত্রু বিভীষণ অপশক্তি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। রায়ও কার্যকর করেছি।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর থেকে বিরত থেকে বিদেশ থেকে ফোন পাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “অনেক বড় বড় হোমড়া চোমড়ারাও টেলিফোন করেছিল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় যেন কার্যকর না হয়। ‍ভালো কাজে তাদের কোনো ফোন না পেলেও এ কাজে ফোন পেয়েছি, কথাও বলেছি।”

তবে যেখানেই যত ষড়যন্ত্র হোক, যত বাধাই আসুক না কেন একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে অনড় অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি জাতির পিতার কন্যা। আপনজন সবই হারিয়েছি। সব হারিয়ে ‍শুধু বাংলাদেশের ‍মানুষের জন্য আমরা রাজনীতি।

“বিচার আমরা বাংলার মাটিতে করেছি। ওই বিচার চলবে এবং চলতে থাকবে, তাতে যা ই আসুক না কেন আমি জীবনের মায়া করি না। জীবনের পরোয়া করে আমি চলি না। জীবনকে চ্যালেঞ্জ রেখেই বাংলার মাটিতে রাজনীতি করে যাচ্ছি।”

‘দালালদের  কোনো দেশপ্রেম ও কর্তব্যবোধ নেই’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “কেবল লুটপাট, দুর্নীতি, মানুষ খুন, ষড়যন্ত্র করা- এর সাথে জড়িত তারা বাংলাদেশের বহু ক্ষতি করেছে। ইনশায়াল্লাহ তারা ভবিষ্যতে আর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। কারণ বাংলাদেশের জনগণ এখন সচেতন।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ষড়যন্ত্রকারী যারা অবশ্যই তাদের বিচারও বাংলার মাটিতে হবে।”

জিএসপি নিয়ে আলোচনায় আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বৃদ্ধির কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের এটা মনে রাখা দরকার। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ ছিল মাত্র ২৫ মিলিয়ন ডলার। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পর সেটা ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়।

“এখন ২ বিলিয়নের মত তাদের বিনিয়োগ এখানে রয়েছে। আমরাই তাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছি।”

জিএসপি সুবিধা না পাওয়ায় তৈরি পোশাক খাতে তেমন প্রভাব পড়ছে না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “প্রতি বছর আমরা আমেরিকাকে সাড়ে আটশ মিলিয়ন ডলার ট্যাক্স দিয়ে থাকি। যেটাতে আমরা জিএসপি সুবিধা পেতাম তার রপ্তানি কিন্তু খুবই কম। বড় জোর ২৫ মিলিয়ন ডলারের মত জিএসপি সুবিধা পাওয়া যেত।”

তবে জিএসপি সুবিধা বন্ধ হওয়া বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর ও দুর্নামের বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“হয়তো আমরা আরো ভালো করতে পারতাম। সেখানে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু আমাদের থামিয়ে রাখতে পারেনি। অগ্রগতি ধরে রাখতে পেরেছি,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।

লিখিত প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, চলতি বছরে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের ১২২টি দেশকে জিএসপি সুবিধা দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশকে দেয়নি।

তিনি বলেন, তৈরি পোশাক ও চিংড়ি খাত এবং ইপিজেডভুক্ত কারখানায় শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করে ২০১৩ সালের ২৭ জুন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে। পরে এ সুবিধা পুনর্বহালে বাংলাদেশ সরকারকে বিভিন্ন শর্ত সংবলিত ‘বাংলাদেশ অ্যাকশন প্ল্যান-২০১৩’ বাস্তবায়নের পরামর্শ দেয়।

এই কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি তিন দফায় যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই বাস্তবায়নের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে এবং চলমান কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে তাগিদ দিয়েছে।

কর্ম পরিকল্পনার অধিকাংশ বিষয় বাস্তবায়ন হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অবশিষ্ট বিষয়গুলোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে কারখানা পরিদর্শক নিয়োগ, ৩ হাজার ৬৮৫টি গার্মেন্ট কারখানার মধ্যে ৩ হাজার ৩৭৫টিতে অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও স্ট্রাকচারাল বিষয় পরিদর্শন করে ত্রুটিপূর্ণ ৩৪টি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া, বিদ্যমান শ্রম আইনের বিধি প্রায় চূড়ান্ত করা, ইপিজেড শ্রম আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ ইত্যাদি।

ওই কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।