বিটিআরসির হাজার কোটি টাকার ‘অলস’ তহবিল

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার তহবিলে ‘পড়ে থাকা’ এক হাজার কোটি টাকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর দুই মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন এই তহবিল উচ্চতর গবেষণা ও স্বতন্ত্র ইনস্টিটিউট স্থাপনে ব্যয় করা হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 August 2015, 03:31 PM
Updated : 29 August 2015, 11:12 PM

শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আয়োজনে ইন্টারনেট নিরাপত্তা নিয়ে এক গোলটেবিল আলোচনায় এই তথ্য উঠে এলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, এই তহবিল ব্যবহারের উদ্যোগ নেবেন তারা।

র‌্যাডিসন হোটেলে এই গোলটেবিলে উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এডিএন টেলিকমের চেয়ারম্যান আসিফ মাহমুদ ওই তহবিলের কথাটি তুলে ইন্টারনেট নিরাপত্তায় ওই অর্থ দিয়ে ইনস্টিটিউট গড়ার সুপারিশ করেন।  

তিনি বলেন, “আমরা ইন্টারনেট নিয়ে ব্যবসা করি, আমরা কতটুকু নিরাপদ? এ নিয়ে কোনো গবেষণা নেই। উচ্চতর গবেষণা করা উচিত। বিটিআরসিতে ইউনিভার্সাল ফান্ডের নামে হাজার কোটি টাকা পড়ে আছে; তা থেকে গবেষণা কাজে ব্যবহার করা উচিত।”

আসিফ মাহমুদ

গোলটেবিলের সঞ্চালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তখন বিষয়টি নিয়ে জানতে চান প্রতিমন্ত্রী তারানার কাছে।

তিনি বলেন, “আমি এটা নিয়ে (ফান্ড) মাত্র ২২ দিন ধরে বসে আছি। ২২ দিন আগে আমি প্রতিমন্ত্রী হয়েছি।

“আমি বসে থাকব না। অবশ্যই রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মত কিছু একটা করতে পারি।… বিচক্ষণ ও সুশিক্ষিত ছেলেরা বিদেশে চলে যাচ্ছে, তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে এই বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত করা এবং আমাদের দেশের প্রতিভাদের একসঙ্গে যুক্ত করে এটা করা যায়।”

একই সময় তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে কথা বলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

তিনি বলেন, “ইন্টারনেটের রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নিয়ে ইনভেস্ট করা দরকার। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা আমাকে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে ইনস্টিটিউটের চিন্তা সরকারের রয়েছে।”

অনুষ্ঠানের আলোচক বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থায় (বিটিআরসি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী বলেন, “হাজার কোটি টাকার মতো সেই ফান্ড এখনও ব্যবহার হয়নি, এটার ব্যবহার করতে হবে।”

এই তহবিল ব্যবহারে এ সংক্রান্ত আইনের কিছু পরিবর্তন করতে হবে জানান তিনি।

বিটিআরসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সংস্থার সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে (স্যোসাল অবলিগেশন ফান্ড) ৭২৫ কোটি টাকা জমা হয়েছে।

গোলটেবিলে আলোচকরা

বাংলাদেশের টেলিকমিউনিকেশনের প্রসারে মোবাইল ফোন অপারেটরদের মোট আয়ের এক শতাংশ কেটে নিয়ে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে এই তহবিল গঠন করা হয় বলে ওই কর্মকর্তা জানান।

আলোচনায় বারী বলেন, “তহবিলের অর্থ কীভাবে খরচ করা যায় সে বিষয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটি মিটিং করে বিস্তারিত প্রপোজালও জমা দিয়েছে।

“বিটিআরসি শুধু ফান্ড মেইনটেইন করবে। এটা কেমন করে খরচ হবে তা দেখবে কমিটি। কমিটি শিগগিরই বসে এগুলো ঠিক করবে।”

বিটিআরসির আরেকজন কর্মকর্তা জানান, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী, দুই বিভাগের সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান, মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রতিনিধি, পিএসটিএন এবং আইএসপি’র প্রতিনিধিদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বারী বলেন, “আগে মোবাইল অপারেটরদের কাছে ইন্টারনেট ছিল না। কানেক্টিভিটির জন্য এই ফান্ড গঠন করা হয়েছিল।”

বিটিআরসির নজরদারির ক্ষমতা বাড়াতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও যুক্ত করা হবে কি না- এ প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী তারানা বলেন, “অবশ্যই পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে আমরা জোর দিয়ে থাকি।

“সকলের ইনভেস্টমেন্ট থাকলে সুন্দরভাবে কাজ করা যায়। বিদেশি বিনিয়োগ এলে একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়।”

রেগুলেটরি কমিশন বিটিআরসিকে তদারকির ক্ষমতা দ্রুততা ও দক্ষতার সঙ্গে করে জনগণের অভিযোগ নিয়ে কার্যকর ও দৃশ্যমানভাবে কাজ করার অনুরোধ জানিয়েছেন বলে জানান প্রতিমন্ত্রী তারানা।

তিনি বলেন, “আমি দ্রুততার সঙ্গে কাজ করতে চাই।… আমি জানি না আমার দ্রুততা একটু কমানো দরকার, না কি অন্যদের দ্রুততা একটু বাড়ানো দরকার।”