প্রবীর সিকদারকে ছেড়ে দেয়ায় মন্ত্রীকে ‘ধন্যবাদ’

সাংবাদিক প্রবীর সিকদার জামিনে মুক্ত হওয়ার পর স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2015, 03:50 PM
Updated : 19 August 2015, 09:28 PM

বুধবার বিকালে সচিবালয়ে মন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে দেখা করে প্রবীর সিকদারের জামিন পেতে সহায়তার জন্য তারা তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

মন্ত্রীর সুনামহানির অভিযোগ এনে তার এক অনুসারীর দায়ের করা মামলায় প্রবীরকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।

সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা কুদ্দুস বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে প্রবীর সিকদারের জামিনের ব্যাপারে সহযোগিতার অনুরোধ জানান।

“অনুরোধের পর মন্ত্রী ফরিদপুরে প্রবীরের বিরুদ্ধে যে আইনজীবী মামলা করেছিলেন তাকে ফোন করে জামিন আবেদন করা হলে তার বিরোধিতা যেন না করা হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেন।”

বুধবার দুপুরে রিমান্ডে থাকা সাংবাদিক প্রবীরকে পুলিশ ফরিদপুরের এক নম্বর আমলি আদালতে হাজির করলে বিচারক হামিদুল ইসলাম তার জামিন মঞ্জুর করেন।

আদালত জামিন দেওয়ার পর প্রবীর সিকদারকে নেওয়া হয় ফরিদপুর জেলা কারাগারে। বেলা পৌনে ২টার দিকে জামিনের কাগজপত্র পৌঁছালে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন এই সাংবাদিক।

এ বিষয়ে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালে আমি মন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে প্রবীরের জামিনের ব্যাপারে সহযোগিতার অনুরোধ জানাই। আমার উপস্থিতিতেই প্রবীরের স্ত্রী মন্ত্রীকে ফোন করে তার স্বামীর যেন জামিন হয়- সে ব্যাপারে অনুরোধ জানান।”

প্রবীর সিকদারের স্ত্রী অনিতা সিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুপুরে আমার স্বামীর জামিনের আগে ফরিদপুর আদালত এলাকায় ফরিদপুর সদর থানার ওসি আমাকে তার মোবাইল ফোন ধরিয়ে দেন। ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে আমাকে বৌমা সম্বোধন করে বলা হয়, ‘আমি প্রবীরের জামিনের জন্য চেষ্টা করেছি।’ আমি তাকে কৃতজ্ঞতা জানাই।”

ফোনে কার সঙ্গে কথা হচ্ছে- তা ওসি বা যিনি কথা বলেছেন তিনি তাকে জানাননি বলেও জানান অনিতা সিকদার।

ইকবাল সোবহান বলেন, “আমাদের অনুরোধে মন্ত্রী ফরিপুরে যে আইনজীবী মামলা করেছিলেন তাকে ফোন করে প্রবীরের জামিনের যেনো বিরোধিতা না করা হয় সে কথা বলেন।”

খন্দকার মোশাররফ হোসেন (ফাইল ছবি)

স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর তৎপরতার কারণেই প্রবীরের জামিন হয়েছে বলে মনে করেন ইকবাল সোবহান চৌধুরী এবং কুদ্দুস আফ্রাদ।

ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, “প্রবীরের জামিন হওয়ার পর দুপুরে আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে দেখা করে তাকে যেন দ্রুত মুক্তি দেওয়া হয়, সে ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করি। আমাদের অনুরোধে মন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। তারপর প্রবীরকে মুক্তি দেওয়া হয়।

“পরে বিকেলে ‘আমরা’ স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে প্রবীর সিকদারের জামিনের ব্যাপারে সহায়তার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে এসেছি।”

রিমান্ড শেষ হওয়ার আগেই আসামির জামিনে মুক্তি ‘বাংলাদেশে এটা বিরল ঘটনা’ বলেও উল্লেখ করেন ইকবাল।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে অন্য যে সাংবাদিক নেতারা গিয়েছিলেন তারা হলেন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল ভূঁইয়া এবং ডিইউজে সভাপতি আলতাফ মাহমুদ।

কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, “স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, ‘প্রবীর সিকদারের সঙ্গে আমার কোনো ধরনের শত্রুতা নেই। তারা উচ্চ বংশীয় ফ্যামিলি। একটা মহল বিষয়টি ঘোলাটে করতে চাচ্ছে’।

“স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আমরা মন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছি, মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সন্তান সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে কেন হাতকড়া পড়ানো হল? অতি উৎসাহী হয়ে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা এটা করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে মন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ অন্যান্য সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচার যাতে দ্রুত সম্পন্ন সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দাবি জানানো হয়েছে বলে জানান কুদ্দুস আফ্রাদ।

জামিনে মুক্ত হওয়ার পর সাংবাদিক প্রবীর সিকদার

এর আগে মঙ্গলবার বিএফইউজে ও ডিইউজে প্রবীরের মুক্তির দাবিতে একটি যৌথ বিবৃতি দেয়।

বিবৃতিতে বিএফইউজে সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল ও মহাসচিব আব্দুল জলিল ভূঁইয়া এবং ডিইউজে সভাপতি আলতাফ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ বিএফইউজে ও ডিইউজে সদস্য সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে আইসিটি আইনে মামলা দায়ের, তাকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়ার নিন্দা জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, “শহীদ পরিবারের সন্তান সাংবাদিক প্রবীর সিকদার ২০০১ সালে ফরিদপুরের যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে দৈনিক জনকণ্ঠে প্রতিবেদন লেখায় সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় প্রাণে রক্ষা পেলেও একটি পা হারান। এরপর তিনি রাজধানীতে এসে সাংবাদিকতা করতে থাকেন। তারপরেও তার প্রতি মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে হুমকি অব্যাহত থাকে। সম্প্রতি রাজাকার মুসা বিন শমসেরের মুখোশ উন্মোচন করায় আবার নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়েন।

“এর ফলে তিনি নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে যান। থানা তার ডায়েরি গ্রহণ না করলে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে ফেসবুকে দেশবাসীর কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনা করেন তিনি। এরপর তাকে ডিবি পুলিশ আটক করে ও পরবর্তীতে ফরিদপুরে আইসিটি আইনে মামলা দায়ের করে ঢাকা থেকে ফরিদপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।”