ফেইসবুকে লিখে স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
Published : 18 Aug 2015, 12:25 PM
প্রবীর সিকদারের পাশে গণতান্ত্রিক আইনজীবী সমিতি
সাংবাদিক প্রবীরের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা
সাংবাদিক প্রবীর সিকদার কারাগারে
পুলিশের আবেদনে সায় দিয়ে ফরিদপুরের এক নম্বর আমলি আদালতের বিচারক হামিদুল ইসলাম মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। বিচারক ২২ অগাস্ট মামলার পরবর্তী শুনানির দিন রেখেছেন।
এই সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় বিভিন্ন মহলের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে পুলিশ সোমবার তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিল।
মঙ্গলবার শুনানি শেষে বিচারক তিন দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আগে প্রবীর সিকদারের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন বলে তার পক্ষে দাঁড়ানো আইনজীবী আলী আশরাফ নান্নু সাংবাদিকদের জানান।
ফরিদপুরের সন্তান প্রবীরের পক্ষে আগের দিন আদালতে কোনো আইনজীবী না দাঁড়ালেও রিমান্ডের বিরোধিতা করে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী নান্নু।
তিনি বলেন, “প্রবীর সিকদার একজন খ্যাতিমান সাংবাদিকই নন, তিনি শহীদ পরিবারের সন্তান। আমরা আদালতকে বলেছি একজন পঙ্গু মানুষকে রিমান্ড না দিয়ে জামিন মঞ্জুর করার। কিন্তু আদালত না তা নাকচ করেছে।”
শুনানির সময় প্রবীর সিকদারের স্ত্রী অনিতা সিকদার ও ছেলে সুপ্রিয় সিকদারও উপস্থিত ছিলেন।
অনিতা সিকদার সাংবাদিকদের বলেন, “আমার স্বামী পঙ্গু। তাকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ না করে জেল গেইটে করার দাবি জানাচ্ছি।”
অন্যদিকে মামলার বাদী স্বপন কুমার পালের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী অনিমেষ রায় ও নারায়ণ চন্দ্র সাহা। এসময় তার পক্ষে প্রায় অর্ধশত আইনজীবী এজলাসে উপস্থিত ছিলেন।
ফেইসবুকে লেখালেখিকে কেন্দ্র করে হুমকি পাওয়ার পর নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরে ঢাকায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গিয়েছিলেন উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ এবং দৈনিক বাংলা ৭১ নামের পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক প্রবীর সিকদার।
কিন্তু পুলিশ ওই জিডি নেয়নি জানিয়ে গত ১০ অগাস্ট নিজের ফেইসবুক পাতায় একটি স্ট্যাটাসে নিজের জীবন নিয়ে ঝুঁকির কথা বলেন এই সাংবাদিক।
‘আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী থাকবেন’ শিরোনামের ওই স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন- “আমি খুব স্পষ্ট করেই বলছি, নিচের ব্যক্তিবর্গ আমার জীবন শংকা তথা মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবেন : ১. এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এমপি, ২. রাজাকার নুলা মুসা ওরফে ড. মুসা বিন শমসের, ৩. ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী বাচ্চু রাজাকার ওরফে মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং এই তিন জনের অনুসারী-সহযোগীরা।”
এই লেখার মাধ্যমে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের অভিযোগ তুলে রোববার রাতে ফরিদপুর সদর থানায় মামলা করেন আইনজীবী স্বপন পাল। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় এই মামলা করা হয়।
এর কয়েক ঘণ্টা আগেই ঢাকায় প্রবীর সিকদারকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। ওই রাতেই তাকে ফরিদপুরে নিয়ে সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই মন্ত্রী মোশাররফ ফরিদপুরের সংসদ সদস্য। মামলার বাদী স্বপন পাল ফরিদপুর পূজা উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা।
মামলার বিষয়টি আগে থেকে জানা ছিল না বলে দাবি করলেও খন্দকার মোশাররফ হোসেন সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডাইরেক্ট সে লেখতেছে, সে মারা গেলে আমি তাকে খুন করছি, তাহলে আমি আইনের আশ্রয় নিব না? এটা কি আমি কোনো অন্যায় কাজ করছি?”
আর তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা হলে গ্রেপ্তার করা ছাড়া কোনো ‘উপায় থাকে না’ বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
প্রবীর সিকদার এর আগে ঢাকায় সমকাল ও কালের কণ্ঠে কাজ করেছেন।
দৈনিক জনকণ্ঠের ফরিদপুর প্রতিনিধির দায়িত্বপালনকালে ২০০১ সালে সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি। এরপর থেকেই পঙ্গু জীবন যাপন করছেন তিনি।
একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী মুসা বিন শমসেরের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন লেখার কারণেই ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে হামলা করানো হয়েছিল বলে প্রবীরের অভিযোগ।
এই সাংবাদিককে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলায় গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় চলছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এই সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন। প্রতিবাদ জানিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চও।
সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)সহ বিভিন্ন সংগঠন অবিলম্বে প্রবীর সিকদারকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।