আদালত নিয়ে কুৎসা রটাবেন না: প্রধান বিচারপতি

বিচার বিভাগ নিয়ে ‘অবমাননাকর’ নিবন্ধ প্রকাশ করায় জনকণ্ঠের বিরুদ্ধে রুলের শুনানিতে বক্তব্যে আদালত নিয়ে কুৎসা রটনা না করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 August 2015, 06:32 PM
Updated : 10 August 2015, 07:04 PM

সোমবার শুনানিতে জনকণ্ঠের আইনজীবী সালাউদ্দিন দোলন তাদের নিবন্ধের সপক্ষে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে অন্য এক জনের টেলি কথোপকথনের শ্রুতিলিখন আদালতে তুলে ধরেন।

তা উপস্থাপনের পর বিচারপতিদের শপথ সংক্রান্ত সংবিধানের অনুচ্ছেদ তুলে ধরেন তিনি।

এক বিচারপতির সঙ্গে কথা হওয়ার তথ্য জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, এই বিষয়ে রুল ইস্যু করার পরও জনকণ্ঠ সম্পাদক আদালতকে প্রভাবিত করার জন্য অবমানননাকর লেখা প্রকাশ করছে।

শুনানিতে জনকণ্ঠ সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ এবং নিবন্ধ লেখক স্বদেশ রায় হাজির ছিলেন।

দুদিন ধরে রুল শুনানির পর এই বিষয়ে রায় দিতে আগামী ১৩ অগাস্ট বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করে দেয় প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বৃহত্তর বেঞ্চ। 

বেঞ্চের অন্য পাঁচ সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্‌হাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

এই বিষয়টির শুরু হয় ‘সাকার পরিবারের তৎপরতা : পালাবার পথ কমে গেছে’ শিরোনামে গত ১৬ জুলাই দৈনিক জনকণ্ঠে স্বদেশ রায়ের লেখা একটি নিবন্ধকে কেন্দ্র করে।

এ নিয়ে ২৯ জুলাই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর চূড়ান্ত রায়ের দিন দৈনিক জনকণ্ঠ সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদকের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অবমাননার রুল দিয়ে ব্যাখ্যা জানাতে ৩ অগাস্ট আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ।

ওই দিন বিবাদীদের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ৯ অগাস্ট দিন ধার্য করেন। সেদিন জনকণ্ঠ সম্পাদক ও নিবন্ধের লেখক আদালতে হাজির হন।

রোববার শুনানির এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, রায়ের আগে যদি তিনি সরে যেতেন তাহলে তো ওই মামলায় রায়ই হত না।

প্রথম দিনের শুনানির পর সোমবার দ্বিতীয় দিনের শুনানি হয়। এরপর আদালত আদেশের দিন ঠিক করে দেয়।

সোমবারের শুনানি

সকাল ৯টা ১০ মিনিটে শুনানির শুরুতে জনকণ্ঠের আইনজীবী সালাউদ্দিন দোলন বলেন, “রোববার আদালত  বৃহত্তর বেঞ্চ গঠনের আদেশ দিয়েছিলেন। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম যে আপিল বিভাগের সব বিচারপতিরা বসবেন। আজ দেখছি একজন বিচারপতি নেই।”

আইনজীবীকে উদ্দেশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, “কাকে নিয়ে বেঞ্চ গঠন করা হবে, এটা প্রধান বিচারপতির সাংবিধানিক এখতিয়ার। আপনি আপনার সীমা অতিক্রম করছেন। বিচারকের কিছু এথিকস আছে। একজন বিচারক এই এথিকসের বাইরে যেতে পারেন না।...সকলেই আমাদের কাছে বিচারপ্রার্থী। তবে কোনো বিচারক যদি কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে একটি মামলায় নিজেকে যুক্ত রাখতে চান, তবে প্রধান বিচারপতি হিসেবে তাকে বাদ দিতে হয়।”

এরপর বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা কিছু কথা বলার পর আইনজীবী দোলন বলেন, “প্রধান বিচারপতি এই মামলায় একজন পক্ষ। এজন্য আমরা প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে বেঞ্চ পুনর্গঠনের আবেদন করেছিলাম।”

বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা বলেন, আদালত অবমাননার বিষয়টি আলাদা। এর সঙ্গে অন্য কিছু মেলালে হবে না।

তখন আইনজীবী দোলন বলেন, মক্কেলের পক্ষ থেকে তার বক্তব্য উপস্থাপনের অধিকার আছে।

এরপর ৯টা ২০ মিনিটের দিকে বিরতিতে যায় আদালত। ১৫ মিনিট পর এজলাসে ফিরে আসেন বিচারপতিরা।  

আসন গ্রহণের পর জনকণ্ঠে প্রকাশিত নিবন্ধের অংশবিশেষ উল্লেখ করে অ্যার্টনি জেনারেলকে উদ্দেশ করে আদালত বলে, কোন বিচারপতিকে বিদেশ যেতে বাধা দিয়েছে, তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জেনে বিরতির পর সাড়ে ১১টায় জানাবেন।

এরপর অ্যার্টনি জেনারেল ১৬ জুলাই জনকণ্ঠে প্রকাশিত নিবন্ধ উপস্থাপন শুরু করেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনজীবীদের এথিকসের বিষয় আছে। খালেদা জিয়ার বাড়ির মামলায় বিচারপতির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে আবেদন প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক ওই আবেদন উত্থাপন করতে বিব্রতবোধ করেছিলেন।

বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেন, প্রধান বিচারপতি প্রশাসনিক ও বিচারিক দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তাকে বিভিন্ন বিচারকদের সঙ্গে কথা বলতে হয়।

“প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আমারও নানা বিষয়ে কথা হয়, বিতর্কও হয়। এখন আমি যদি সব সময় টেপ নিয়ে যাই, তাহলে প্রধান বিচারপতি আমাদের সঙ্গে কীভাবে কথা বলবেন? তাহলে কি কোনো প্রধান বিচারপতি কাজ করতে পারবেন?”

এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল প্রকাশিত নিবন্ধে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জামিনের প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন।

এক পর্যায়ে বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞা বলেন, “এখানে শুধু প্রধান বিচারপতিকে মেলাইন করা হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তিতে আঘাত করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান। সর্বোচ্চ আদালতের ভাবমূর্তি ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।”

এ সময় বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, “মির্জা ফখরুলের জামিনের বেঞ্চে চারজন ছিলাম। চারজনের ইনটিগ্রিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।”

অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এ বিষয়ে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।

এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, “সাংবাদিকরা এত স্বাধীন যে প্রধান বিচারপতির দেশ সফরে যাওয়া উচিত কি না তাও কি সাংবাদিকদের কাছ থেকে জানতে হবে! কোন অনুষ্ঠান বিএনপি-জামায়াতের? অনুষ্ঠানে রাজাকার আছে কি না ? সেখানে যাব কি না?”

এই পর্যায়ে বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা বলেন, “বাড়ি যাওয়ার আগে তাদের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে, যাব কি না? যদি গিয়ে দেখি, জামায়াতের কেউ বসে আছে?

“সাংবাদিকরা মত প্রকাশ করতে পারবেন । তবে তাদের লেখার আগে ভাবতে হবে, যা লিখছেন তা সঠিক কি না। প্রধান বিচারপতি প্রতিষ্ঠানের প্রধান। তাকে হেয় করা হলে পুরো বিচার বিভাগকে ধ্বংস করা হয়।”

এরপর মাহমুদুর রহমানের মামলার রায় তুলে ধরেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

শুনানিতে জনকণ্ঠের আইনজীবী দোলন বলেন, আপিল বিভাগের একজন বিচারপতির সঙ্গে প্রধান বিচারপতির কথোপকথন এসেছে। এতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মওদুদ আহমদের মামলার প্রসঙ্গ রয়েছে।

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা (ফাইল ছবি)

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, “আদালত নিয়ে কুৎসা রটাবেন না।”

আইনজীবী দোলনের বক্তব্যে তীব্র আপত্তি জানান আদালত কক্ষে উপস্থিত আইনজীবী কে এম সাইফুদ্দিন আহমেদ ও নূরুল ইসলাম সুজন।

এক পর্যায়ে আদালত তাদের বসতে বলে ১১টার দিকে নির্ধারিত বিরতিতে যায়।

বিরতির পর আদালত বসলে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কোনো বিচারককে বিদেশ যেতে বাধা দেওয়া হয়নি।

এরপর আইনজীবী দোলন নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করলে প্রধান বিচারপতি বলেন, “বার থেকে বাসায় যাবেন, আপনার জন্য পুলিশ নিরাপত্তা দেওয়া হবে।”

পরে দোলন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে অন্য এক ব্যক্তির কথোপকথনের অডিও রেকর্ডের শ্রুতিলিখন উপস্থাপন শুরু করেন।

এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, “এক বিচারপতির সঙ্গে কথা হয়েছে। তাই বলে কি তা রেকর্ড করতে হবে? প্রধান বিচারপতি প্রশাসনিক কাজে যে কোনো বিচারপতির সঙ্গে কথা বলতে পারেন।”

এরপর সালাউদ্দিন দোলন বিচারপতিদের শপথ সংক্রান্ত সংবিধানের অনুচ্ছেদ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যদিও সংবিধান সংশোধনের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ও আচরণবিধি নেই।

প্রধান বিচারপতি বলেন, “আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন যে প্রধান বিচারপতি শপথ ভঙ্গ করেছেন? এজন্য তার পদে থাকার অধিকার নেই?”

এ সময় আদালত ওই রেকর্ডের সূত্র জানতে চায়।

জবাবে সালাউদ্দন দোলন বলেন, এটা তারা কোনো বিচারপতির কাছ থেকে পাননি। আর সাংবাদিকরা তাদের সুত্র প্রকাশ করে না।

এ সময় আদালত বলে, আবেদনে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীকে সাক্ষী মেনে সূত্র প্রকাশ করা হয়েছে।

জবাবে সালাউদ্দিন দোলন বলেন, “আমরা কোনো বিচারপতির কাছ থেকে টেপ পাইনি। জনকণ্ঠ টেপ পরীক্ষা করে দেখেছে, অন্য প্রান্তে ছিলেন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।”

প্রধান বিচারপতি বলেন, “এই সম্পাদক রুল ইস্যুর পরও আদালতকে প্রভাবিত করার জন্য লেখা প্রকাশ করে আদালত অবমাননা করে যাচ্ছেন। বিচারাধীন বিষয়ে আদালতকে প্রভাবিত করার জন্য কোনো লেখা প্রকাশ করা যাবে না, তা মীমাংসিত বিষয়।

“সারাদেশে কি স্বাধীনতার পক্ষের একজন বিচারপতিই আছেন? আর একজনই কি সব যুদ্ধাপরাধের বিচার করবেন? দেশে কি আর কোনো বিচারপতি নাই। একজন বিচারপতি চিরকাল থাকবেন না। এই দেশে একজন বিচারক চলে যাবেন, আরেকজন বিচারক আসবেন। এই প্রতিষ্ঠান টিকে থাকবে। কেউই অপরিহার্য নয়।”

আট মাস আগে প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর বিচার বিভাগের উন্নয়নে নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বিচারপতি এস কে সিনহা বলেন, “বিচার বিভাগ আমূল বদলে গেছে। নিম্ন আদালতে যান, দেখতে পাবেন।”

নিবন্ধের প্রসঙ্গ টেনে আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলে, তিনি কি বলতে চাচ্ছেন যে গরিব লোক বিচার পাচ্ছে না।

জবাবে সালাউদ্দিন দোলন বলেন, গরিবরা হাই কোর্টে আসতে পারে না। তারা বড় আইনজীবী রাখতে পারেন না সেটাই বোঝানো হয়েছে।

এক পর্যায়ে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, “এসব লিখে আপনারা বিচার বিভাগের সর্বনাশ করছেন। বিচার বিভাগ মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। বিচার বিভাগের উপর থেকে যদি জনগণের আস্থা চলে যায় তাহলে দেশ কোথায় যাবে?”

সালাউদ্দিন দোলন বলেন, রেকর্ডের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি করা হয়।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, প্রধান বিচারপতির শপথ নেওয়ার পর জানুয়ারি থেকেই এই বেঞ্চ (চার সদস্যের) বসছে।

এ বিষয়ে প্রথমার্ধে শুনানিতে বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা বলেন, ১৭ জানুয়ারি থেকে দুটি বেঞ্চ হয়েছে। সেভাবেই চলছে, বেঞ্চ পরিবর্তন হয়নি।

প্রধান বিচারপতি বলেন, “দায়িত্ব গ্রহণের পর জ্যেষ্ঠ বিচারপতির নেতৃত্বে একটি বেঞ্চ গঠন করে দিয়েছি বিচার প্রার্থী জনগণের কষ্ট লাঘবে।”

তিনি বলেন, “সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিলের রায় ঘোষণার আগেই কেন এ ধরনের নিবন্ধ প্রকাশ করা হল? প্রধান বিচারপতি যদি নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতেন, তাহলে কী হত?”

এরপর বেলা পৌনে ১২টার দিকে শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ১৩ অগাস্ট রায়ের দিন ঠিক করে দেয়।

আদালতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল উপস্থিত ছিলেন।

শুনানি শুরুর আগে আদালতে উপস্থিত হন জনকণ্ঠ সম্পাদক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ও নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়। আগামী ১৩ অগাস্ট রায়ের দিনও তাদের আদালতে হাজির হতে হবে। 

আইনজীবীদের বক্তব্য

আদালত থেকে বেরিয়ে সালাউদ্দিন দোলন সাংবাদিকদের বলেন, “যে টেলিফোন কথোপকথন নিয়ে আমরা কয়েকদিন ধরে কনটেম্টে কথা বলছি, তাতে যারা পক্ষ ছিল, তাদের প্রতি সমন ইস্যু করার জন্য আমরা একটি দরখাস্ত দিয়েছিলাম।

“শুনানির এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি সেটি এডমিট (স্বীকার) করে নিয়েছেন, বলেছেন কথোপকথন হয়েছে।এজন্য সেটার আর সাক্ষীর প্রয়োজন হয়নি, আবেদনটি উপস্থাপন করা হয়নি।”

দোলান বলেন, তারা বলেছেন যে সত্যের ওপর ভিত্তি করে রিপোর্ট হলে আদালত অবমাননা হয় না।

“আমরা অব্যাহতি চেয়েছি। কথোপকথনের সিডি উপস্থাপন করেছি। আমাদের বক্তব্য ছিল, এই মামলার বিচার যাতে কোনোভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, সেজন্য যারা যারা পক্ষ তাদের বাদ দিয়ে যেন বিচার করা হয়।”

“সেই প্রিন্সিপালে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীকে বেঞ্চ থেকে বাদ রাখা হয়েছে।আদালতের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলাম সেই প্রিন্সিপালটা আরেকজন বিচারপতি এই বেঞ্চে আছেন, তার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য।আদালত তা গ্রহণ করেননি, বলেছেন কনটেম্টে এ বিষয়টি ভিন্ন।”

রায়ে ন্যায় বিচার পাওয়ার প্রত্যাশার কথা জানিয়ে জনকণ্ঠের আইনজীবী বলেন, “রিপোর্টের মূল উদ্দেশ্য ছিল সত্যকে উন্মোচিত করা, বিচার কাজকে প্রভাবিত করা না। এটি উদ্দেশ্যমূলক নয়, বরং সত্য প্রকাশের জন্য এটি করেছি।”

সালাউদ্দিন দোলন বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে না, উপমহাদেশের ইতিহাসেও পদে থাকা অবস্থায় প্রধান বিচারপতি সংশ্লিষ্ট মামলা এটাই প্রথম। প্রত্যেককে দায়িত্বশীল হতে হবে, রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।”

অ্যার্টর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “এখানে বলা হয়েছিল প্রধান বিচারপতি বিদেশে যাচ্ছিলেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে তাকে যেতে দেওয়া হয়নি। প্রধান বিচারপতি আমাকে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে জেনে আদালতে এ ব্যাপারে বক্তব্য দিতে। আমি প্রধানমন্ত্রীর অফিসে যোগাযোগ করে জেনেছি, প্রধান বিচারপতিকে বা অন্য কোনো বিচারপতিকে কোনো সময়ে বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে বারিত বা হস্তক্ষেপ করা হয়নি। এই কথাটি আদালতে প্রকাশ করেছি।”

বিচারপতির কথোপকথন রেকর্ড আইনগতভাবে কতটা ঠিক- সে বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, “একজন বিচারপতি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কী কথা বললেন, সেকথা টেপ করে বাইরে প্রকাশ করা শুধু আদালত অবমাননাই না, এটি তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের অধীনে একটি অপরাধ।

“এটা পারেন না। যে রেকর্ড দেওয়া হয়েছে, ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্পর্ক যে কথাগুলো বলা হয়েছে, সেটিও আদালতের প্রসিডিংস সম্পর্কে না আগা-গোড়া না জেনে একটা বক্তব্য দেওয়া হয়েছে-এটা আমরা বলেছি।”

“এই ধরনের রিপোর্টে সাংবাদিকতার মান তো উন্নীত হয় না, বরং সর্বোচ্চ আদালতকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। আদালত সম্পর্কে মানুষের যে আস্থা তা নষ্ট করার প্রয়াস নেওয়া হয়।”

অ্যার্টনি জেনারেল বলেন, আদালত অবমাননার জন্য বিবাদীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন তিনি।