‘জ্ঞান দিয়ে আমাদের ঋণী করেছেন অনুপম সেন’

সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেন তার জ্ঞান দিয়ে মানুষকে ঋণী করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2015, 06:24 PM
Updated : 5 August 2015, 06:29 PM

খ্যাতিমান সমাজতাত্ত্বিক অনুপমের ৭৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রামে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে এ মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

বুধবার চট্টগ্রাম নগরীর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “অনুপম সেন অনেক বড় মানের পণ্ডিত ও বড় মনের মানুষ। বিশ্বসভায় তার জ্ঞান যেভাবে আসন করে নিয়েছে তাতেই তিনি এরমধ্যে আমাদের ঋণী করেছেন। আমরা আরও ঋণী হতে চাই তার কাছে।”

অনুপম সেনের ‘দ্য স্টেট ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন অ্যান্ড ক্লাস ফরমেশন অব ইন্ডিয়া’ বইটি বিদেশিদের প্রশংসা পাওয়ার আগে চট্টগ্রামে বইটির উপর একটা আলোচনা সভার আয়োজন করেছিলেন বলে জানান অনুপমের এক সময়ের সহকর্মী আনিসুজ্জামান।

অনুপম সেনের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

“সেই বই যে বিশ্বসভায় স্থান করে নিবে তখনই আমরা সেটা উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম।”

অনুপম সেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে এমএ পাশ করার পর ১৯৬৫ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বর্তমান বুয়েট) প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পরের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক এবং ১৯৬৯ সালের নভেম্বরে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন।

পরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগীয় প্রধান হওয়া ছাড়াও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, দুই দফা সভাপতি এবং সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০০৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেওয়ার পর পালন করছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব।

৭৫ তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অনুপম সেনকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন আনিসুজ্জামান।

১৯৭৩ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ও পিএইচডি করেন অনুপম সেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল-‘দ্য স্টেট ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন অ্যান্ড ক্লাস ফরমেশন ইন ইন্ডিয়া’।

তার এই গবেষণা প্রতিবেদনটি ১৯৮২ সালে বই আকারে প্রকাশিত হয়, যাতে উপমহাদেশে শিল্পায়নের প্রভাবে সমাজ কাঠামোর পরিবর্তনের চিত্র তুলে ধরা হয়। বিভিন্ন মহলে সমাদর পাওয়া এই বইটি ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার অনেক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে রেফারেন্স বই হিসেবে ব্যবহৃত হয়।   

সাবেক সহকর্মী অনুপম সেনকে নিয়ে আনিসুজ্জামান বলেন, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন শিক্ষক হয়ে আসলাম তখন সেনের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। তখন তার জীবনযাপন প্রণালী দেখে আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম।

“এরকম বন্ধুবৎসল, উদার ও সবার সাথে ভাল সম্পর্ক রাখার মত ক্ষমতা এ সমাজে খুব বেশি মানুষের নেই যা অনুপম সেনের মধ্যে দেখেছি।”

জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অনুপম সেন

অনুপম সেনের মানবসভ্যতার ইতিহাস ‘নখদর্পনে’ রাখার ক্ষমতাকে বিস্ময়কর বলেও মন্তব্য করেন আনিসুজ্জামান।

“সেন দীর্ঘ সময় ধরে বক্তব্য দিতে পছন্দ করেন। আমরা এ নিয়ে অনেক টিপ্পনিও কেটেছি। দীর্ঘ বক্তৃতার প্রধান কারণ ছিল তার জানাশুনা এত বেশি যে প্রত্যেক বিষয়কে তিনি বৃহত্তর পটভূমিতে রেখে দেখতে চান,” বলেন তিনি।

চট্টগ্রাম একাডেমির আয়োজনে অনুপম সেনের জন্মজয়ন্তির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শহীদজায়া মুশতারী শফি। স্বাগত বক্তব্য দেন জন্মজয়ন্তি উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আনোয়ারা আলম।

আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা ও কথা সাহিত্যিক ফেরদৌস আরা আলিম।