এক সপ্তাহ সময় পেলেন জনকণ্ঠ সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর চূড়ান্ত রায় ঘিরে বিচারকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নিবন্ধ প্রকাশ করায় জনকণ্ঠের সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদককে আদালত অবমাননার রুলের জবাব দিতে এক সপ্তাহ সময় দিয়েছে আপিল বিভাগ।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 August 2015, 04:44 AM
Updated : 19 August 2015, 02:58 AM

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ সোমবার এই আদেশ দেয়।

জনকণ্ঠ সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ এবং নিবন্ধের লেখক স্বদেশ রায় ওই নিবন্ধের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য তিন মাস সময়ের আবেদন করলে বিচারক তা নাকচ করে আগামী রোববার তাদের জবাব দিতে বলেন। 

ওইদিন আতিকউল্লাহ খান ও স্বদেশ রায়কে আদালতে হাজির থাকতে হবে বলে তাদের আইনজীবী সালাউদ্দিন দোলন জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “আমরা সময় চেয়েছিলাম। আদালত আগামী রোববার দিন রেখেছেন। রোববারের মধ্যেই জবাব দাখিল করতে বলা হয়েছে। ওইদিন তাদের হাজির হতে হবে।” 

শুনানিতে সালাউদ্দিন দোলনের সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সোয়েব খান, যাকে দুই সাংবাদিকের পক্ষে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড দেখানো হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে থেকেও অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হিসাবে দায়িত্ব পালন করায় আইনজীবী সোয়েবকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শাতে বলেছে আদালত।

সোয়েব খান বলেন, “রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা শুনানিতে বলেছেন আমি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কর্মরত থাকায় এই মামলা করতে পারি না। আমি বলেছি অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হিসেবে এই মামলা করেছি। ...এই মামলা করতে বাধা নেই।

“প্রধান বিচারপতি অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হিসাবে আমার দায়িত্ব সাত দিনের মধ্যে অন্য কোনো আইনজীবীর কাছে দিতে বললে আমি বলেছি পাওয়ার প্রত্যাহার করব না।”

এরপর আদালত কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়ে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হিসেবে লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না- ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তার জবাব দিতে বলেছে বলে জানান সোয়েব।

২৯ জুলাই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর চূড়ান্ত রায়ের দিন দৈনিক জনকণ্ঠ সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদকের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অবমাননার রুল জারি করে আপিল বিভাগ।

‘সাকার পরিবারের তৎপরতা : পালাবার পথ কমে গেছে’ শিরোনামে গত ১৬ জুলাই দৈনিক জনকণ্ঠে স্বদেশ রায়ের লেখা একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়।

এর একটি অংশে বলা হয়, “৭১-এর অন্যতম নৃশংস খুনী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। নিষ্পাপ বাঙালীর রক্তে যে গাদ্দারগুলো সব থেকে বেশি হোলি খেলেছিল এই সাকা তাদের একজন। এই যুদ্ধাপরাধীর আপিল বিভাগের রায় ২৯ জুলাই। পিতা মুজিব! তোমার কন্যাকে এখানেও ক্রুশে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। তাই যদি না হয়, তাহলে কিভাবে যারা বিচার করছেন সেই বিচারকদের একজনের সঙ্গে গিয়ে দেখা করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের লোকেরা? তারা কোন পথে বিচারকের কাছে ঢোকে, আইএসআই ও উলফা পথে না অন্য পথে? ভিকটিমের পরিবারের লোকদেরকে কি কখনও কোনো বিচারপতি সাক্ষাত দেয়। বিচারকের এথিকসে পড়ে! কেন শেখ হাসিনার সরকারকে কোন কোন বিচারপতির এ মুহূর্তের বিদেশ সফর ঠেকাতে ব্যস্ত হতে হয়।”

ওই নিবন্ধের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতেই আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ও স্বদেশ রায়কে ৩ অগাস্ট আদালতে হাজির হতে বলে আদালত। 

পরে এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, “বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই এ লেখা। আদালত মনে করে, এতে নানারকম মন্তব্য করে আদালতের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো এবং ভাবমূর্তি নষ্ট করা হয়েছে।”

‘জনকণ্ঠের সাংবাদিক স্বদেশ রায়ের লেখার জন্য কেন তাকে আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত করা হবে না এবং এ ধরনের লেখা কাগজে ছাপানোর জন্য সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদকেও সমভাবে দায়ী করে কেন দণ্ড দেওয়া হবে না’- রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে বলে অ্যার্টনি জেনারেল সেদিন জানিয়েছিলেন।