শনিবার প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের সীমানায় যোগ হওয়া ছিটমহলগুলোতে ওড়ানো হয় বাংলাদেশের পতাকা, ৬৮ প্রদীপে প্রোজ্জ্বল প্রতিটি বাড়ি।
ভারতের সঙ্গে যোগ হওয়া ছিটমহলগুলোতেও ছিল একই চিত্র।
আর সেই সঙ্গে দীর্ঘ অপেক্ষার মুক্তির স্বাদ অনন্য হয়ে ধরা দিয়েছে পঞ্চাশ হাজার অধিবাসীর কাছে, ঘুচেছে ‘নিজ দেশে পরাধীনতার’ গ্লানি।
ভারত ও বাংলাদেশের স্থলসীমান্ত চুক্তি অনুযায়ী, ১ অগাস্ট থেকে বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ১৭ হাজার ১৬০ দশমিক ৬৩ একর আয়তনের ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশের ভূখণ্ড।
আর ভারতের মধ্যে থাকা ৭ হাজার ১১০ দশমিক ০২ একর আয়তনের বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল মিলে গেছে ভারতের মানচিত্রে।
দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত এই সমস্যার অবসানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মানচিত্র পেল পূর্ণতা। বাংলাদেশে এখন থেকে ছিটমহল শব্দটি থাকবে কেবল ইতিহাসের পাতায়।
ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ অংশের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “আজ নিজের দেশের পতাকা নিয়ে মিছিল করছি, এর চেয়ে আনন্দের কী আছে? আজ আমরা মুক্ত, আজ আমরা স্বাধীন। আটষট্টি বছরের বন্দিত্ব ঘুচেছে আমাদের- এটিই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া।”
এই বিনিময়ের মধ্য দিয়ে নিজেরা অগ্রসর হতে পারবেন বলে আশা করছেন সমন্বয় কমিটির সভাপতি ময়নুল হক।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানে দেশ ভাগের সময় সিরিল রেডক্লিফ কমিশনের তাড়াহুড়োয় চিহ্নিত করা সীমান্তে ছিটমহল জটিলতার শুরু। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এই সমস্যার অবসানে ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হয়। এরপর তা কার্যকরে প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয় ২০১১ সালে।
গত ৭ মে ভারতের সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ওই চুক্তি বাস্তবায়নের পথ তৈরি হলে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরে অনুসমর্থনের দলিল হস্তান্তর হয়।
নিজ নিজ দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এসব ছিটমহলের সরাসরি কোনো যোগাযোগ না থাকায় রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ছিল না। আরেক দেশের সীমানার ভেতরে হওয়ায় হাসপাতাল, বিদ্যুৎ, স্কুল-কলেজ বা বিচার- প্রশাসনও ছিল না সেখানে।
ফলে ছিটের বাসিন্দাদের ইচ্ছা থাকলেও ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করানোর সুযোগ ছিল সীমিত। অনেকেই বাংলাদেশি বা ভারতীয় ঠিকানা ব্যবহার করে লেখাপড়া করলেও ছিটমহলের বাসিন্দা হওয়ায় চাকরির সুযোগ তাদের এতোদিন হয়নি।
ভারতে সবগুলো ছিটমহলের অবস্থান পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলায়। আর বাংলাদেশে ছিটমহলগুলো পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী জেলায়।
তিনি জানান, এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে শুক্রবার সারাদিন ছিটমহলগুলোর নাগরিক কমিটির উদ্যোগে স্থানীয় বিভিন্ন খেলাধুলা, গান ও নাটকসহ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা চলেছে।