বাঘ নিয়ে পরিসংখ্যান উড়িয়ে দিলেন বনমন্ত্রী

বন বিভাগের জরিপে গত এক দশকে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা এক চতুর্থাংশে নেমে আসার তথ্য মিললেও রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বিলুপ্তির শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 July 2015, 11:34 AM
Updated : 31 July 2015, 10:41 AM

আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটে এক আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমার জানা মতে, পরিসংখ্যান হল সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা। যারা এসব পরিসংখ্যান তৈরি করেন, তারা সত্যবাদী নন।”

যারা বাঘ বিলুপ্তির শঙ্কায় ভুগছেন, তাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, “চলেন বাঘ গুণতে যাই। তারপর বলি, কে কত বাঘ দেখতে পেয়েছি।”

ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে বাংলাদেশের বন বিভাগ ও ভারতের বন্য প্রাণী ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা যায়, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বর্তমানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে মাত্র ১০৬টি।

১৯৭৫ সালের জরিপে (বুবার্ট হ্যান্ড্রিস) সুন্দরবনে ৩৫০টি বাঘের সংখ্যা নিরূপণ করা হয়। ১৯৮৪ সালের জরিপে (গিটিন্স ও আকন্দ) ৪৩০টি থেকে ৪৫০টি, ১৯৯২ সালে বন বিভাগের জরিপে ৩৫৯টি, ১৯৯৩ সালের পদচিহ্ন জরিপে (তামাংগ ও দে) ৩৬২টি, ২০০৪ সালের পাগমার্ক পদ্ধতির শুমারিতে (বন বিভাগ, ইউএনডিপি ও ভারতীয় বিশেষজ্ঞ) ৪৪০টি (২১ বাচ্চাসহ) ও ২০০৯ সালে রেডিও টেলিমেট্রি জরিপে (বন বিভাগ ও ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশ) ৪০০টি থেকে ৪৫০টি বাঘ রয়েছে বলে ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঘ কমে যাওয়ার অর্থ হল, এই প্রাণীটির আবাসস্থল সঙ্কটে পড়েছে।

গত সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় ‘বিশ্ব বাঘ স্টকটেকিং সম্মেলনে’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বাঘ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বাঘ হত্যা ও বাঘের আবাসস্থল সঙ্কোচনের ফলে এই প্রাণীটি এখন বিলুপ্তির পথে।

বিশ্বনেতাদের প্রতি সে সময় তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন, “আসুন সকলে মিলে আমরা বাঘ বাঁচাই, প্রকৃতি বাঁচাই।”

অবশ্য প্রধানমন্ত্রী বা বিশেষজ্ঞদের ওই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।

বাঘ দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “প্রথমত বাঘ আমাদের দেশের প্রাণী নয়। এটি এখানে মাইগ্রেশন করে এসেছে। অনেক প্রাণী ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে। কিন্তু এটুকু নিশ্চিত, এখানে আমরা যারা উপস্থিত রয়েছি, আমাদের জীবদ্দশায় বাঘ বিলুপ্ত হবে না।”

এই বিশ্বাসের পেছনে মন্ত্রীর যুক্তি, “যতো বাঘ বনে আছে, তার চেয়ে বেশি আছে খাঁচায়। সুতরাং বাঘ বিলুপ্ত হয়ে যাবে না। অন্তত আমাদের জীবদ্দশায় নয়।”

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, বাঘ রক্ষার জন্য বিশ্ব ব্যাংক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে। তারা বাঘ সংরক্ষণকে উৎসাহিত করে। কিন্তু যখনই বাঘ কমে যাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়, তখনই দায়ী করা হয় সরকারকে। যারা ‘রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছেন’ তাদের কেউ ‘কিছু বলে না’।

অবশ্য এরপর মন্ত্রীর কথায় পাওয়া যায় অন্য সুর। বাঘ রক্ষায় সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, “দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বাঘ রক্ষা করতে চায় না বলেই আমার মনে হয়। কারণ সুন্দরবনের গাছ তাদের কাটতেই হবে।

“এখানে কোনো বিকল্প জ্বালানি নেই। মানুষকে টিকে থাকার জন্য সুন্দরবনের উপরে নির্ভর করতে হবে। বাঘ রক্ষার মন মানসিকতা মনে হয় আমাদের নেই।”

পরিবেশবাদীদের কটাক্ষ করে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, “সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশ থেকে বাঘ ভারতের দিকে চলে যাচ্ছে বলে অনেকে হৈ চৈ করেন। আমি বলি, বাঘ ওপারে বেড়াতে গেছে, আবার চলে আসবে।” 

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাঘ গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ।

অন্যদের মধ্যে বন উপ-মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার আকিবুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।