উচ্চ শিক্ষার পথ হারাচ্ছে কওমীর শিক্ষার্থীরা

কওমী মাদ্রাসাকে মূল ধারায় নিয়ে আসার চেষ্টা হলেও নিজেদের কর্তৃত্বে ভাটা পড়ার শঙ্কায় সাড়া দিচ্ছেন না তারা। এতে ইচ্ছে থাকলেও উচ্চ শিক্ষার পথ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী।

শহীদুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2015, 02:49 PM
Updated : 28 July 2015, 03:00 PM

অবশ্য এ বিষয়টি নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয় বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড।

যাত্রাবাড়ি এলাকার একটি কওমী মাদ্রাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী যেমন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, পরিবারের অন্যান্য সদস্য সাধারণ শিক্ষা গ্রহণ করলেও তাকে এখানে পাঠানো হয়েছিল। থাকার ইচ্ছে না থাকলেও এখন সে ফিরে যেতে পারছে না।

“আমি কয়েকবার চেষ্টাও করেছিলাম। তবে পিএসসি এবং জেএসসি পাসের সনদ না থাকায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারিনি। একটি সুযোগ আছে তা হলো নতুন করে আবার শুরু করা।”

২০১০ সাল থেকে ইবতেদায়ী পরীক্ষা চালুর পরে কওমী শিক্ষার্থীদের মূল ধারার (আলিয়া) মাদ্রাসায় ভর্তির সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ কে এম ছায়েফ উল্যা জানান, শুধুমাত্র ইবতেদায়ী পরীক্ষা দিতে অল্প কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী এখনো আলিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়।

তিনি বলেন, “ইবতেদায়ী পরীক্ষা চালুর আগে অনেক কওমী শিক্ষার্থী আলিয়া মাদ্রাসার বিভিন্ন শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে (মাধ্যমিক পর্যন্ত) পরীক্ষা দিত। কিন্তু এখন ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ভর্তি হতে সনদ প্রয়োজন।”

জানতে চাওয়া হলে বেফাক মহাসচিব আব্দুল জব্বার জাহানবাদীও শিক্ষার্থীদের এই সুযোগ না থাকার কথা জানান।

“এটা ঠিক যে মাদ্রাসায় ইবতেদায়ী চালুর পর আমাদের শিক্ষার্থীরা আর সেখানে গিয়ে পরীক্ষা দিতে পারে না। আগে অনেকেই আলিয়া মাদ্রায় ভর্তি হতে ডিগ্রি নিত।”

সুযোগ সৃষ্টিতে কোনো চেষ্টা-তদবির আছে কিনা সে বিষয়ে কথা বলতে চাননি তিনি।

বেফাকের হিসাব অনুযায়ী, এই বোর্ডের অধীনে বাংলাদেশের পাঁচ হাজার দুইটি কওমী মাদ্রাসায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন, যার মধ্যে ৯০৯টি আবার মহিলা মাদ্রাসা।

দুর্বল পাঠ্যসূচির কারণে পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করে উত্তরার একটি কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী বলেন, “ডিজিটাল যুগে আমাদের পড়ানোর ধরন অ্যানালগের চেয়েও পিছিয়ে। একেতো আমরা সাধারণ শিক্ষা নিতেই পারছি না, তার সঙ্গে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার পথও হারাচ্ছি।” 

সরকারের নিয়ন্ত্রণে গেলে যদি মান বাড়ে, সেক্ষেত্রে তা করা উচিত বলেই মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনও কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচিতে পরিবর্তন আনার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত একটি লেখায়।

ওই লেখায় তিনি মন্তব্য করেন, “আন্তরিক, গভীর ও আস্থা সৃষ্টিতে সক্ষম আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কয়েক লক্ষ কওমী মাদ্রাসার বিদ্যার্থীকে তাদের বর্তমান সিলেবাসের অতিরিক্ত হিসেবে দেশে-বিদেশে কদর আছে এমন বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও সরকার প্রদত্ত বৃত্তির টাকায় পড়তে পারার সুযোগ প্রদান করা দরকার।”

অবশ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে গেলে ধর্মীয় শিক্ষার ধারা থাকবে না এমন আশঙ্কা কওমী মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রকদের।

বেফাকের মহাসচিব আব্দুল জব্বার বলেন, “সরকারের প্রস্তাব থাকলেও আমরা মূলধরার শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি না কারণ নৈতিকতার বিষয় আছে।

“আমরাও যে সমাজের অংশ হিসাবে কাজ করছি সরকার এটা বিশ্বাস করতে চায় না। সরকারের মধ্যে এই বিশ্বাস না থাকলে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা যায় না।”

তিনি বলেন, “অর্থ দিয়ে সরকার আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলেও আমরা তা নিতে পারি না। তারা তো টাকা দিয়ে খবরদারি করবে। টাকা নিলে তাদের হুকুম মানতে হবে। কিন্তু ধর্ম কখনও কারো নির্দেশমত চলে না।”

“বড়জোর তদারকি করতে পারে, নিয়ন্ত্রণ কথাটা আমরা শুনতে চাই না। আমরা কি এখনো ব্রিটিশ কলোনি নাকি?”

কওমী শিক্ষার্থীদের যেসব বই পড়ানো হয় সেগুলোর মান নিয়ে জব্বারের দাবি, “(মান) সমান না হলেও কাছাকাছি আছে, ফেলে দেওয়ার মত না।”

এসব বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, “কওমী মাদ্রসাকে মূল ধারায় নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। আমরা তাদের সহযোগিতা দিতে চাই এবং সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখব।”

কওমী মাদ্রাসা নিয়ে এ সংক্রান্ত কমিশন একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এনিয়ে আলোচনা চলছে, তবে আরো সময় লাগবে।”