কওমীর ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু নেই

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে হাই কোর্টের রায় থাকলেও তা মানছে না বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক)। তাদের পাঠ্য পুস্তকে জিয়াউর রহমানই ঘোষক।

শহীদুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2015, 12:50 PM
Updated : 27 July 2015, 06:38 PM

এতে প্রকৃত ইতিহাস থেকে দূরে থাকছেন কওমীর শিক্ষার্থীরা। জানছেন ভুল, শিখছেন ভিন্ন ইতিহাস।

সরকারের নিয়ন্ত্রণহীন কওমী মাদ্রাসার বিভিন্ন পর্যায়ের পাঠ্যবই ঘেঁটে এই বিকৃত ইতিহাসের বিষয়টি ধরা পড়ে, যে বই ছাপানোর কাজটিও করছে তারা নিজেরাই।  

বেফাক বলছে, জেনেশুনেই তাদের পাঠ্যপুস্তকে ঘোষক হিসেবে জিয়াউর রহমানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঘোষক মানতে তাদের আপত্তি রয়েছে।

নিজেদের হিসাব অনুযায়ী, পাঁচ হাজার দুইটি কওমী মাদ্রাসায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।

কওমী মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির ইতিহাস বইয়ে ‘স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যরাতে ইতিহাসের বৃহত্তম গণহত্যা শুরু হয়। শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। দেশবাসী দিশেহারা হয়ে পড়ে।

এমনি এক সময়ে ২৭ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তার ঘোষণা শুনে বাংলার জনগণ অনুপ্রাণিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

প্রবন্ধে জিয়াকে স্বাধীনতার ‘ঘোষক’ বলা হলেও শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক বা বঙ্গবন্ধু হিসাবেও উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি মুক্তিযুদ্ধে কতজন শহীদ হয়েছেন সে বিষয়েও কোনো তথ্য নেই।

কওমী শিক্ষার্থীদের ইতিহাস বইগুলো ঘেটে দেখা যায় সেখানে শুধু বিকৃত তথ্যই নয়, বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের কোনো বিষয় নেই এসব বইয়ে।

কওমী শিক্ষার্থীদের তৃতীয় শ্রেণির ইতিহাস বইয়ের পাঠ্যসূচি। ইতিহাসের অন্য বইগুলোর পাঠ্যক্রমের ধরনও প্রায় একই।

২০০৯ সালের ২১ জুন হাই কোর্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসাবে রায় দেয়। ওই রায়ে ইতিহাস বিকৃতির জন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশনা রয়েছে।

ওই রায়ে আরও বলা হয়, যারা এরকম ইতিহাস বিকৃতির সঙ্গে জড়িত তারা সংবিধান লংঘন করেছে। যারা বিকৃত ইতিহাস রচনা করেছেন সেই প্রণয়ন কমিটির বিরুদ্ধে ধোকাবাজি ও সংবিধান লংঘনের অভিযোগে সরকার চাইলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঘোষক নিয়ে হাই কোর্টের রায়ের বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বেফাক মহাসচিব মাওলানা আব্দুল জব্বার জাহানবাদী।

তবে ‘আইন করে’ বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার ঘোষক বলাটা ‘জুয়াচুরি’ বলেই মনে করেন তিনি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আব্দুল জব্বার বলেন, “সরকার আইন করে শেখ মুজিবকে স্বাধীনতার ঘোষক বলাটা ভুয়া আইন, জুয়াচুরি- এটা হয় না। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক- আমিও এটার পক্ষে। জেনেশুনেই তাকে স্বাধীনতার ঘোষক বলা হয়েছে।”

হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত আব্দুল জব্বার আরও বলেন, “স্বাধীনতার চিন্তা শেখসাব করেন নাই। এটার মূলভিত্তি রচনা করেন মাওলানা ভাসানী...। (বঙ্গবন্ধুর) আন্দোলনের বেশ আগে তারা পল্টনে মিটিং করিয়া বলেছেন, পশ্চিম পাকিস্তানি ভাইয়েরা তোমাদের আমরা সালাম জানাই। এই সালাম মানে হলো তোমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সালাম।”

‘স্বাধীনতার ঘোষক তো শেখ মুজিব না’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তিনি তো পাকিস্তানের জেলখানায় ছিলেন। ঘোষণা তো জিয়াই দিয়েছেন। উনি (বঙ্গবন্ধু) তো জেলখানায়, কোথায় ঘোষণা দিয়েছেন?”

নিজেদের পাঠ্যপুস্তকে শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা হিসাবে উল্লেখ না করলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অনেক অবদান রয়েছে বলে স্বীকার করেন জব্বার।

কওমী শিক্ষার্থীদের বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তবে কওমী শিক্ষার্থীদের মূল ধরার সঙ্গে যুক্ত করতে কাজ চলছে বলে জানান তিনি।


(কওমী মাদ্রাসা নিয়ে আরও দুটি প্রতিবেদন আসছে)