জাহাজ ভাঙায় আইন ভাঙলে জেল-জরিমানা

জাহাজ ভাঙার কাজে নিয়ম না মানলে সর্বোচ্চ ৩০ লাখ টাকা জরিমানা ও এক বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে আইন করার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 July 2015, 09:11 AM
Updated : 27 July 2015, 10:24 AM

অনুমতি ছাড়া জাহাজ আমদানি, ইয়ার্ড নির্মাণ ও আমদানিতে মিথ্যা তথ্য দিলে বিভিন্ন মেয়াদে এ শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘বাংলাদেশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ আইন, ২০১৫’ এর খসড়ার এই নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এ আইনের আওতায় ‘জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ বোর্ড’ গঠন করা হবে।

মন্ত্রণালয়, সংস্থা, শিপ রিসাইক্লিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি ও অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা এই বোর্ডে থাকবেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হবেন এর চেয়ারম্যান। সার্বক্ষণিক দায়িত্বে থাকবেন সরকারের নিয়োগ পাওয়া একজন মহাপরিচালক,  যিনি হবেন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী।

“এই বোর্ড ইয়ার্ড স্থাপনের অনুমতি ও অনাপত্তিপত্র দেবে। রিসাইক্লিং ফ্যাসালিটি প্ল্যান তৈরি করবে। শ্রমিক নিরাপত্তা ও স্বার্থ সংরক্ষণ, দূষণ রোধ ও পরিবেশের বিষয়গুলো দেখবে এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মান নিশ্চিত করতে পরিবেক্ষণ করবে।”

বাংলাদেশ শিপ ব্রেকিং অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ইস্পাতের চাহিদার প্রায় ৮৫ শতাংশের জোগান দেওয়া হয় জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে। এই ব্যবসার আকার প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা।

তবে ঝুঁকিপূর্ণ কর্মপরিবেশ, দূষণ ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার অভাবের কারণে বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙা শিল্প বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নেতিবাচক শিরোনাম হওয়ায় আইন করে কড়াকড়ি আরোপের তাগিদ ছিল আগে থেকেই। 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ শিল্পে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের সুরক্ষা, কাজের পরিবেশ, সামুদ্রিক পরিবেশ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মত বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করে শিল্প মন্ত্রণালয় আইনের এই খসড়া মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করে।

“এর আগে শিপ ব্রেকিংয়ের বিষয়টি নৌ পরিবহন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় দেখলেও এখন সমন্বিত ব্যবস্থাপনার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”

এ আইনের আওতায় বিভিন্ন শাস্তির বিধান তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ বোর্ডের অনুমতি ছাড়া জাহাজ আমদানি করলে বা ভাঙলে ১০ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

সেইসঙ্গে এক বছরের কারাদণ্ড বা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য জাহাজ আমদানিতে মিথ্যা তথ্য দিলে ৫ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা, বা ছয় মাসের কারাদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

আর বোর্ডের অনুমতি ছাড়া ইয়ার্ড নির্মাণ করলে ১০ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা, বা এক বছরের কারাদণ্ড অথবা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

এছাড়া বোর্ডের কর্মকর্তাদের পরিদর্শনের সময় কেউ যদি ‘যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া’ সহযোগিতা না করে, সেক্ষেত্রে ৫ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা  ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান।

হাই কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১১ সালে বর্তমান ‘শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং রুলস’ জারি করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকার ফিল করছে যে, এটার আইনি কাঠামো আরও শক্তিশালী করা দরকার।”

এর ব্যাখ্যায় মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, বাংলাদেশের ইস্পাত কারখানাগুলোর কাঁচামালের বড় একটি অংশ এই জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকেই আসে। 

“আগে বলা হত শিপ ব্রেকিং। কিন্তু এখন বলা হয় শিপ রিসাইক্লিং। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে।”

২০১১ মাসের মার্চে সরকার জাহাজ নির্মাণ, জাহাজ ভাঙা ও জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণকে শিল্প ঘোষণা করে।

প্রস্তাবিত আইনে সাতটি অধ্যায় ও ২৯টি ধারা রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এর আওতায় ‘জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ জোন’ হবে। সেখানেই ইয়ার্ড করতে হবে।