‘সাকার রায় পরিবর্তনের ষড়যন্ত্র হলে আগুন জ্বলবে’

যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিলের চূড়ান্ত রায় নিয়ে ‘ষড়যন্ত্রের’ আশঙ্কা প্রকাশ করে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, এই যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি ছাড়া অন্য কোনো কোনো রায় মেনে নেওয়া হবে না।   

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2015, 06:14 PM
Updated : 25 July 2015, 07:01 PM

তিনি বলেছেন, “কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সাকার রায় পরিবর্তনের কোনো ষড়যন্ত্র হলে সারাদেশে আগুন জ্বলবে।”

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতার পাশাপাশি নিরীহ মানুষ হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিনের আপিলের রায় আগামী ২৯ জুলাই দেবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত।

সাবেক এই মন্ত্রী এবং দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এই নেতার মৃত্যুদণ্ডের রায় যেন কোনোভাবে ঘুরে না যায়, সেই লক্ষ্যে যে কোনো পরিস্থিতিতে শুক্রবার থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি চালিয়ে আসছে গণজাগরণ মঞ্চ।

শনিবার বিকাল ৪টায় দ্বিতীয় দিনের মতো শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে অবস্থান নেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী-সমর্থকরা।বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে স্লোগান চালিয়ে যান তারা।

যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল মানুষকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। গণজাগরণ মঞ্চ রাজপথে আছে, যত বাধা বিপত্তিই আসুক না কেন, গণজাগরণ মঞ্চ রাজপথেই থাকবে।”

তিনি বলেন, “এই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী (সালাউদ্দিন) একটি রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ছিল। আমরা ইতোপূর্বেও দেখেছি সে তার পারিবারিক ও রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে নানাভাবে বিচার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত ও বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। কোনো অপশক্তি যেন এই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীকে বাঁচাতে না পারে তার জন্য ২৯ জুলাই আপিল বিভাগ কর্তৃক চূড়ান্ত রায় প্রদানের দিন পর্যন্ত গণজাগরণ মঞ্চ রাজপথে থাকবে।”

দেশ ও বিদেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সমালোচনা করে ইমরান বলেন, “শিশু রাজনের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর কোনো মানবাধিকার সংগঠনকে দেখলাম না রাজনের জন্য বিচার চাইতে। অথচ এরাই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারিক রায় কার্যকর হলে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে খুনিদের বাঁচানোর চেষ্টা করে।

“এরা কি আসলে মানবাধিকার সংগঠন নাকি দানবাধিকার সংগঠন? মানবাধিকার সংগঠন হলে তাদের কানে কি চট্টগ্রামের মানুষের কান্না পৌঁছে না? পৌঁছালে এখন তো তাদের রাজাকার সাকার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে রাজপথে থাকার কথা।”

কর্মসূচি শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘুরে পুনরায় শাহবাগে এসে শেষ হয়।

‘জঙ্গিদের’ হামলায় নিহত গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক রাজীব হায়দারের বাবা ডা. নাজিম উদ্দিন, ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান তারেক, ভাস্কর রাসা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

চট্টগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়।

এর আগে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ আপিলের রায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডে নেমে এসেছিল জামায়াতে ইসলামীর নায়েব আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ক্ষেত্রে, যিনিও সংসদ সদস্য ছিলেন।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ক্ষেত্রে এমনটা হওয়া ষড়যন্ত্র হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ইমরান এইচ সরকার।

গত বৃহস্পতিবার তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সম্প্রতি একটি বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যে ইতোমধ্যে তার পরিবারের সদস্যরা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেছেন।

“সে একটি প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। তার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক লবিংও যথেষ্ট শক্তিশালী। এই বিষয়গুলো রায়ের ক্ষেত্রে আদৌ কোনো প্রভাব ফেলবে কি না- এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ও শঙ্কার অবকাশ আছে।”

আগেও বিভিন্ন সময় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত করতে সালাউদ্দিন কাদেরের চেষ্টার ঘটনাগুলো তুলে ধরে ইমরান বলেন, “তার এই রায়কে কেন্দ্র করে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব মানুষকে আমি রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধই হবে সব ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব।”

ইমরান বলেন, “এ পর্যন্ত যতজন যুদ্ধাপরাধীর বিচার এবং সাজা হয়েছে, তাদের মধ্যে সাকা চৌধুরী সবচেয়ে ভয়াবহ ও নৃশংস। সাকা চৌধুরীর নেতৃত্বেই একাত্তরে চট্টগ্রামে গণহত্যার মহোৎসব চলে। একাত্তরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে যত যুদ্ধাপরাধ হয়েছে, তার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ইতোমধ্যে প্রমাণিত।”

একাত্তরে চট্টগ্রামের রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর ও ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ছেলেকে অপহরণ করে খুনের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সালাউদ্দিন কাদেরকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর গ্রেপ্তারের পর প্রায় তিন বছর বিচারের পরিক্রমায় এই রায় হয়। তার ওই রায় আগেই ফাঁস করার অভিযোগেও একটি মামলা রয়েছে, যাতে তার স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী এবং ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী আসামি।