‘প্রচারপত্রের পর কোয়ার্টার গার্ডে ছিলেন ১১ মেজর’

বিডিআর বিদ্রোহের চারদিন আগে ডালভাত কর্মসূচি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগসহ বিভিন্ন দাবিতে জওয়ানদের প্রচারপত্র পাওয়ার পর ১১ জন মেজর পদবির কর্মকর্তাকে কোয়ার্টার গার্ডে পালাক্রমে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Nov 2011, 12:34 PM
Updated : 30 Nov 2011, 12:34 PM
ঢাকা, ডিসেম্বর ০১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বিডিআর বিদ্রোহের চারদিন আগে ডালভাত কর্মসূচি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগসহ বিভিন্ন দাবিতে জওয়ানদের প্রচারপত্র পাওয়ার পর ১১ জন মেজর পদবির কর্মকর্তাকে কোয়ার্টার গার্ডে পালাক্রমে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
পিলখানা হত্যা মামলার বিচার চলাকালে বুধবার সাক্ষী মেজর তারেক মোহাম্মদ ভাওয়ালি তার জবানবন্দিতে এ কথা বলেন।
বকশিবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ মামলার বিচার কাজ চলছে। বিচারক জহুরুল হক এ মামলার বিচার পরিচালনা করছেন। সকাল ৯টায় আদালত শুরু হয়ে মাঝে একঘণ্টা বিরতি দিয়ে টানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে। আদালত আগামী ৫ নভেম্বর সকাল ৯টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছে চিঠি বিলি করা এবং অতিথিদের উপন্থিতি নিশ্চিত করার দায়িত্বে ছিলেন মেজর তারেক।
তিনি তার জবানবন্দিতে বলেন, “কোয়ার্টার গার্ডে দায়িত্ব পালনকালে ২৪ ফেব্র“য়ারি মেজর শাহনেওয়াজের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন সিপাহী সেলিম, সিপাহী মইন, নায়েক একরাম ডালভাত কর্মসূচি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগসহ বিভিন্ন দাবিতে প্রচারিত প্রচারপত্র বিভিন্নস্থানে লাগিয়েছে।”
এই খবর জানার পর আপনি কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন?- আসামি পক্ষের আইনজীবীদের এ প্রশ্নে তারেক ‘না’ সূচক জবাব দিয়ে বলেন, “ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কোনো বিধান নেই এই বাহিনীতে।”
জবানবন্দিতে তারেক বলেন, তিনি বিডিআর সপ্তাহের একটি চিঠি দিতে নাখালপাড়ার বাসা থেকে বের হন ২৫ ফেব্র“য়ারি সকালে। কিন্তু চিঠির খামটি ময়লা হওয়ায় পিলখানায় যাওয়ার জন্য রওনা হলে বিদ্রোহের খবর জানতে পারেন আর এ কারণে তিনি আর পরে পিলখানায় যেতে পারেননি।
২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্র“য়ারি তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদর দপ্তর পিলখানায় জওয়ানদের
বিদ্রোহে ৫৬ সেনা কর্মকর্তাসহ অন্তত ৭৩ জন নিহত হয়। এ বিদ্রোহের কদিন আগে অভিযোগ ও দাবির ওই প্রচারপত্র বিলি হয় সেখানে।
বিদ্রোহের পর বাংলাদেশ রাইফেলসের নাম পাল্টে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) করা হয়। বদলানো হয় বাংলাদেশের এ সীমান্ত রক্ষাবাহিনীর পোশাকও।
গত ২৩ নভেম্বর শুরু হওয়া মেজর আর এম এম আসাদ-উদ-দৌলার অসমাপ্ত জেরা বুধবার শেষ হওয়ার পর তারেক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা শুরু করেন।
আসাদ-উদ-দৌলাকে আসামি ডিএডি মির্জা হাবিবুর রহমান বুধবার নিজেই জেরা করেন। তার এই জেরার সময় আদালতে দুই পক্ষের মধ্যে বেশ হৈচৈ হয়। তবে আদালত উভয়পক্ষকে আইনসঙ্গত মার্জিত ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ দেন।
জেরার সময় হাবিবুর রহমান দাবি করেন রাষ্ট্রপক্ষ মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে তাদের খুনের মামলায় জড়ানোর চেষ্টা করছে।
এদিকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গত ২৭ নভেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ আদালতের বিচারক মো. জহুরুল হকের অবকাশকালীন ছুটি বাতিল করে।
সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে শুধু জহুরুল হকের আদালতে চলা মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
আগামি ধার্য তারিখেও মেজর তারেককে আসামি পক্ষের আইনজীবিরা জেরা করবেন।
গত ২৪ অগাস্ট এ মামলার সাক্ষ্য ও জেরা গ্রহণ শুরু হয়। প্রথম সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী লালবাগ থানার সাবেক ওসি নবজ্যোতি খিসা। দ্বিতীয় সাক্ষ্য দেন নিউমার্কেট থানার সাবেক ওসি কামাল উদ্দিন। তৃতীয় সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন সিগন্যাল সেক্টরের সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাসনিম। চতুর্থ সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন কর্নেল শামস। পাঁচ নম্বর সাক্ষী ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল মুকিম সরকার। ছয় নম্বর সাক্ষী আসাদ-উদ-দৌলার পর সাত নম্বর সাক্ষী মেজর তারেক মোহাম্মদ ভাওয়ালি।
বিডিনিউজ টোয়োন্টিফোর ডটকম/এলএইচ/পিডি/০০২৮ ঘ.