বিদ্রোহের বিষয় জানতাম না: কর্নেল সামস

বিডিআর সদরদপ্তর পিলখানায় বিদ্রোহের বিষয়টি জানতেন বলে আসামি পক্ষের জেরার জবাবে বলেছেন সে সময়কার ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক কর্নেল শামসুল আলম চৌধুরী।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2011, 11:27 AM
Updated : 19 Oct 2011, 11:27 AM
ঢাকা, অক্টোবর ১৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বিডিআর সদরদপ্তর পিলখানায় বিদ্রোহের বিষয়টি জানতেন বলে আসামি পক্ষের জেরার জবাবে বলেছেন সে সময়কার ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক কর্নেল শামসুল আলম চৌধুরী।
বিদ্রোহের শুরুতে সিপাহি মইন যে অস্ত্র মহাপরিচালকের মাথায় তাক করেছিলেন সেটি ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়েনের অস্ত্র ছিল এবং বিদ্রোহ সর্ম্পকে তিনি জানতেন- আসামি পক্ষের এ প্রশ্নেœর জবাবে কর্নেল শামসুল আলম চৌধুরী বুধবার বলেন, "এসব কোনো বক্তব্যই সত্য নয়।"
রাজধানীর বখশিবাজার আলীয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন মাঠে পিলখানা হত্যা মামলার বিচারে নির্মিত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিশেষ এজলাসে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় কার্যক্রম শুরু হয়।
দুই দফা বিরতি দিয়ে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একটানা আদালত চলে। বিচারক জহুরুল হক ২৬ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত আদালত মূলতবি ঘোষণা করেন।
গত ১২ অক্টোবর ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্সের (এনএসআই) পরিচালক কর্নেল শামসুল আলম চৌধুরী সাক্ষী হিসাবে তার জবানবন্দি দেন এবং এরপরই তাকে জেরা শুরু হয়। সেদিনের অসমাপ্ত জেরা বুধবার শুরু হয় এবং আগামী ধার্য তারিখে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তাকে আবার জেরা করবেন।
বিডিআর বিদ্রোহ এবং হত্যার ঘটনার সময় কর্নেল সামস পিলখানায় ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের (বর্তমানে ৪৪ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি) অধিনায়ক ছিলেন।
সাক্ষী কর্নেল সামসকে উদ্দেশ্য করে আসামি পক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, "২০০৯ সালের ২৫ ফেব্র"য়ারি পিলখানায় দরবার শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে সিপাহি মাইন একটি অস্ত্র নিয়ে মঞ্চে উঠে সেসময়ের মহাপরিচালকের মাথায় তাক করেন। পরে মইনকে নিরস্ত্র করা হয়।
"মইনের হাতে থাকা এই অস্ত্রটি দেখে মহাপরিচালক কর্নেল সামসকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, 'শামস- এ অস্ত্র তোমার ব্যাটালিয়নের।' এ সময় দরবার হলে উপস্থিত অন্যান্য অফিসাররাও একই কথা বলেছিলেন।"
আইনজীবীর এ বক্তব্যের পর কর্নেল শামস বলেন, "এসব বক্তব্য সত্য নয়।"
ফারুক আহম্মেদ সিপাহি সেলিম রেজাসহ ১২০ জন আসামির আইনজীবী।
বিদ্রোহের আগে লিফলেট পাওয়া, লিফলেট নিয়ে তৎকালীন মহাপরিচালকের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক, সেখানে কর্নেল সামসের উপস্থিতি, বিদ্রোহীদের মিছিলের শ্লোগান 'জয় বাংলা, জয় বিডিআর' এসব বিষয়ে আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ সাক্ষীর কাছে জানতে চাইলে কর্নেল সামস বলেন, তিনি জানেন না এবং ঠিক নয়।
বিডিআর বিদ্রোহ এবং হত্যার ঘটনার একদিন আগে ২০০৯ সালে ২৪ ফেব্র"য়ারি প্রধানমন্ত্রীর পিলখানায় আসেন এবং 'রাইফেলস সপ্তাহ'এর উদ্বোধন করেন। সেসময় প্রধানমন্ত্রীর প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন কর্নেল সামস।
আসামি সিপাহী রফিকুল ইসলামের আইনজীবী শামীম সরদার সাক্ষী কর্নেল শামসকে প্রশ্ন করেন, "প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে বিদ্রোহ সম্পর্কে আগে থেকেই আপনি জানতেন।" জবাবে কর্নেল শামস এটা সত্য নয় বলে জানান।
একই আইনজীবী সাক্ষীকে বলেন, "আপনি বিদ্রোহ সম্পর্কে জানতেন এবং সেটা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর পিলখানায় পরবর্তী কর্মসূচি বাতিল করা হয়।"
জবাবে কর্নেল শামস বলেন, "সত্য নয়।"
এছাড়াও কর্নেল শামস বিদ্রোহে জড়িত ছিলেন, বিদ্রোহ সফল করার জন্য বদলির আদেশ স্থগিত করেন- আসামি পক্ষের আইনজীবীর এসব বক্তব্য সত্য নয় বলে জানান সাক্ষী সামস।
ডিএডি তৌহিদুল আলমের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম জেরা করতে গিয়ে সাক্ষীকে বলেন, "ডিএডি তৌহিদ বিডিআর বিদ্রোহে অংশ নেননি বরং তিনি সরকারের পক্ষে বিদ্রোহ দমনে তৎপর ছিলেন।"
এর জবাবে কর্নেল সামস, "সত্য নয়।"
কর্নেল সামস গত ১২ অক্টোবর দেওয়া তার জবানবন্দিতে বিডিআর বিদ্রোহের সময় তিনি কীভাবে প্রাণে বেঁচে যান এবং বিডিআরের কয়েকজন যে তাকে এ ব্যাপারে সহায়তা করেন তার বিশদ বর্ণনা দেন। একই সঙ্গে তিনি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
গত ২৪ অগাস্ট এ মামলার সাক্ষ্য ও জেরা গ্রহণ শুরু হয়। প্রথম সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী লালবাগ থানার সাবেক ওসি নবজ্যোতি খিসা। দ্বিতীয় সাক্ষ্য দেন নিউমার্কেট থানার সাবেক ওসি কামাল উদ্দিন। তৃতীয় সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন সিগন্যাল সেক্টরের সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাসনিম। কর্নেল শামস চতুর্থ সাক্ষী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এলএইচ/পিডি/২৩২৫ ঘ.