পিলখানা হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ গ্রহণ

পিলখানায় হত্যাকাণ্ড ও লুণ্ঠনের মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে শুনানি ৩ ফেব্র"য়ারি পর্যন্ত মুলতবি করেছে আদালত। (বিস্তারিত)

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2011, 05:01 AM
Updated : 2 Sept 2013, 05:41 AM

ঢাকা, জানুয়ারি ০৫ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- পিলখানায় হত্যাকাণ্ড ও লুণ্ঠনের মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে শুনানি ৩ ফেব্র"য়ারি পর্যন্ত মুলতবি করেছে আদালত।

প্রায় দুই বছর আগে বিদ্রোহের সময় সংঘটিত হত্যা ও লুণ্ঠনের বিচার বুধবারই শুরু হয়। আদালতের কার্যক্রমের শুরুতেই ন্যায়বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন বিচারক ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জহুরুল হক।

সকাল ১১টা ১০ মিনিটে আসন গ্রহণ করেই তিনি বলেন, এটি হবে বিশ্বের অন্যতম বড় একটি বিচার। এখানে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে।

ন্যায়বিচারের জন্য রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের আইনজীবীদের কাছে তিনি সহযোগিতা চাইলে আইনজীবীরাও বিচার কাজ সুষ্ঠুভবে শেষ করতে তা দেওয়ার প্রতিশ্র"তি দেন।

অভিযোগ আমলে নেওয়ার পর দুপুর ১টায় আদালত ৩ ফেব্র"য়ারি পর্যন্ত মুলতবির আদেশ দেন বিচারক।

মামলার আসামি বিডিআর সদস্যদের সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে হাজির করা হয় আলিয়া মাদ্রাসা ও কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে স্থাপিত আদালতে। রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের মিলিয়ে ২ শতাধিক আইনজীবী ছিলেন আদালতে। অস্থায়ী এ আদালত এলাকা ঘিরে ছিলো পুলিশ-র‌্যাব সদস্যরা। ছিলো দমকল বাহিনীর গাড়িও।

হত্যা-লুণ্ঠনের মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৮২৪ জন। এর মধ্যে ২৩ জন বেসামরিক ব্যক্তিও রয়েছেন। বিশাল এ সংখ্যার আসামিদের একত্রে বিচারের জন্যই আলিয়া মাদ্রাসা ও কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে বসানো হয়েছে অস্থায়ী এ আদালত।

আদালতে হাজির করা হয় ৮০১ আসামিকে। ২১ আসামি পলাতক রয়েছেন। আর দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

বিদ্রোহের বিচার বিডিআর আদালতে এক বছরের বেশি সময় আগে শুরু হয়ে গেলেও বুধবারই শুরু হলো ফৌজদারি অপরাধের বিচার।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আসামিদের আদালতে নেওয়া শুরু হয়। কয়েক দফায় প্রিজন ভ্যানের করে ১১টার দিক সব আসামিকে আদালতে নেওয়ার কাজ শেষ হয়। বেশিরভাগ আসামিরই হাতে-পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি দেখা গেছে।

প্রতিটি প্রিজন ভ্যানে অনেকজনকে নেওয়া হলেও বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুকে যে প্রিজন ভ্যানে নেওয়া হয়, তাতে আর কোনো আসামি ছিলেন না। আদালতের কার্যক্রম শুরুর পরপরই পিন্টুর আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া জামিনের আবেদন করেন। এছাড়া মামলার এক নম্বার আসামি ডিএডি তৌহিদুল আলম, তোরাব আলী আকন্দসহ মোট ৭০ জন আসামির পক্ষেও জামিনের আবেদন হয়।

সানাউল্লাহ মিয়া পিন্টুর জামিন আবেদনে বলেন, "বিডিআর বিদ্রোহের সময় পিন্টু ওই এলাকায় ছিলেন না। রাজনৈতিক উদ্দেশে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পিন্টুর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের বুড়িগঙ্গা নদী পার হতে সহায়তা করার যে অভিযোগ রয়েছে, তার কোনো সাক্ষীও নেই।"

আসামিপক্ষের জামিনের আবেদনের শুনানির পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আনিসুল হক জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, "আসামি পিন্টু বিদ্রোহের ঘটনার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। এছাড়া তিনি আসামিদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন। এটি একটি স্পর্শকাতর মামলা তাই কারো জামিন দেওয়া ঠিক হবে না।"

ডিএডি তৌহিদের জামিন আবেদনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, "তৌহিদ বিদ্রোহের সময় ৭৪ জনকে হত্যা করেছেন, তাই তার জামিন দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না।"

অন্যান্য আসামিদের জামিনের ব্যাপারেও বিরোধিতা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, মামলা পরিচালনা করার জন্য এজাহার, অভিযোগপত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই।

আগামী শুনানির আগেই এসব কাগজপত্র সরবরাহের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের নির্দেশ দেন বিচারক।

আদালতে বিচারক জহুরুল হক বলেন, "এ মামলা গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে ওঠার মতো মামলা। তাই এ বিচার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে হবে। আসামির সংখ্যা বেশি, তাই সময়ের দিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।"

আদালতের কার্যক্রমের এক পর্যায়ে আসামিদের সঙ্গে আইনজীবীরা বিনা অনুমতিতে কথা বলার ফলে আদালত কক্ষে বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এ বিষয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

এ সময় বিচারক বলেন, "এখানে আইনজীবীরা 'ডবল গ্রাজুয়েট' তারাই আইন মানছেন না, আসামিদের বেশিরভাগই অল্প শিক্ষিত, তাদের বলে কী হবে।"

২৭৫ ফুট দীর্ঘ একটি টিনশেড ভবনে চলছে আদালতের কাজ। আদালত কক্ষের সামনের দিকে বিচারক ও আইনজীবীদের বসার ব্যবস্থা। পেছনের অংশে আসামিদের বসার জন্য রয়েছে ছোট ছোট বেঞ্চ। মাঝখানে রয়েছে লোহার গ্রিল।

গত বুধবার আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে রাজধানীর আলিয়া মাদ্রাসা ও কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত ভবনকে অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এতে বলা হয়, এ আদালতে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার নিউমার্কেট থানার মামলার বিচারকাজ চলবে।

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী জানান, আদালত ভবন তার থানা এলাকার মধ্যে হলেও নিরাপত্তার কাজে আলাদা ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্র"য়ারি পিলখানায় বিদ্রোহের সময় নিহত হন সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ ও ৫৬ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৩ জন।

বিদ্রোহের সময় হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণসহ ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গত ১২ জুলাই ৮২৪ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

অন্যদিকে সারাদেশে বিদ্রোহের বিচার বিডিআরের বিশেষ আদালতে চলছে। কয়েকটি মামলায় ইতোমধ্যে সাজার রায়ও হয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএইচএ/আরএ/এমআই/১৬৫৫ ঘ.