স্বীকৃতি নেই কৃষি শ্রমিকদের

দেশের অর্থনীতিতে কৃষির অবদান বড় হলেও এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষের শ্রমের নেই আইনি স্বীকৃতি। নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা ও মজুরি কাঠামো- কোনোটিই নেই তাদের।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 May 2011, 02:27 AM
Updated : 1 May 2011, 02:27 AM
শামীম আল আমিন
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
ঢাকা, মে ০১ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- দেশের অর্থনীতিতে কৃষির অবদান বড় হলেও এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা মানুষের শ্রমের নেই আইনি স্বীকৃতি। নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা ও মজুরি কাঠামো- কোনোটিই নেই তাদের।
মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার চারাভাঙা, সানাইল এবং স্বরূপপুর গ্রাম ঘুরে শোনা গেলো কৃষিশ্রমিকদের বঞ্চনার কথা। দেশের অন্য স্থানগুলোর চিত্রও একই।
মানিকগঞ্জে কিছু দিন আগে ভুট্টা কাটা হয়েছে। দিন ১৫ পরে উঠবে ইরি ধান। ফসল ওঠার সময় না হওয়ায় কৃষিশ্রমিকদের ব্যস্ততা কম। তবে এরই মধ্যে কিছু শ্রমিককে দেখা গেলো পাটের জমিতে নিড়ানী দেওয়া, আখক্ষেতে মাটির দেওয়ার কাজ করতে।
নাসিরউদ্দিন নামের এক জন শ্রমিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "রোইদে পুইড়া, বৃষ্টিত ভিইজা আমরা অন্যের ক্ষেতে ফসল ফলাই। যা মজুরি পাই, তাতে দিন চলে না। মজুরিরও ঠিক-ঠিকানা নাই। যার যা ইচ্ছা তাই দেয়।"
চারাভাঙার আনোয়ারা আখ ক্ষেতে মাটি দিচ্ছিলেন কুলসুম। কাজ করতে করতেই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, "ব্যাটাগো সমান কাম কইরাও সমান মজুরি পাই না আমরা। আমগো ট্যাকা কম দেয়।"
আরো নানা ধরনের বৈষম্যের কথা তুলে ধরলেন সুন্দরি, মাজেদা বেনুসহ কয়েকজন নারীশ্রমিক।
স্বরূপপুরের আফজাল, সোনা মিয়া, আব্দুল প্রধানসহ আরো অনেকের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানালেন, সারা বছরই কাজ পান না তারা। বেকার সময়ে অনেকেই চলে আসে শহরে। কেউবা কৃষি ছেড়ে অন্য খাতে শ্রম দেন। আরো কারো বা দিন কাটে নিদারুণ কষ্টে।
মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি'র পাঁচ ভাগের এক ভাগই আসে কৃষি থেকে। অথচ কৃষির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এ শ্রমিকদের দিন কাটছে দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ 'লেবার ফোর্স সার্ভে' অনুযায়ী, দেশে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা ৬ কোটি ৩০ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ৪০ ভাগ নারী। আর দেশের শ্রমজীবী মানুষের অন্তত অর্ধেকই কৃষির সঙ্গে জড়িত।
বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি শামছুজ্জামান সেলিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কৃষক আর কৃষিশ্রমিক যে এক নয়, এ বিষয়ে ধারণা স্পষ্ট হওয়ার দরকার। কৃষিক্ষেত্রে যারা কাজ করেন, সেই সব ক্ষেতমজুরদের বেশিরভাগেরই নিজের কোনো জমি নেই।
তিনি আরো বলেন, "দেশের শ্রম আইন-২০০৬ এ এসব কৃষি শ্রমিকদের জন্য আলাদা করে কিছু বলা হয়নি। যদিও সংখ্যায় তারা সাড়ে ৩ কোটিরও বেশি। এমনকি বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধিত) আইন-২০১০ এ তাদের নিয়ে সুস্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।"
ক্ষেতমজুরদের কাজের ধরনের কারণে তাদের জন্য একটি আলাদা আইন করার দাবি জানান তিনি।
সেলিম বলেন, "কৃষিশ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দিতে হবে। এতে করে কাজের সময় তারা মালিকদের সাথে দরদাম করতে পারবে। নিজেদের সমস্যায় ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে। তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ নানা সামাজিক বিষয়ে সুবিধা পাবে।"
দেশে কৃষি শ্রমিকদের আর্থ সামাজিক অবস্থা এবং আইনি সুরক্ষার নানা দিক স