ডিজিটাল প্রযুক্তি নিয়ে কীট প্রতিরোধে নামছে কৃষি বিভাগ

ফসলের মাঠে পোকার আক্রমণ ঠেকাতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবার তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করতে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে কীট-পতঙ্গের কারণে ক্ষতির পরিমাণ ৫ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব বলে কর্মকর্তারা মনে করছেন।

সাজিদুল হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Nov 2019, 06:11 AM
Updated : 8 Nov 2019, 06:23 AM

এই কাজটি তারা করতে চান দুইভাবে। প্রথমত, মাঠে ডিজিটাল ডিভাইস বসিয়ে কীট-পতঙ্গের প্রাদুর্ভাব সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হবে। আর দ্বিতীয়ত, মাঠকর্মীদের সংগ্রহ করা তথ্য কেন্দ্রে পাঠানোর কাজে এখনকার আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে আনা হবে অ্যাপ ব্যবহার করে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্প বাস্তবায়ন শাখার উপ-পরিচালক এনায়েত হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ফসলে পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ করা যেমন সহজ হবে, তেমনি আগাম করণীয় সম্পর্কে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। তাতে কমিয়ে আনা যাবে ফসলের ক্ষতি।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সহায়তা নিয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ শুরু করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ‘টিসিপি প্রজেক্টস অন ই-পেস্ট সার্ভেলেইন্স’ শীর্ষক এ প্রকল্পের পরীক্ষামূলক পর্যায় সফল হলে শুরু হবে পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন।

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তাদের ব্লককর্মীরা এখন মাঠে মাঠে গিয়ে পোকার আক্রমণের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ এবং তথ্য সংগ্রহ করেন। সার্বিক অবস্থা দেখে তারা রিপোর্ট করেন ইউনিয়ন পর্যায়ে।

একটি ইউনিয়নের সব ব্লকের তথ্য পাওয়ার পর তা সমন্বয় করে পাঠানো হয় উপজেলায়। একইভাবে ধাপে ধাপে উপজেলা থেকে জেলা, জেলা থেকে বিভাগে সেই তথ্য পৌঁছায়।

এফএও বাংলাদেশের ন্যাশনাল পেস্ট ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের ব্লক কর্মীরা এই যে এতগুলো স্টেপে কাজ করেন, তাতে প্রচুর সময় যায়, দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়াও সম্ভব হয় না।”

‘ডিজিটাল ডিভাইস’ ব্যবহারে এই সমস্যা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ।

তিনি জানান, মাঠে কীট-পতঙ্গের প্রাদুর্ভাব সরাসরি পর্যবেক্ষণে যে ডিজিটাল ডিভাইস তারা ব্যবহার করবেন, তাতে থাকবে ক্যামেরা, ফেরোমন ট্রাপ, সেন্সর, জিপিএস ও মোডেম। ডিভাইসটি চলবে সৌর বিদ্যুতে।

এ ধরনের যন্ত্রকে বলা হয় অটোমেটেড স্মার্ট ট্র্যাপ, আর পদ্ধতিটি হল অটোমেটেড পেস্ট মনিটরিং সিস্টেম।

“ধরুন আমরা বেগুন ক্ষেতের পোকা নিয়ে কাজ করব। বেগুনের গাছ ফুটো করে দেয় এ ধরনের পোকা যেসব এলাকায় বেশি আক্রমণ করে, সেখানে মাঠে এই ডিভাইসে আমরা বসিয়ে দেব।”

ফেরোমনে আকৃষ্ট হয়ে পোকা ডিভাইসের সঙ্গে থাকা ফাঁদে আটকে যাবে। ডিভাইসের ক্যামেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই ছবি তুলে ফেলবে। ইন্টারনেট মোডেমের মাধ্যমে ওই ছবি চলে যাবে ক্লাউডে।

তখন যে কোনো জায়গায় বসে ফোন বা ল্যাপটপ থেকেই জানা যাবে, কোন এলাকার কোন খেতে কী ধরনের পোকার আক্রমণ হয়েছে। ওই পোকার বিস্তার ও ক্ষতি ঠেকাতে কেন্দ্র থেকে পরিকল্পনা সাজিয়ে কৃষকদের জানিয়ে দেওয়া যাবে সহজে।

সাইফুল্লাহ জানান, সনাতন পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ, সমন্বয় ও বিশ্লেষণের কাজটি আরও দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে করতে তৈরি করা হবে একটি অ্যাপ।

একজন ব্লক কর্মী মাঠে গিয়ে যে তথ্য পাবেন, তা তিনি সেখান থেকেই অ্যাপের মাধ্যমে আপলোড করবেন। ওই তথ্য সরাসরি চলে যাবে কেন্দ্রীয় ড্যাশবোর্ডে। আগের মত আর ধাপে ধাপে সময় নষ্ট হবে না।

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকার ধামরাই এবং চুয়াডাঙ্গার দুটি উপজেলার দশটি ব্লকে পরীক্ষামূলকভাবে প্রকল্পের কাজ শুরু করছেন তারা।

এ প্রকল্পের ফোকাল পয়েন্ট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এনায়েত হোসেন বলেন, দেশের ফসলের ১০-১৫ শতাংশ নষ্ট হয় বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হলে ক্ষতির পরিমাণ ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব।