সাহিত্যের নোবেল কাজুও ইশিগুরোর

সাহিত্যে এ বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জাপানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক কাজুও ইশিগুরো, যার ‘তীব্র আবেগমথিত’ উপন্যাসগুলো বাস্তব দুনিয়ার মায়ার আড়ালে ‘গভীর শূন্যতাকে’ উন্মোচন করেছে বলে মনে করছে নোবেল কমিটি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Oct 2017, 11:24 AM
Updated : 5 Oct 2017, 05:03 PM

বৃহস্পতিবার সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ১১৪তম লেখক হিসেবে কাজুও ইশিগুরোর নাম ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমির প্রধান সারা দানিউস বলেন, “তীব্র আবেগমথিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে দিয়ে কাজুও ইশিগুরো উন্মোচন করেছেন বাস্তব দুনিয়ার মায়ার আড়ালের গভীর শূন্যতাকে।”

এ পর্যন্ত কাজুও ইশিগুরোর আটটি বই প্রকাশিত হয়েছে, যেগুলো অনূদিত হয়েছে ৪০টি ভাষায়। তার সবচেয়ে বিখ্যাত উপন্যাস ‘দি রিমেইনস অব দি ডে’ এবং ‘নেভার লেট মি গো’র ছায়া অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রও দারুণভাবে জনপ্রিয় হয়েছে।

নোবেল জয়ের খবরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ৬২ বছর বয়সী এই  ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, চিত্রনাট্যকার, গল্পকার বিবিসিকে বলেন, তিনি ‘আনন্দে হতবাক’।

নোবেল কমিটি যখন পুরস্কার জয়ের খবর জানাতে কাজুও ইশিগুরোর সঙ্গে যোগাযোগ করল, তিনি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না- এটা সত্যি না গুজব। 

“এটা অসাধারণ এক সম্মান। এর মানে হল, এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ লেখকদের কাতারে আমাদে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ এক দুর্দান্ত পুরস্কার।”

কাজুও ইশিগুরো বলছেন, পৃথিবী আজ উপস্থিত হয়েছে অনিশ্চিত এক সময়ে। এই পরিস্থিতিতে সকল নোবেল পুরস্কার পৃথিবীর মঙ্গলের জন্য শক্তি যোগাবে, এটাই তার আশা।

কে কাজুও ইশিগুরো

>> জাপানের নাগাসাকিতে ১৯৫৪ সালের ৮ নভেম্বর কাজুও ইশিগুরোর জন্ম। তার যখন পাঁচ বছর বয়স, তার বাবা যুক্তরাজ্যে চাকরি পান ওশানোগ্রাফার হিসেবে। পুরো পরিবার পাড়ি জমায় সারেতে।

>> কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজুও ইশিগুরো পড়েছেন ইংরেজি আর দর্শন। ইউনিভার্সিটিতে তার স্নাতকোত্তরের বিষয় ছিল ক্রিয়েটিভ রাইটিং। ম্যালকম ব্র্যাডবুরি ও অ্যাঞ্জেলা কার্টারের মত শিক্ষক পেয়েছেন তিনি সেখানে।  

>> কাজুও ইশিগুরোর থিসিসিই হয়ে ওঠে তার প্রথম উপন্যাস- এ পেইল ভিউ অব হিলস, যা প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে। এরপর পুরোপুরি লেখালেখিতেই মন দেন তিনি।

>> প্রথম বইটির মত ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত ইশিগুরোর দ্বিতীয় উপন্যাস অ্যান আর্টিস্ট অব দি ফ্লোটিং ওয়ার্ল্ডের পটভূমিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের নাগাসাকি। 

>> ‘দি রিমেইনস অব দি ডে’ উপন্যাসের জন্য ১৯৮৯ সালে বুকার পান এই ব্রিটিশ লেখক। ১৯৯৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে সম্মানিত করে ওবিই (অফিসার অব দি মোস্ট এক্সিলেন্ট অর্ডার অব দি ব্রিটিশ এমপায়ার) খেতাবে।   

গার্ডিয়ান লিখেছে, নাগাসাকিতে জন্ম নিলেও ওই শহরে আণবিক বোমার ধ্বংসযজ্ঞের ইতিহাস কাজুও ইশিগুরো প্রথম জানতে পারেন যুক্তরাজ্যে পাঠ্যবইয়ে। নিজের পিতৃভূমিতে আবার তার পা পড়েছিল প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর। ইংরেজিতে লেখেন বলে তার লেখার সঙ্গে সাধারণ জাপানি পাঠাকের খুব বেশি পরিচয় নেই।  

রয়টার্স জানিয়েছে, আরেক বিখ্যাত জাপানি লেখক হারুকি মুরাকামির ভক্তরা বৃহস্পতিবার টোকিওতে জড়ো হয়েছিলেন প্রার্থনা করতে, যাতে তাদের প্রিয় লেখকই এবার নোবেল পান। মুরাকামি না পেলেও জাপানি বংশোদ্ভূত ইশিগুরোর নোবেল জয়ের খবর তাদের জন্য আকস্মিক আনন্দের বার্তা নিয়েই এসেছে। 

মুরাকামির মত কেনিয়ার কথাসাহিত্যিক নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গো, যুক্তরাষ্ট্রের ফিলিপ রথ আর জয়েস ক্যারল ওটস, আলবেনিয়ার ইসমাইল কাদারে, নরওয়ের নাট্যকার জন ফসে আর চেক লেখক মিলান কুন্ডেরার নামও ঘুরছিল বিভিন্ন আলোচনায়। সেই হিসেবে কাজুও ইশিগুরোর নাম অনেকের কাছে একটি চমক হিসেবেই এসেছে।

সুইডিশ অ্যাকাডেমির বিবৃতিতে ইশিগুরোর লিখন শৈলীকে বর্ণনা করা হয়েছে ‘অনেকটা জেন অস্টিন আর ফ্রানৎস কাফকার মিশেল’ হিসেবে, যেখানে বার বার এসেছে স্মৃতি, বহতা সময় আর মোহমগ্নতা। 

তার গল্পে ঘটনা যাই ঘটুক, লেখকের ভাষা থাকে নির্বিকার। অসাধারণ বর্ণনা রীতির মধ্যেও প্রকাশভঙ্গি থাকে খুবই পরিমিত- এটাই ইশিগুরোকে চিনিয়ে দেয়।

২০০৫ সালে প্রকাশিত নেভার লেট মি গো উপন্যাসে ইশিগুরো যোগ করেছেন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর আমেজ। উপন্যাস ছাড়াও তার অন্যান্য লেখায় সংগীতের প্রভাব খুবই স্পষ্ট। যার নমুনা পাওয়া যায় ২০০৯ সালে প্রকাশিত গল্প সংকলন নকটর্ন: ফাইভ স্টোরিজ অফ মিউজিক অ্যান্ড নাইটফল-এ।  

আর ২০১৫ সালে প্রকাশিত তার সর্বশেষ বই দি বারিড জায়ান্ট- এ পাঠকের সঙ্গে পরিচয় হয় এক বৃদ্ধ দম্পতির সঙ্গে, যারা পথে বেরিয়েছেন বহুদিনের না দেখা সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে। এরই মাঝে চলতে থাকে স্মৃতি-বিস্মৃতি আর কল্প-বাস্তবের আলোছায়ার খেলা।

ইশিগুরোর চরিত্ররা কখনও কোনো সঙ্কট কাটিয়ে সমাধানে পৌঁছাতে পারে না। তার অমীমাংসিত কাহিনীরা শেষ হয় গভীর এক বিষণ্নতায়। 

 

আগামী ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমে কাজুও ইশিগুরোর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হবে নোবেল পুরস্কারের ৮০ লাখ ক্রোনার।

গত বছর সাহিত্যে নোবেল পান মার্কিন গায়ক ও গীতিকার বব ডিলান, যা বিস্ময়ের জন্ম দেয়। নোবেলের ইতিহাসে এ পুরস্কারজয়ী প্রথম সংগীত শিল্পী ও গীতিকার তিনি।

সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের শেষ ইচ্ছা অনুসারে গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবতার কল্যাণে অবদানের জন্য প্রতি বছর চিকিৎসা, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়।

শুক্রবার শান্তি এবং আগামী ৯ অক্টোবর অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।