উপন্যাস ‘এভরিম্যান’ নিয়ে ফিলিপ রথ

আফসান চৌধুরী
Published : 26 Nov 2011, 05:28 PM
Updated : 26 Nov 2011, 05:28 PM

২০১১ সালের ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার জয়ী ফিলিপ রথের উপন্যাস 'এভরিম্যান' লেখা হয়েছে ৭১ বছর বয়স্ক বহু ডিভোর্সি, বিজ্ঞাপনী সংস্থার এক সফল কর্মীকে নিয়ে। ধর্ম আর দর্শনের যে কোন সাহায্য এড়িয়ে এই বৃদ্ধ শরীরের ক্ষয় মেনে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন। এক সমালোচক 'এভরিম্যান'কে "হৃদয়বিদারক তুচ্ছ বিষয় নিয়ে একটি গতিময় নিষ্ঠুর উপন্যাস" বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। ২০০৬ সালে 'এভরিম্যান' নিয়ে ফিলিপ রথ কাহিনী-সংক্ষেপ ধরনে একটি আলোচনা প্রকাশ করেন। ইংরেজিতে প্রকাশিত সেই আলোচনা অনুবাদ করেছেন ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা–বি.স.

—————————-
পুরনো সিমেট্রিতে তাঁর কবরের পাশে জড়ো হয়েছিল সাবেক সহকর্মীরা। তাঁরা একসাথে কাজ করতো নিউইয়র্কের এক বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। তাঁর কাজের একাগ্রতা, দক্ষতা আর মৌলিকত্বের কথা স্মরণ করছিলো জড়ো হওয়া সহকর্মীরা। তাঁর কন্যা ন্যান্সিকে তাঁরা এমন একজন মানুষের সাথে একসাথে কাজ করবার আনন্দের কথা বলছিলেন। আরো কিছু মানুষ স্টারফিশ বিচের জার্সি উপকূলের বৃদ্ধনিবাস গ্রাম থেকে গাড়ি চালিয়ে এসেছিল। অবসরপ্রাপ্তদের এই আবাসিক আশ্রমে তিনি ২০০১ এর থ্যাংকসগিভিং থেকে বসবাস করছিলেন। মাত্র কিছুদিন হলো তিনি এই বৃদ্ধাশ্রমের বয়স্ক মানুষজনকে আঁকাআঁকি শেখানোর কাজ শুরু করেছিলেন। আর ছিল তাঁর দুই ছেলে, মধ্যবয়স্ক র্যা ন্ডি আর লোনি। তাঁর প্রথম অস্থির দাম্পত্য জীবনের দুই ছেলে। দুটোই বড় বেশি তাঁদের মায়েরই সন্তান। আর সেই কারণে তারা তাঁকে যতোটুকু চেনে তাতে যতোটা না প্রশংসা আছে, তার চেয়ে ঢের বেশি আছে অপ্রীতিকর ঘটনা। আজ কেবল কর্তব্যের খাতিরে এই দুই সন্তান অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিত হয়েছে। তার চেয়ে বেশি কিছু নয়। গত রাতেই তাঁর বড় ভাই হাউই আর শ্যালিকা ক্যালিফোর্নিয়া থেকে বিমানে উড়ে এসেছেন। উপস্থিত মানুষজনের মধ্যে তাঁরাও ছিলেন।


………
ফিলিপ রথ এবং বারাক ওবামা
………

আর আছেন তাঁর তিন সাবেক স্ত্রীর মধ্যে মধ্যম জন, দ্বিতীয় সাবেক স্ত্রী, ফোবে–যিনি ন্যান্সির মা। লম্বা আর ভীষণ কৃশ শরীর আর সাদা চুলের ফোবে'র ডান হাত খোঁড়ার মতো একপাশে ঝুলে আছে। ন্যান্সি যখন কিছু বলবার জন্য তাঁর মাকে অনুরোধ করলো, ফোবে একটু লজ্জার সাথে মাথাটা নাড়ালেন। মৃদু নরম স্বরে সংক্ষেপে তাঁর বক্তব্য পেশ করবার জন্য এগিয়ে গেলেন, "এটা বিশ্বাস করা কঠিন। আমি কেবল সাগরের তীরে তাঁর সাঁতরে বেড়ানোর দৃশ্য মনে করতে পারি…এটাই। আমি কেবল সাগরে তাঁর সাঁতরানোর দৃশ্য চোখে দেখতে পাই"। এরপর ন্যান্সি। পিতার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন ন্যান্সিই করেছে। সে ফোন করে মানুষজনকে ডেকেছে। যাতে অন্তত শোক-সন্তাপের মানুষ হিসেবে কেবল সে, তাঁর মা, আর পিতার ভাই, শ্যালিকাই কেবল না থাকেন। সেখানে কেবল একজন মানুষ আছেন–সমাধিতে আসবার সাথে আমন্ত্রণ পাওয়ার কোন সম্পর্ক ছিল না তার। হাসিখুশি গোলগাল মুখের লাল রঙ করা চুলের নারী মৌরিন। তিনি সমাধিতে এসে নিজেকে মৌরিন নামে পরিচয় দেন। জানান, কয়েক বছর আগে হার্টের সার্জারির পর থেকে মৌরিন-ই তাঁর (ন্যান্সির পিতার) ব্যক্তিগত নার্স হিসেবে কাজ করছিলেন। হাউই তাঁকে চিনতে পেরে গালে চুমু দিয়ে অভ্যর্থনা জানাতে এগিয়ে গেলেন।

ন্যান্সি সবাইকে বললো, "আমি এই সিমেট্রির ইতিহাস নিয়ে কিছু কথা বলে আমার বক্তব্য শুরু করতে পারতাম। কারণ আমি আবিষ্কার করেছি, আমার পিতার দাদা, আমার বড় পিতামহ এই সিমেট্রির একেবারে পুরনো জায়গায় আমার বড় পিতামহীর সাথে সমাধিস্থ হয়েছেন। কেবল তাই নয়, তিনি ১৮৮৮ সনে এই সিমেট্রির প্রতিষ্ঠাতাদেরও একজন ছিলেন। ইহুদি হিতৈষী সংঘ প্রথম এই সিমেট্রি বা গোরস্থান এর জন্য তহবিল বরাদ্দ করে, তাঁরাই তখন ভিত্তিপ্রত্তর স্থাপন করেছিলেন। আর এই ধর্মসভার সদস্যরা ইউনিয়ন এবং এসেক্স প্রদেশ পর্যন্ত ছড়ানো ছিল। আমার বড় পিতামহ এলিজাবেথে একটা বোর্ডিং হাউজ-এর মালিক ছিলেন, তিনি সেটা চালাতেন। বিশেষভাবে নব্য অভিবাসিত মানুষজনের সুযোগ-সুবিধার বিষয় তিনি দেখাশুনা করতেন। ঐ বোর্ডিং থেকে নতুন অভিবাসিত মানুষজনকে তিনি খাবার সরবারহ করতেন। ফলে তিনি আসলে প্রথম দিককার সেই সব প্রাথমিক সদস্যদের একজন যারা বিশাল বিশাল মাঠগুলো কিনেছিলেন, তাঁরাই দরকারি মাপামাপি করেছিলেন, স্বপ্ন দেখছিলেন। আর একারণেই মনে হয় তিনি গোরস্থানের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন। যদিও তিনি তরুণ বয়সের ছিলেন, কিন্তু তাঁর সকল তোড়জোড় এবং যে নামে তিনি দলিলাদিতে স্বাক্ষর করেছিলেন তাতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে এই গোরস্থানে মৃত ব্যক্তিকে ইহুদি ধর্মমত ও আনুষ্ঠানিকতায় সমাধিস্থ করতে হবে"। এটা তো খুবই স্বাভাবিক যে একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত জমির সবকিছু ঠিকঠাক রাখাটা দুষ্কর। সেই বেড়া অথবা গেট–সবটাতে মরচে ধরেছে, বেড়া উপড়ে গেছে, তালারও কোন খবর নাই, লুটতরাজ চলছিলো আর কি। এখন সেই জায়গাটা বিমানবন্দরের শেষ সীমানার সাথে লাগোয়া। আর যে একঘেয়ে উচ্চ শব্দ কয়েক মাইল আগ থেকে আপনাদের কানে আসছে, সেটা আসছে নিউ জার্সির টোল ফটক থেকে। আমি অবশ্য প্রথমে ভেবেছিলাম বাবাকে সমাধিস্থ করবার সত্যিকারের সুন্দর জায়গাগুলোর একটা হতে পারে সেই সমুদ্র উপকূল যেখানে তরুণ সময়ে তিনি এবং আমার মা সাঁতার কাটতেন বা উপকূলের যে যে জায়গায় তিনি সাঁতরে বেড়াতে ভালবাসতেন। তা সত্ত্বেও এখানকার চারপাশের ভাঙ্গাচোরা অবস্থা দেখে আমার নিজের হৃদয় ভেঙ্গে গিয়েছিল, সম্ভবত আপনাদেরও যাচ্ছে, হয়তো আপনাদের বিস্ময়ও লাগছে যে কেন এমন বিধ্বস্ত পুরনো স্থানে তাঁকে সমাধিস্থ করবার জন্য আমরা একসাথে হয়েছি। আমি আসলে তাঁকে ঐ সমস্ত মানুষের কাছে সমাধিস্থ করতে চেয়েছি যারা তাঁকে ভালবাসে আর যাদের থেকে তিনি এসেছেন—অর্থাৎ তাঁর পূর্বপুরুষ। আমার বাবা তাঁর পিতামাতাকে ভালবাসতেন আর তাঁদের কাছে থাকাটাই তাঁর জন্য ভাল। আমি তাঁকে একলা কোথাও রেখে আসতে চাইনি"।

ন্যান্সি নিজেকে গুছিয়ে নিতে কিছু সময় নিলো। একবার করে সবার দিকে তিনি তাকালো। তাকানোতে কোন কর্তৃত্ব ছিল না কিংবা কোন সাহস দেখানো। বরং তাঁকে পর্যুদস্ত এক দশ বছরের মেয়ের মতো দেখাচ্ছিলো। কফিনের দিকে ফিরে তিনি মাটির ঢেলা হাতে নিলো আর সেটা কফিনের ঢাকনির উপর ফেলবার আগে হতবুদ্ধি এক অল্পবয়সী মেয়ের চেহারা নিয়ে মৃদু স্বরে হালকা তালে বললো "এভাবেই সব কিছুর সমাপ্তি ঘটে। এর চাইতে বেশি কিছু করবার ক্ষমতা আমাদের নেই, বাবা"। এবারে বহু বছর যাবৎ সুখে বা দুঃখে পিতার নির্বিকার থাকার অনন্য গুণ স্মরণ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো ন্যান্সি।

পিতার উদ্দেশ্যে বললো, "বাস্তবতা মন মতো গড়ে নেয়া যায় না, নতুন বাস্তবতা মেনে নাও। নিজেকে ভিতকে শক্ত রাখো, আর যা আসছে তাকে সহজে গ্রহণ করো"।
দ্বিতীয় যিনি কফিনের ডালায় মাটির ঢেলা ফেলবেন তিনি ভাই হাউই। ছোট ভাই সবসময়ই তাকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করতো। বিনিময়ে সেও পেতো স্নেহ আর আদর। বাইক চালানো থেকে শুরু করে সাঁতার কাটা, হাউই পারদর্শী ছিলেন এমন সবগুলো খেলা ন্যান্সির বাবাকে শিখিয়েছিলেন। তাঁকে দেখলে মনে হয়, এখনো তিনি মধ্যমাঠে ফুটবল খেলতে পারবেন। এবং তাঁর বয়স এখন ৭৭ বছর। কোন কারণে কখনই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি এবং তিনি সফলতার সাথে তাঁর সমস্ত জীবন সুস্থ্য থেকে গেছেন। যদিও একই স্টক থেকে জন্মানো তাঁর ছোট ভাই মরে গেল!

ন্যান্সির মায়ের সাথে ফিসফিস করে কথা বলবার সময় তাঁর কণ্ঠ আবেগে কেমন ফ্যাঁসফেসে শোনাচ্ছিলো। "আমার ছোট ভাই। কোন মানে নাই"। তারপর তিনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "দেখা যাক আমি এটা করতে পারি কিনা। আমার ভাই সম্পর্কে আসুন সবাই কিছু বলি। আহা, আমার ভাইটা… "। কিছুক্ষণ থেমে তিনি তাঁর চিন্তাগুলোকে এক রকম গেঁথে নিলেন যাতে তার কথাগুলো কোন মানে তৈরি করতে পারে, যেন সেগুলো পর্যাপ্ত সেন্সিবল হয়। যেভাবে কথা বলছিলেন আর তাঁর কণ্ঠের সুর যে তালে বাঁধা, সেটা একদমই তাঁর ভাইয়ের মতো। আর তখনই ফোবে কাঁদতে শুরু করলেন আর দ্রুতই ন্যান্সি তাঁকে আঁকড়ে ধরলো। তিনি বললেন, "শেষ বছরগুলো নিজের কবরের দিকে তাকিয়ে থেকে পার হয়েছে। তাঁর স্বাস্থ্যের নানান সমস্যা ছিলো। আর ছিল একাকিত্ব- সেটাও কোন সমস্যার চেয়ে কম নয়। যখন আমাদের দুজনের সময় হতো আমরা ফোনে কথা বলতাম। কিন্তু তাঁর জীবনের শেষ সময়ে সে আমার সাথে কোন স্পষ্ট কারণ ছাড়াই যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলো। যখন সে হাইস্কুলে যায় তখন থেকেই তাঁর ছবি আঁকার প্রতি তীব্র আকর্ষণ ছিলো। বিজ্ঞাপনী সংস্থায় তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল আর্ট ডিরেক্টর হিসেবে। সে সফল হয়েছিল। পদোন্নতি পেয়ে ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে সে অবসর নেয়। বিজ্ঞাপনী সংস্থা থেকে অবসর নেওয়ার পর তাঁর জীবনে যে কয়টা বছর সে পেয়েছে তার প্রতিটা দিন ছবি এঁকেছে সে। এখানে যারা সমাধিস্থ আছেন তাঁদের প্রত্যেকের আপনজনের মতো আমরাও তাঁর সম্পর্কে বলতে পারি: তাঁর বেঁচে থাকাটা প্রয়োজন ছিল, তাঁর দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা উচিত ছিল। তাঁর প্রয়োজন ছিল"। এক মুহূর্তের নিরবতার পর তাঁর বিষণ্ন মুখে একটা দুঃখের হাসি দেখা গেলো। "আমি যখন হাইস্কুলে উঠলাম আর আমার বিকেলে প্র্যাকটিস থাকতো তখন তাঁকেই আমার বাবার নানান আদেশ পালন করতে দৌঁড়াতে হতো। এতদিন সেগুলি ছিলো আমারই দায়িত্ব। মাত্র নয় বছর বয়স নিয়ে সে খুশি ছিলো। খুশি মনেই সে খামের ভেতর ডায়মন্ড নিয়ে জ্যাকেটের পকেটে ভরে বাসে করে নিউয়ার্ক রওয়ানা হতো। সেখানেই কারিগররা পালিশ করতো, সাইজ করতো, ঠিকঠাক মতো ডায়মন্ড লাগানো হতো, আর ঘড়ির কারিগররা ঘড়ি মেরামত করতো। বাবার এই কাজগুলো করানোর জন্য নিজস্ব একটা পছন্দের ধরন বা সেটিং ছিলো আর এরা সবাই ফ্রেলিংহাইসেন এ্যাভিনিউতে বসতো। এই ঘুরে বেড়ানোতে সেই ছোট ছেলেটার অনেক আনন্দ হতো। আমার ধারণা সেই খুপড়ির মতো ছোট্ট জায়গাগুলোতে কারিগররা যখন কাজ করে যেতো, তাঁদের একলার একাগ্রচিত্তের কাজ করা দেখতে দেখতেই হয়তো তাঁর নিজের মধ্যে নিজের হাতে সৃষ্টির প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয়েছিল। আমার পিতার অলঙ্কারের খিলগুলোতে ডায়মন্ডের উজ্জল ধারের চমক দেখেই মনে হয় তাঁর মধ্যে শিল্প-ভাবনার উন্মেষ ঘটে"। কিঞ্চিত হাসি খেলে গেল হাউই'র মুখে অকস্মাৎ; দায়িত্ব সম্পাদনের তৃপ্তি কিছুটা। এবং তিনি বলে উঠলেন, "আমি ছিলাম সেই প্রথাগত ভাই; ডায়মন্ড আমার মধ্যে টাকা কামানোর ইচ্ছা তৈরি করেছিল"।

তারপর তিনি যেখানে থেমেছিলেন–তাঁদের শৈশবের সেই উজ্জল রৌদ্রময় স্মৃতির জানালা খুলে দিয়ে সেখান থেকে পুনরায় শুরু করলেন, "আমাদের বাবা এলিজাবেথ জার্নালে প্রতি মাসে একটা ছোট্ট বিজ্ঞাপন দিতেন। থ্যাংকসগিভিং আর বড়দিনের মাঝের ছুটির দিনগুলোতে তিনি প্রতি সপ্তাহে একবার করে বিজ্ঞাপন ছাপাতেন। 'পুরনো ঘড়ির বদলে নতুন ঘড়ি কিনে নাও'। যে পুরনো ঘড়িগুলো তিনি জোগাড় করতেন তার মধ্যে বেশির ভাগেরই আর মেরামত করা সম্ভব ছিল না। সেগুলো পেছনের স্টোরে কোন এক ড্রয়ারের মধ্যে ফেলে রাখা হতো। আমার ছোট ভাইটা ঘন্টা ধরে সেখানে বসে থাকতো। সে তাঁর হাত দোলাতো আর ঘড়িগুলো তখনও টিকটিক করলে সেগুলোর টিকটিক শব্দ শুনে যেতো আর বসে বসে গবেষণা করতো একেকটা দেখতে কেমন, একেকটার খোলস কেমন। এটাই ছিল সেই ছেলেটার বিশেষত্ব। ঐটাই সে। একশো বা দুইশো ঘড়ির পুরো ড্রয়ারের দাম বড়জোর দশ ডলার। কিন্তু তাঁর শিল্পীমনে সেই ড্রয়ারটাই ছিল রত্ন ভাণ্ডার। সে ঘড়িগুলো নিতো, পড়তো–ঐ ড্রয়ারের কোন ঘড়িই পড়ে থাকতো সে সবসময়। কতোগুলো ঘড়ি নিজেরাই চলতো। আর যেগুলোকে সে নিজে কারিগরী করে চালানোর চেষ্টা করতো, যেটাকে তাঁর দেখতে ভাল লাগতো, সেগুলোর পেছনে সে শুধুই সময় নষ্ট করতো, যদিও আখেরে তেমন কোন লাভ হতো না। এটাই ছিল যত্নের সাথে, তাঁর নিজের হাতে কাজ করার শুরু। সব সময় আমার বাবা তাঁর দোকানে দুই জন মেয়ে রাখতেন। যারা সবে হাইস্কুল পাশ করেছেন, বয়স হয়তো ১৮-এর শেষ বা বিশের শুরুর দিকে। বাবাকে তারা কাউন্টারের পেছনে স্টোরের কাজে সাহায্য করতো। সুন্দর আর অমায়িক আচরণের মিষ্টি স্বভাবের এলিজাবেথের মেয়েরা, খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। এই মেয়েগুলো সবসময় খ্রিস্টান হতেন, প্রধানত আইরিশ ক্যাথলিক, যাদের পিতা, ভাই এবং চাচারা হয়তো সিঙ্গার সেলাই মেশিন বা বিস্কুট কোম্পানিতে বা পোর্টে কাজ করতো। বাবার মনে হতো মিষ্টি খ্রিস্টান মেয়েরা ক্রেতাদের মধ্যে ঘরোয়া ভাব নিয়ে আসতে পারে। ক্রেতারা চাইলে ঐ মেয়েরা অলঙ্কার পরে ক্রেতাদের দেখাতো, মডেল হতো আর ভাগ্য ভাল হলে নারী ক্রেতারা খুশি হয়ে অলঙ্কার কিনেও ফেলতো। বাবা বলতেন, যখন কোন একটা মিষ্টি মেয়ে কোন অলঙ্কার পরে, তখন অন্য নারীরা ভাবে তারাও যদি ঐ অলঙ্কার পরে তবে তাদেরকেও একইরকম সুন্দর দেখাবে। নাবিকরা এনগেজমেন্ট রিং বা গার্লফ্রেন্ডের জন্য বিয়ের আংটি কিনতে আসলে সেলস গার্লদের হাতের আঙুলে আংটি দিয়ে দেখতে চাইতো–পাথরের সাইজটা ঠিক হলো কিনা। অনেক সময় মাপ ঠিকঠাক কিনা দেখবার ছলে সেলস গার্লদের হাত ধরতে চাইতো তারা"।

"আমার ভাইটাও সেই মেয়েদের আশপাশে থাকতে ভালবাসতো। কেন এই মেয়েদের সাথে থাকবার সময়টা সে উপভোগ করতো–সে কারণ বোঝার অনেক আগে থেকেই সে তাদের আশপাশে থাকতো। দিন শেষে সে জানালা বা শোকেস থেকে মালামাল নামাতে এই মেয়েদের সাহায্য করতো। তাদের সহযোগিতা করবার জন্য সে যে কোন কিছুই করতো। তারা জানালা থেকে, শোকেস থেকে কম দামী অলঙ্কারগুলো সরিয়ে আনতো। বাবা বিশ্বাস করতো আমার ভাইকে। ভাই দোকানের পেছনের কক্ষের বড় শেলফটা খুলতো দামি অলঙ্কারগুলি রাখতো। তাঁর আগে আমি নিজে এসব কাজ করতাম, এমনকি সে মেয়েদের সাথে থাকাটাও, বিশেষভাবে সোনালী চুলের দুই বোন, হ্যারিয়েট আর মে। বছর ধরে আমাদের দোকানে এসেছে হ্যারিয়েট, মে, এ্যানমেরি, জিন, মাইরে, মেরি, প্যাটি, আরো ছিল ক্যাথলিন, করিন। আর এদের প্রত্যেকেই সেই ছোট বাচ্চাটার কাছে একটা ঝলমলে আলোর মতো উপস্থিত হতো। ভীষণ সুন্দরী করিন নভেম্বরের শুরুর দিকে পেছনের ঘরের কাজের বেঞ্চটায় বসতো। আমার ভাই আর করিন মিলে স্টোরের জন্য ছাপা অলঙ্কারের ক্যাটালগটা এই ছুটিকালীন সময়কার বেচাকেনার জন্য ক্রেতাদের কাছে পাঠানোর বুদ্ধি করতো। এই সময়টা আমার পিতা সপ্তাহে ছয় রাতই দোকান খোলা রাখতো আর সবাইকে কুকুরের মতো ব্যস্ত সময় কাটাতে হতো। আমার ভাইয়ের আঙুলগুলো ছিল ভীষণ দক্ষ আর তাঁকে খাম গুণতে দিলে সে যে কারো চাইতে খুব দ্রুত খাম গুণে ফেলতো আর সে পাঁচটি করে করে খাম গুনতো। আমি এই বিষয়টি লক্ষ্য করেছিলাম আর আমি নিশ্চিত ছিলাম খাম গুণবার জন্য সে যা যা করতো সেটা আসলে করিনকে দেখানোর জন্যই করতো। এটা একটা মজার ব্যাপার যে জুয়েলারি দোকানের মালিকের বিশ্বাসযোগ্য ছেলে হয়ে সে যা যা করতে ভালবাসতো সেটা সে কী ভাবে করে যেতো! আমাদের পিতার সবচাইতে প্রিয় প্রশংসা বাক্য ছিল 'নির্ভরযোগ্য', 'বিশ্বাসী'। বছর জুড়ে বাবা এলিজাবেথের আইরিশ, জার্মান, ইতালিয়ান, পোলিশ এবং স্লোভেকসদের কাছে বিয়ের আংটি বিক্রি করতেন। এদের মাঝে বেশিরভাগই ছিলেন শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ। দেখা যেতো, আংটি বিক্রির পর অর্ধেক ক্রেতা বাবাকে সপরিবারে বিয়ের আসরে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। বাবাকে মানুষজন পছন্দ করতেন, তাঁর রসবোধ ছিল। তিনি ক্রেতার কাছ থেকে কখনই চড়া মূল্য রাখতেন না, দেখা যেতো সবাইকেই তিনি কমবেশি বাকিতে দিতেন আর তাই আমরা বিয়ের অনুষ্ঠানে যেতাম। প্রথমে আমরা চার্চে যেতাম, তারপর হৈ হট্টগোলের আনুষ্ঠানিকতায়, ভোজ উৎসবে। তখন বিষণ্নতা ছিল, হতাশা ছিল, যুদ্ধ ছিল। কিন্তু তারপরেও সেখানে বিয়ে ছিল, আমাদের সেলস গার্লসরা ছিল, আর ছিল জ্যাকেটের পকেটে খামের ভেতর শত শত ডলার নিয়ে নিউয়ার্ক যাওয়ার বাস ভ্রমণ। প্রত্যেক খামের উপরে পাথরের সাইজ কি হবে, কিভাবে বসাবে এ নিয়ে বাবার হাতে লেখা নির্দেশাবলী থাকতো। আর ছিল পাঁচ ফুট উচ্চতার আমাদের সকল অলঙ্কার রাখবার বাক্স যেটা প্রতি রাতে আমরা সাবধানতার সাথে নিয়ে যেতাম আর প্রতি সকালে বের করতাম…আর এইসব কিছু মিলে আমার ভাইয়ের–সেই ভাল ছোট ছেলের জীবন তৈরি হয়েছিল, এগুলোই ছিল তাঁর সে সময়ের সবচাইতে প্রিয় বিষয়"।

………
ফিলিপ রথ, জন্ম: ১৯ মার্চ ১৯৩৩
………

হাউই'র দৃষ্টি আবার কফিনের দিকে স্থির হলো। তিনি প্রশ্ন করলেন, "এখন আর কি? আমার মনে হয় যেমনটা ছিল তেমনটাই থাক। যেমন আছে তেমন চলতে থাকুক। এখনও অনেক কিছু মনে করবার আছে, অনেক কথা মনে পড়ে যায়…কিন্তু কেন স্মরণ করবো না? পরিবার আর বন্ধুদের মাঝে আরেক গ্যালন অশ্রু কেন নয়? যখন আমাদের বাবা মারা গেলেন, আমার ভাই জিজ্ঞেস করলো–যদি সে বাবার হাতের ঘড়িটা খুলে নেয় তাহলে আমি কিছু মনে করবো কিনা। ঘড়িটা ছিল হ্যামিল্টন ব্যান্ডের, ল্যাঙ্কাস্টারে বানানো আর বিশেষজ্ঞদের মতে এই দেশের এযাবতকালের সবচাইতে ভাল ঘড়ি। যখন বাবা এরকম কোন ঘড়ি বিক্রি করতেন তিনি ক্রেতাদের এই ঘড়ি কিনবার সুযোগ হারাতে মানা করতেন।"—দেখেন, আমার হাতেও একটা আছে। এটা খুবই দামি জাতের ঘড়ি, সবাই হ্যামিল্টন ঘড়িকে সমীহ করে। উনআশি ডলার পঞ্চাশ সেন্ট, যদ্দূর মনে পড়ে। সে সময়ে সব কিছুর দামের শেষে পঞ্চাশ থাকতো। হ্যামিল্টনের খুব নামডাক ছিলো। ক্ল্যাসিক ঘড়ি ছিল হ্যামিল্টন। বাবা হ্যামিল্টন ঘড়ি ভালবাসতেন, আর যখন আমার ভাই বাবার মৃত্যুর পরে সেটা নিতে চাইলো, আমি কিন্তু খুশি হতে পারিনি। সে জুয়েলারির বাক্সপেটরা আর বাবার হীরা বহনের কেসটা নিতে পারতো। যখনই বাবা দোকানের বাইরে ব্যবসার কাজে যেতেন, তিনি তাঁর কোটের পকেটে ঐ ছেঁড়া পুরনো চামড়ার ব্যাগটা নিতেন। ব্যাগটার ভেতর থাকতো চিমটা, আর ছোট একটা চিকন স্ক্রু ড্রাইভার, আর ডায়মন্ডের আকার মাপবার একটা যন্ত্র আর কিছু গুটানো সাদা কাগজ যাতে মধ্যে খোলা ডায়মন্ড রাখা হতো। এই ছোট্ট সুন্দর জিনিসগুলো দিয়ে তিনি সস্নেহে তাঁর কাজ সারতেন। সেগুলো তাঁর হাতে ধরা থাকতো, তার হৃদয়ের কাছাকাছি থাকতো। তারপরেও আমরা লুপ আর কেস আর এগুলোর মধ্যে থাকা সবকিছু সমাধিস্থ করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সবসময় তাঁর এক পকেটে সে লুপ রাখতো আর অন্য পকেটে সিগারেট। তাই আমরা তাঁর শবের পোশাকের মাঝে লুপটা দেবার কথা ভেবেছিলাম। আমি মনে করতে পারি, আমার ভাই বলছিলো- যে কোন উপায়ে আমাদের উচিত তাঁর চোখের উপর এই জিনিসগুলো দিয়ে দেয়া"। দুঃখ, কেবল এটাই আমরা করতে পারি। এভাবেই আমরা নিক্ষিপ্ত হই। আমরা জানি না এ ছাড়া আমরা আর কীইবা করতে পারি। সঠিক হোক বা বেঠিক, এসব করা ছাড়া আমাদের আর কিছু করবার কথা মনে আসে না। কারণ এগুলো কেবল তাঁর নয়–বরং সে নিজেই এর মধ্যে ছড়িয়ে থাকে…। হ্যামিল্টন, আমার বাবার সেই পুরনো হ্যামিল্টন, প্রতি সকালে হয়তো বাতাসের সংস্পর্শে আসবে, হয়তো সে কেবল ঘড়িটা সাঁতার কাটবার সময়ে খুলেছে। আমার ভাই সারা দিন রাত সেটা পড়ে থাকতো। মৃত্যুর ৪৮ ঘন্টা আগে সে ঘড়িটা খুলেছিল। যে অপারেশনে সে মারা গেলো তার আগে সে নার্সকে সেটা নিরাপদে রাখবার জন্য খুলে দিয়েছিল। আজ সকালে কবরস্থানে আসবার পথে গাড়িতে ভাতিজি ন্যান্সি আমাকে দেখালো যে, সে ঘড়ির বেল্টে একটা নতুন ছিদ্র করিয়েছে আর এখন ন্যান্সিই সেই হ্যামিলটন ঘড়ি পড়ে আমাদের সময় জানাবে"।

তারপর আসলো তাঁর চল্লিশের শেষ সীমানায় দাঁড়ানো দুই ছেলে। তাঁদের চকচকে কালো রঙের চুল, আর বাকপটু কালো দুই চোখ আর তাদের বিস্তৃত ভীষণ আকর্ষণীয় মুখভঙ্গি। ঐ বয়সে তাঁদের বাবাও অমন ছিলো হুবহু, এমনকি তাঁদের চাচার সাথেও মিল পাওয়া যায়। এই স্মার্ট পেশীবহুল চেহারার ছেলে দুজনের পরস্পরের সাথে গাঢ় সম্পর্ক ছিলো, তাদের পিতার সাথে অত যোগাযোগ ছিলো না। প্রথমে ছোট ভাই লোনি সমাধির কাছে আসলো। কিন্তু যখনই সে মাটির ঢেলা তাঁর হাতে নিলো, আবেগে কাঁপতে শুরু করলো সে। মনে হচ্ছিল তাঁর ভেতর একটা ঝড় বয়ে যাচ্ছে। তাঁর মধ্যে পিতাকে নিয়ে এমন একটা অনুভূতি তৈরি হলো–সেটা ঠিক শত্রুভাবাপন্ন নয়। কিন্তু যেন একটা শত্রুতা তাঁকে তাঁর রুদ্ধতা থেকে মুক্তি দিচ্ছে না। যখন সে মুখ খুললো মনে হলো একটা ভীষণ অদ্ভুত শ্বাসরুদ্ধ অবস্থা সে পার করছে। মনে হচ্ছিল তাঁর হাতের মুঠোর মধ্যে আটকে থাকা মাটির ঢেলাগুলো নিয়ে সে কী করবে–সেটা কখনই সে নিজে বুঝে শুনে সমাপ্ত করতে পারবে না। তাঁর এমনই একটা ভয়াবহ দশা ছিল যে বড় জন, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আর রুক্ষ র্যা ন্ডি সহসা তাঁকে উদ্ধার করতে কাছে এসে দাঁড়ালো। সে ছোট ভাইটার হাত থেকে মাটির ঢেলা নিলো এবং সেটা দু'ভাইয়ের পক্ষ থেকে কফিনের ডালার উপর ফেললো। আর র্যা ন্ডি সফলতার সাথে বলে উঠলো 'শান্তিতে ঘুমাও, পপ'। কোন কোমলতা, কষ্ট, ভালবাসা কিংবা হারানোর কোন অনুভূতিই তাঁর কণ্ঠে ছিল না।

শেষমেষ কফিনের কাছে আসলো সেই ব্যক্তিগত নার্স, মৌরিন। যার দৃষ্টি একজন লড়াকু মানুষের কথা বলে, জীবন মরণ কোনটাই তাঁর কাছে অচেনা কোন বাস্তবতা নয়। একটু হাসি ঠোঁটে নিয়ে সে তার কুঁচকে যাওয়া হাতের তালু থেকে মাটির ঢেলা কফিনের ডালার উপর ফেললো। তাঁর অঙ্গভঙ্গিতে মনে হলো যেন কোন এক শিহরণ তাঁর শরীরে খেলে গেলো, কফিনে মাটি ফেলা যেন বা ফোরপ্লে। স্পষ্টতই ইনি সেই পুরুষ, যাকে নিয়ে অনেক ভেবেছে সে।
এই-ই শেষ। বিশেষ কিছুই ঘটে নাই আর। তাঁদের সকলের যা বলবার ছিল তাঁরা সবাই কি সেটাই বলেছে? না, তাঁরা বলে নাই এবং অবশ্যই তাঁরা বলেছে। সেদিন সে প্রদেশে এই একই রকম সাধারণ, নিয়মমাফিক আরও পাঁচশো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠান হয়েছে। এর কোনটাই আসলে অন্যটার চাইতে কম গুরুত্বের না কিংবা কম ভাবনারও না। একগুঁয়ে ছেলেদের ত্রিশটি সেকেন্ড আর কোন মৃত্যু আবিষ্কারের আগের নিষ্পাপ পৃথিবী, পনের-চল্লিশ জুয়েলারি স্টোরের ইডেন, তাদের বাবার তৈরি স্বর্গ—এই নিয়ে ভাই হাউই'র বেদনাক্লিষ্ট আবেগোচ্ছ্বাস বাদ দিলে অন্য যে কোন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কম বা বেশি ইন্টারেস্টিং না আদৌ। কিন্তু এখানেই এই সাধারণত্বের সবচাইতে মর্মভেদী সত্য উপস্থিত। মৃত্যু এমন একটা বাস্তবতা যেটা আর সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়, সবকিছুকে আচ্ছন্ন করে দিয়ে যায় মৃত্যু।
কিছু মুহূর্ত পরে, ক্লান্তভাবে, সাশ্রুচোখে সকলে হেঁটে চলে গেলো। মানব প্রজাতির সবচাইতে কম প্রিয় কাজটা সেরে- আর সে পেছনে পড়ে থাকে। অবশ্যই যখন কেউ মারা যায়, যদিও অনেকেই দুঃখ ভারাক্রান্ত থাকেন, অপর অনেকে অবিচলিত থাকেন কিংবা কেউ কেউ নিজেদের ভীষণ মুক্ত অনুভব করেন- যন্ত্রণা থেকে, অথবা ভাল বা মন্দ যেটাই হোক, কেউ কেউ সত্যিই আনন্দিত হন।

————–

লেখকের আর্টস প্রোফাইল: ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা
ইমেইল: fatama.suvra@gmail.com


ফেসবুক লিংক । আর্টস :: Arts