বিশ্ব

সুনামিতে ভেসে গিয়ে ২৭ ঘণ্টা সাগরে সাঁতরে ফিরে এলেন টোঙ্গাবাসী

Byনিউজ ডেস্ক

লিসালা ফোলাউ নামের এই টোঙ্গাবাসী আবার আংশিক বিকলাঙ্গ। তিনি ঠিকমত হাঁটতে পারেন না।

সিএনএন জানায়, বিশাল সমুদ্রে এত দীর্ঘ সময় ভেসে থেকে বেঁচে ফিরে এখন বাস্তব জীবনের সুপারহিরো অ্যাকুয়ামানের প্রশংসা কুড়াচ্ছেন ফোলাউ।

টোঙ্গার গণমাধ্যম সংস্থা ব্রডকম ব্রডকাস্টিংয়ে এক সাক্ষাৎকারে ফোলাউ বর্ণনা করেছেন সুনামির ঢেউয়ের ধাক্কায় তার ভেসে যাওয়া এবং সাগরে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি পাড়ি দিয়ে বেঁচে ফেরার অভিজ্ঞতা।

গত ১৫ জানুয়ারি (শনিবার) দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের জলমগ্ন একটি অগ্নেয়গিরিতে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হলে সুনামির সৃষ্টি হয়। সুনামির প্রবল ঢেউয়ে নিকটবর্তী টোঙ্গায় অন্তত তিন জন নিহত হওয়া ছাড়াও ভেসে যায় ঘরবাড়ি।

সাক্ষাৎকারে ফোলাউ জানান, ওইদিন ছোট্ট, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ অ্যাটাটায় নিজের বাড়ি রঙ করছিলেন তিনি। তখনই সন্ধ্যা ৭ টার দিকে তার ভাই সুনামি আসছে বলে তাকে সতর্ক করে।

এরপর ৬ মিটারেরও বেশি উঁচু ঢেউয়ে ভেসে যান তিনি ও তার ভাগনি। দুইজনই তখন একে অপরকে ডাকাডাকি করছিলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আর ভাগনির ডাক শুনতে পাননি তিনি।

ফোলাউ জানান, প্রথম ধেয়ে আসা ঢেউ থেকে বাঁচতে তিনি একটি গাছে চড়েছিলেন। কিন্তু গাছ থেকে নামার পরই আরেকটি ঢেউ এসে তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এসময় তার সন্তান তাকে উপর থেকে ডাকলেও তিনি কোনও জবাব দেননি। কারণ, সে তাকে খুঁজতে সাগরে নামতে পারে সেজন্য।

এরপর কেবলই বড় বড় ঢেউয়ের মধ্যে ভাসতে থাকা। ভেসে ছিলেন সারারাত। ভোরের দিকে তিনি একটি পুলিশের নৌকার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা ফোলাউকে দেখতে পায়নি।

একটি কাঠের গুঁড়ি পাওয়ার আগ পর্যন্ত ৯ বার পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিলেন ফোলাউ। টোঙ্গার রাজধানী থেকে রয়টার্সকে তিনি বলেন, “যখন আটবার আমি পনির নিচে তলিয়ে গেলাম, তখন ভেবেছিলাম পরের বার আর উঠতে পারব না। কারণ, আমি কেবলমাত্র বাহুর ওপর ভর করে ভেসে ছিলাম।”

 “ফলে নবমবারেও আমি তলিয়ে গেলাম। তবে এবার আমি একটি কাঠের গুঁড়ি পেয়ে সেটিকে শক্ত করে ধরে ফেলি। সেটি ধরেই আমি ভেসে চলি।” এরপর ধীরে ধীরে সাত দশমিক পাঁচ কিলোমিটার সাঁতরে মূল দ্বীপ টোঙ্গাটাপুতে পৌঁছান ফোলাউ। ২৭ ঘণ্টা সাঁতরে রোববার প্রায় রাত ১০ টার দিকে তীরে পৌঁছেছিলেন তিনি।

তার এই বীরত্বের কাহিনী টোঙ্গার ফেইসবুক ও অন্যান্য স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ফেইসবুকে একটি পোস্টে একজন তাকে বাস্তব জীবনের সুপারহিরো ‘অ্যাকুয়ামান’ বলে প্রশংসা করেছেন।

SCROLL FOR NEXT