লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার সেতু ও পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণে বুধবার বিকালের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ওয়েস্টমিনস্টার সেতুতে পথচারীদের ওপর গাড়ি চালিয়ে গিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণে ছুরি নিয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হন হামলাকারী। পরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি।
আইএসের মুখপত্র ‘আমাক’-এ ওই হামলাকারীকে আইএসের ‘সৈনিক’ বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ।
ওই ব্যক্তি একাই এই হামলায় অংশ নিয়েছিলেন বলে বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে জানান প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে।
তিনি বলেন, হামলাকারী উগ্রপন্থি ইসলামী আদর্শে উদ্বুদ্ধ বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিরাপত্তা সংস্থা এমআইফাইভ কয়েক বছর আগে তার বিরুদ্ধে তদন্তও চালিয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গোয়েন্দা নজরদারিতে ছিলেন না তিনি।
পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতির পর হামলাকারীর নাম প্রকাশ করে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ।
তার নাম খালিদ মাসুদ, বয়স ৫২ বছর। তার জন্ম লন্ডনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় কেন্ট এলাকায়। তবে কিছু দিন ধরে তিনি ওয়েস্ট মিডল্যান্ডে থাকছিলেন বলে গোয়েন্দাদের ধারণা।
মাসুদ ইদানিং গোয়েন্দাদের নজরদারিতে না থাকলেও অতীতে তার অপরাধের রেকর্ড আছে বলে পুলিশ জানায়।
আইএস নিজেদের সৈনিক দাবি করলেও তাদের সঙ্গে মাসুদের সম্পৃক্ততার ধরন স্পষ্ট করেনি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সংঘটিত বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় আইএসের দায় স্বীকারের খবর দেয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ।
তবে বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব নাকচ করে আসা পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, দেশীয় জঙ্গিরাই এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর একই ধরনের এক হামলায় আইএস দায় স্বীকার করে বার্তা দিলেও ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই হামলাকারী ‘হোম গ্রোন’ সন্ত্রাসী।
আইএসের হুমকির মুখে মঙ্গলবারই মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার মুসলিম অধ্যুষিত কয়েকটি দেশ থেকে যাওয়া ফ্লাইটে ল্যাপটপ, ট্যাবের মতো বড় আকারের ইলেকট্রনিক ডিভাইস বহনে কড়াকড়ি আরোপ করে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।
ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সাধারণ স্মার্টফোনের চেয়ে বড় আকারের কোনো ডিভাইস বিমানের মূল কেবিনে যাত্রীরা কাছে রাখতে পারবেন না। সেগুলো দিতে হবে ‘চেকড ব্যাগেজে’।
ইরাক ও সিরিয়ায় কোণঠাসা হয়ে আসা আইএস জঙ্গিরা ইলেকট্রনিক ডিভাইসে লুকানো বোমা ব্যবহার করে উড়োজাহাজে বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা করছে বলে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।
লন্ডনের হামলায় হামলাকারী ও এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ চারজন নিহত হন। আহতদের মধ্যে সাতজন এখনও গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আহত আরও ২৯ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
আহতদের মধ্যে যুক্তরাজ্য ছাড়াও অন্যান্য দেশের নাগরিক রয়েছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর তথ্য মতে, আহতদের মধ্যে ১২ জন ব্রিটিশ, তিনজন ফরাসি শিশু, দুজন রুমানিয়ান, চারজন দক্ষিণ কোরীয়, দুজন গ্রিক, একজন জার্মান, একজন পোলিশ, একজন আইরিশ, একজন চীনের, একজন ইতালির এবং একজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।