বার্লিন প্রাচীরে মিখাইল গর্বাচেভের গ্রাফিতি। বার্লিন প্রাচীর হয়ে উঠেছিল স্নায়ুযুদ্ধের প্রতীক। আর ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীরের পতন যেন ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের প্রতীকী সূচনা।

|

ছবি: রিয়া নভোস্তি।

)<div class="paragraphs"><p>বার্লিন প্রাচীরে মিখাইল গর্বাচেভের গ্রাফিতি। বার্লিন প্রাচীর হয়ে উঠেছিল স্নায়ুযুদ্ধের প্রতীক। আর ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীরের পতন যেন ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনের প্রতীকী সূচনা। </p></div>
বিশ্ব

মিখাইল গর্বাচেভ: ১৯৩১-২০২২

Byনিউজ ডেস্ক

রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের দারিদ্র্যপীড়িত স্তাভরোপোল অঞ্চলে ১৯৩১ সালের ২ মার্চ মিখাইল গর্বাচেভের জন্ম, যিনি একসময় বিশ শতকের পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী রাজনীতিবিদে পরিণত হন।

বাবা-মা দুজনেই কাজ করতেন খামারে, কিশোর বয়সে গর্বাচেভ নিজেও ফসলের জমিতে কম্বাইন হার্ভেস্টার চালিয়েছেন।

মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় কমিউনিস্ট পার্টিতে সক্রিয় হন গর্বাচেভ, সেই সময়ই পরিচয় হয় রাইসার সাথে, পরে পরিণয়।

১৯৯৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। এথেন্সের এক হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ নেতা মিখাইল গর্বাচেভ।

১৯৮৭ সালের ৮ ডিসেম্বর। হোয়াইট হাউজে পরমাণু অস্ত্র সীমিতকরণ চুক্তিতে সই করছেন সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান।

জেনিভায় সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান।

১৯৯১ সালের ৩১ জুলাই। মস্কোতে এক সংবাদ সম্মেলনের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ।

২০১১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। মিখাইল গর্বাচেভের ৮০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বার্লিনের কেনেডি মিউজিয়ামে আয়োজন করা হয় আলোকচিত্র প্রদর্শনী। সেই প্রদর্শনীতে জার্মানির তখনকার চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেলের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ প্রেসিডেন্ট।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে স্তাভরোপোলে ফিরে যান গর্বাচেভ, কমিউনিস্ট পার্টিতে তার দ্রুত উত্থান হতে থাকে।

১৯৮৫ সালে সোভিয়েত নেতা কনস্তানতিন চের্নেনকোর মৃত্যুর পর গর্বাচেভ পার্টির সাধারণ সম্পাদক হন, তখন তার বয়স ৫৪ বছর। তিনিই সবচেয়ে কম বয়সে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে এসেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনীতির তখন করুণ দশা। নতুন নেতা গর্বাচেভ হাতে নিলেন দুই কর্মসূচি। তিনি বললেন, সোভিয়েত রাষ্ট্রের এখন দরকার পেরেস্ত্রোইকা-অর্থাৎ পুরো কাঠামো ঢেলে সাজানো প্রয়োজন। আর এ কাজে মূল হাতিয়ার হবে গ্লাসনস্ত- অর্থাৎ উদারীকরণ।

সোভিয়েত সমাজের মরচে দূর করতে পার্টিতে গণতান্ত্রিক চর্চাতেও পরিবর্তন আনেন গর্বাচেভ। ওই সময়ই প্রথমবারের মত কংগ্রেস অব পিপলস ডেপুটিসের অবাধ নির্বাচন হয়।

১৯৮৯ সালের ৩ এপ্রিল। হাভানায় এক অনুষ্ঠানে কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ।

১৯৮৬ সালের ২১ এপ্রিল। পূর্ব বার্লিনে কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে এরিখ হোনেকার সাধারণ সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর আলিঙ্গনে তাকে স্বাগত জানাচ্ছেন সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ।

কাজাখস্তান সফরে প্রেসিডেন্ট নূরসুলতান নজরবায়েভের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাবেক প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ।

১৯৯০ সালের ১৮ নভেম্বর। ভ্যাটিকানে এক অনুষ্ঠানে পোপ দ্বিতীয় জন পলের সঙ্গে সাবেক সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ।

১৯৯১ সালের ২৩ অগাস্ট। মিখাইল গর্বাচেভকে সরানোর চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর রাশিয়ার পার্লামেন্টে প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলেৎসিনের সঙ্গে সোভিয়েত প্রেসিডেন্টের করমর্দন।

২০০৪ সালের ২১ ডিসেম্বর। জার্মানিতে চ্যান্সেলর গেরহার্ড শ্রোয়েডারের সংবাদ সম্মেলনের পর সাবেক সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভের পাশে বসে তার কথা শুনছেন রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক প্রতিযোগিতায় প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ বাড়ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের। সেই স্নায়ুযুদ্ধেরও অবাসন চাইলেন গর্বাচেভ।

১৯৮৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি পরমাণু অস্ত্রের উৎপাদন সীমিত করার আলোচনা শুরু করেন। সেই সঙ্গে দুই পরাশক্তির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ককে স্থিতিশীলতা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

গর্বাচেভের সময়ই আফগানিস্তানে দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসে সোভিয়েত ইউনিয়ন।

বিশ্বজুড়ে স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সীমিত করতে এক চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ১৯৮৭ সালে ওয়াশিংটন ডিসি সফর করেন গর্বাচেভ। ওই চুক্তির আওতায় ১৯৯১ সালের মে মাসের মধ্যে আড়াই হাজার ক্ষেপণাস্ত্র কমিয়ে আনে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন।

গর্বাচেভের সংস্কার কর্মসূচি পশ্চিমা নেতাদের ভূয়সী প্রশংসা পায়, কিন্তু একই সময়ে তার চোখের সামনে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙন শুরু হয়। ১৯৯১ সালের বড়দিনের আগে আগে অনিবার্য সেই পরিণতি মেনে নেন ভ্লাদিমির গর্বাচেভ। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গড়ে ওঠে আলাদা ১৫টি জাতিরাষ্ট্র।

১৯৯২ সালের ১২ এপ্রিল। জাপানের শিবায় ডিজনিল্যান্ডে স্ত্রী রাইসার সঙ্গে মিখাইল গর্বাচেভ।

১৯৭৯ সালের ১২ জানুয়ারি। মিখাইল গর্বাচেভ তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির পলিট ব্যুরোতে বসার অপেক্ষায়।

১৯৮৪ সালের ডিসেম্বর। যুক্তরাজ্য সফরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে তখনকার সোভিয়েত পলিট ব্যুরোর সদস্য মিখাইল গর্বাচেভ।

১৯৯০ সালের এপ্রিলে ভেরদলোভস্কের লেনিন স্কয়ারে জনতার মাঝে প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ।

১৯৮৬ সালের ১৩ অক্টোবর। আইসল্যান্ডে এক সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পর বিমানে ওঠার সময় সাংবাদিকদের দিকে হাত নাড়ছেন সাবেক সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ ও তার স্ত্রী রাইসা।

পূর্ব-পশ্চিম সম্পর্কের উন্নয়নে ভূমিকার জন্য ১৯৯০ সালে মিখাইল গর্বাচেভকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। সোভিয়েত পতনের পরের সময়টায় রাশিয়া আর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তির পক্ষে বক্তৃতা দিয়ে গেছেন গর্বাচেভ। কিন্তু পশ্চিমাদের কাছে যতটা কদর পেয়েছেন, সমাজতন্ত্রের পতনের জন্য নিজের দেশে তাতে ততটাই নিন্দিত হতে হয়েছে।

১৯৯৯ সালে রক্তের ক্যান্সারে স্ত্রী রাইসার মৃত্যু ছিল গর্বাচেভের জন্য আরেক বড় ধাক্কা। এরপর অনেকটাই ভেঙে পড়েন সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ প্রেসিডেন্ট।

ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার নেতৃত্বে আসার পর তার দমননীতির কঠোর সমালোচনা করেন গর্বাচেভ। তবে ২০১৪ সালে পুতিনের নির্দেশে রাশিয়া যখন ক্রিমিয়া দখল করল, তখন তার পক্ষেই ছিলেন গর্বাচভ।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার মারা গেছেন মিখাইল গর্বাচেভ। এমন এক সময়ে তার মৃত্যু হল, যখন ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসন বিশ্বে আবার অস্থিরতা ফিরিয়ে এনেছে।

পশ্চিমা বিশ্লেষকদের অনেকের বিশ্বাস, সোভিয়েত যুগের সেই প্রতাপ ফেরানোর স্বপ্ন থেকেই ইউক্রেইনে পুতিনের এই অভিযান।

SCROLL FOR NEXT