কলসিন্দুর স্কুল এন্ড কলেজের মাঠ

)<div class="paragraphs"><p>কলসিন্দুর স্কুল এন্ড কলেজের মাঠ </p></div>
সমগ্র বাংলাদেশ

মেয়েদের সাফ ফুটবল জয়, আনন্দে ভাসছে কলসিন্দুর

Byইলিয়াস আহমেদ

বাংলাদেশের মেয়েরা ফুটবলে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় দেশজুড়ে চলছে উৎসবের আমেজ। তবে ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামে সেই উৎসব যেন ছাড়িয়ে গেছে অন্য সবাইকে, কারণ জয়ী দলের আটজন মেয়েই যে এ গ্রামের। তাদের পরিবারেও চলছে বাঁধ-ভাঙা উচ্ছ্বাস।

এই মেয়েদের বদৌলতেই প্রত্যন্ত অঞ্চলের কলসিন্দুর গ্রামটির নাম এখন সারা দেশের মানুষের মুখে মুখে। জেলা শহর ময়মনসিংহ থেকে ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যঘেঁষা ধোবাউড়া উপজেলার গ্রামটি উন্নয়ন ও শিক্ষাদীক্ষায় এখনও বেশ পিছিয়ে। মুসলমান, হিন্দুদের পাশাপাশি এ গ্রামে বসবাস করেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজনও।

কলসিন্দুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

মেয়েদের খেলাকে ঘিরে গত সোমবার পুরো উপজেলায় বিকাল থেকে টেলিভিশন এবং মোবাইলের দিকে নজর ছিল সব বয়সী মানুষের। বাড়ি-ঘরের পাশাপাশি হাট-বাজার ও দোকানপাটে টিভি স্ক্রিনের সামনে ছিল উপচে পড়া ভিড়। মেয়েদের জয় প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই মানুষের সবচেয়ে বড় পাওয়া বলছেন তারা।

সাফজয়ী ফুটবল দলের সদস্য সানজিদা আক্তারের বাবা লিয়াকত আলী বলেন, “খেলায় নেপালকে হারিয়ে বাংলাদেশ জেতার পর পাড়া-মহল্লার লোকজন বলাবলি করতে শুরু করেছে ‘লিয়াকতের মেয়ে সানজিদারা’ জিতেছে। বাবা হিসেবে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী হতে পারে?”

কলসিন্দুর স্কুল এন্ড কলেজের মাঠে বেড়ে উঠছে আগামীর সানজিদা, মারিয়ারা

একটা সময় মেয়ে খেলাধুলা করায় মানুষ বিরূপ মন্তব্য করলেও এখন সবার মুখে মুখে সানজিদার প্রশংসা – এমন কথা জানিয়ে গর্বিত এই বাবা আরও বলেন, “মেয়ের জন্য আজ আমাদের মুখ উজ্জ্বল হয়েছে। এলাকার অনেক নারী ফুটবলার সানিজদাকে অনুকরণ করে। সব জায়গাতেই আমাদের মূল্যায়ন বেড়েছে; যা কোনদিন চিন্তাও করিনি।”

সানজিদার মা জোসনা খানম বলেন, “এলাকার মানুষ সকাল থেকেই বাড়িতে আসছে। তারা আমাকে বলছে সানজিদাদের খেলা ভালো হয়েছে। তাই তারা জিতেছে। আমাদের কোনো সমস্যা আছে কি না তাও লোকজন জানতে চেয়েছে। ঘরে কোনো কিছু লাগবে কি না। মেয়ের জন্য আমাদের এতো নাম ডাক হইচে।

কলসিন্দুর স্কুল এন্ড কলেজের মাঠে বেড়ে উঠছে আগামীর সানজিদা, মারিয়ারা

“মেয়ের প্রতি বাবা মা হিসেবে যেটুকু দায়িত্ব নেওয়ার প্রয়োজন ছিল তা কখনও নিতে পারিনি। অভাব অনটনের সংসারে দুমুঠো ভাত অনেক সময় খাওয়াতে পারিনি। মানুষের কাছে এখন মেয়ের প্রশংসা শুনলে চোখে পানি চলে আসে।”

আরেক ফুটবলার তহুরা খাতুনের বাবা ফিরোজ মিয়া বলেন, “আমার মেয়ে জয় পেয়েছে, তাতে খুব ভালো লাগছে। সবার মুখে মুখে তাদের নাম। আমিও সবার সাথে বসে দোকানে খেলা দেখেছি। যখন খেলা শেষ হয়েছে সবাই আমাকে ঝাপটে ধরেছে। এ এক অন্যরকম অনুভূতি। মনে হচ্ছে এর চাইতে বড় পাওয়া আর কিছু নেই।”

তিনি বলেন, “মেয়েরা জিতেছে আমাদের এলাকার লোকজন একে অন্যকে মিষ্টি মুখ করাচ্ছে। গ্রামে সাংবাদিক এসেছে, খোঁজ খবর নিচ্ছে। মনে হচ্ছে আমাদের অনেক উন্নতি হয়েছে। আমার মেয়েসহ সবার মেয়েরা ভালো থাকুক, ভালো খেলুক এটাই প্রত্যাশা।”

কলসিন্দুর নারী ফুটবল টিমের ম্যানেজার ও কলসিন্দুর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যাপক মালা রানী সরকার বলেন, নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের শিরোপা জিতেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। এই দলের আটজনই কলসিন্দুর গ্রামের। সানজিদা আক্তার, মারিয়া মান্দা, শিউলি আজিম, তহুরা খাতুন, শামসুন্নহার সিনিয়র, শামসুন্নাহার জুনিয়র, সাজেদা খাতুন ও মার্জিয়া আক্তার। তাদের অর্জনে আজ জাতি গর্বিত।

তিনি আরও বলেন, “২০১১ সালে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব টুর্নামেন্টে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মাধ্যমে আলোচনায় আসে মেয়েরা।

“শুরুতে অজপাড়া গাঁ কলসিন্দুরের এই মেয়েদের ফুটবল খেলাকে অনেকে ভালো চোখে দেখেনি। পরিবার থেকে খুব একটা সহযোগিতা পায়নি মেয়েরা। প্রাইমারি স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে মাধ্যমিকে যখন মেয়েরা ভর্তি হয়, তখন ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের বাধা আসে। কিন্তু মেয়েদের প্রবল আগ্রহ আর আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজকের এ সফলতা।”

স্থানীয় বাসিন্দা হযরত আলী বলেন, “চায়ের স্টলে বসে বাংলাদেশের পুরো খেলা উপভোগ করেছি। মেয়েরা দারুণ খেলে জয় লাভ করেছে। প্রথমে সামছুন্নার জুনিয়র গোল দিলে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠি আমাদের মেয়েরাই জিতবে। ঠিক তাই হয়েছে।

“মেয়েদের জেতার কারণে অবহেলিত এলাকার নামটা আবার মানুষের মুখে চলে আসছে। যে মেয়েদের জন্য আজ আমরা গর্বিত হলাম, আসলে তাদের গ্রামের কী অবস্থা তা কেউ জানে না। মেয়েদের বদান্যতায় আমরা বিদ্যুৎ পেলেও রাস্তাঘাটে এখনও অবহেলিত।”

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামূল হক বলেন, “আমাদের মেয়েরা ভালো খেলে জিতেছে। আমরা খুব আনন্দিত। সব সময় চেষ্টা করি তাদের খোঁজ খবর রাখার জন্য। জয়ের পরেও বেশ কয়েকজনের সাথে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। ওদের জন্য কিছু করার বিষয়ে আমরাও চিন্তা-ভাবনা করছি।”

SCROLL FOR NEXT